মালেক বিন নুয়াইরা এর সাথে যুদ্ধ – বনু তামিমের গোত্রপতি ছিলেন মালেক বিন নুয়াইরা। রাসূল সা. মৃত্যুর পূর্বে তার নিকট যাকাত উসুল করার জন্য লোক পাঠান।
উক্ত লোক যাকাত সংগ্রহ করে ফিরে আসার পূর্বে মালেক বিন নুয়াইরার কাছে সংবাদ পৌছে যে, মুহাম্মাদ সা. ইন্তিকাল করেছেন।
তখন মালিক যাকাত দেয়া থেকে বেঁকে বসে। সে বললো, এই যাকাতের সম্পদ মদীনায় যাবে না। এখানকার অভাব-দুঃখীদের জন্য তা ব্যয় হবে।
সাজাহ এর আগমন
সে সময় মিথ্যা নবুয়তের দাবীদার সাজাহ সেই এলাকায় পৌছে। তার সঙ্গে শক্তিশালী বাহিনী ছিল। এদের মধ্যে বনু তাগলিবের খ্রিষ্টানরাও ছিল।
সাজাহ ছিল মহিলা নবুয়তের দাবীদার। সে মদীনা আক্রমণ করতে চাচ্ছিল। পথিমধ্যে সে বনু তামিমকে নিজের সহযোগী হিসেবে পাওয়ার জন্য মালেক বিন নুয়াইরার সাথে আলোচনা করে।
মালেক তখন সাজাহকে বলে, এই মুহুর্তে মদীনায় আক্রমণ করা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সেখানে শক্তিশালী বাহিনী আছে।
তাই এখন নিজের বাহিনীর শক্তি বাড়ানোটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সাজাহর এই পরামর্শটি পছন্দ হয়। সেই সময় ইয়ামামায় মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের উত্থান ঘটে।
সাজাহ তখন মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের নিকট রওয়ানা করে। মালেক বিন নুয়াইরা এই বাহিনীতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে।
খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. এর ঝটিকা আক্রমণ
হযরত আবু বকর রা. এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত ছিলেন।
তিনি খালিদ রা. কে মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠানোর সময় বনু তামিমের খোঁজখবর নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন।
খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. তুলাইহা আসাদীকে দমন করে আকস্মিকভাবে বনু তামিমের এলাকা বিতাহে উপস্থিত হন।
এরপর সেখান থেকে মালিক বিন নুয়াইরা ও তার চেলাচামুণ্ডাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসেন।
মালিক বিন নুওয়াইরা যাকাত অস্বীকারকারী ছিল না। কিন্তু সে খেলাফতের সাথে বিদ্রোহ করেছিল। তাই খালিদ রা. তাকে হত্যা না করে বন্দী করে রাখেন।
কিন্তু এক সৈনিক অজ্ঞাতবশত মালিক বিন নুওয়াইরাকে হত্যা করে ফেলে।
মালিক বিন নুওয়াইরার হত্যার সাথে কি খালিদ রা. এর সম্পর্ক আছে ?
প্রতিটি এলাকায় রয়েছে আলাদা আলাদা ভাষার স্বকীয়তা। এক এলাকায় যেটা এক অর্থে ব্যবহার হয়, অন্য এলাকায় সেটা সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থে ব্যবহার হয়।
মালিক বিন নুওয়াইরাকে বন্দী করার সময়টা ছিল শীতকাল। সে সময় রাতে প্রচণ্ড শীত পড়ছিল। তাই খালিদ রা. বলেছিলেন,
“বন্দীদের জন্য গরমের ব্যবস্থা করো।”
এই কথা দ্বারা আমরা এটাই বুঝবো যে, বন্দীদের জন্য গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
কিন্তু বনু কিনানার ভাষায় এই বাক্য দ্বারা বন্দীদের হত্যা করার নির্দেশ ছিল।
তাই খালিদ রা. এই কথা বলার পর বনু কিনানার সৈন্যরা বন্দীদের হত্যা করা শুরু করে।
মালিক বিন নুওয়াইরা এ সময় এক সৈন্যের হাতে নিহত হয়। খালিদ রা. এই অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
মালিক বিন নুওয়াইরার স্ত্রী উম্মে তামিমের ইদ্দতকাল শেষ হওয়ার পর খালিদ রা. তাকে বিয়ে করে নেন।
সুতরাং এই ঘটনা দ্বারা আমরা অনাকাঙ্খিত ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বুঝতে পারি।
সর্বোপরি আল্লাহ যা চান সেটাই হয়।
তথ্যসুত্র
মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খন্ড ৩। পৃষ্ঠা ৫৭-৫৮
আবু বকর সিদ্দিক। ড. আলী সাল্লাবী। পৃষ্ঠা ৩৫৬-৩৬০
আরো পড়ুন
আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ী কে ছিলেন
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমাদের লেখাগুলো সূচিপত্র অনুযায়ী দেখুন www.subject.arhasan.com এই ওয়েবসাইটে।
আমরা কোন প্রকাশনীর বই রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করি তা জানতে ভিজিট করুন www.arhasan.com/book এই ওয়েবসাইটে।
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করতে পারেন এই লিংক থেকে।
মালিক বিন নুওয়াইরা কি যাকাত অস্বীকারকারী ছিল?
না। তবে সে খেলাফতের সাথে বিদ্রোহী ছিল।
মালিক বিন নুওয়াইরাকে কে হত্যা করেছে?
জনৈক সৈন্য ভুলবশত মালিক বিন নুওয়াইরাকে হত্যা করেছে