পার্বত্য চট্টগ্রামের কৌশলগত গুরুত্ব

পার্বত্য চট্টগ্রামের কৌশলগত গুরুত্ব – বিশ্বরাজনীতির চলমান প্রেক্ষাপটে চীন তার বাণিজ্যিক ও কৌশলগত স্বার্থ রক্ষার জন্য “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)” নামের একটি মেগা প্রকল্প ২০১৩ সালে চালু করে।

এই প্রকল্পের অধীনে দুটি প্রধান রুট রয়েছে। স্থলপথে “সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট” এবং সামুদ্রিক পথে “মেরিটাইম সিল্ক রোড (MSR)”।

এই প্রকল্পকে একত্রে “ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড” নামেও ডাকা হয়। 

মেরিটাইম সিল্ক রোডটি চীন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারত মহাসাগর, আরব সাগর হয়ে ইরান, আফ্রিকা ও ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত।

অর্থাৎ এই সমুদ্রপথটি চীনের হংকং থেকে দক্ষিণ চীনসাগর হয়ে মালাক্কা প্রণালি দিয়ে বের হয়ে বঙ্গোপসাগর দিয়ে শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ অতিক্রম করবে।

এরপর আরব সাগর দিয়ে লোহিত সাগর হয়ে সুয়েজ খালের মধ্য দিয়ে ভূমধ্যসাগরে পৌঁছবে।

এরপর ইস্তাম্বুল ও এথেন্স অতিক্রম করে ইতালির টিরেনিয়ান সাগর হয়ে অ্যালবোরান সাগর দিয়ে জিব্রাল্টার প্রণালির মাধ্যমে বের হয়ে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করে লাতিন আমেরিকা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।

সহজ কথায়, চীন চাচ্ছে সমুদ্রপথকে নিজেদের জন্য নিরাপদ এবং লাভজনক করে তুলতে।

এর মাধ্যমে তারা পণ্য পরিবহণের নতুন নতুন পথ খুঁজে বের করছে এবং নিজের বাণিজ্যিক আধিপত্য বাড়াচ্ছে।

নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, আমেরিকা বরাবরই কৌশলগত দ্বীপপুঞ্জে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে।

যেমন হাওয়াই, গুয়াম, এবং তাইওয়ানের আশপাশের এলাকা।

এ ছাড়া তারা ফিলিপাইন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে।

বর্তমানে তাদের লক্ষ্য একটাই, চীনের বিস্তার ঠ্যাকানো এবং নিজের আধিপত্য ধরে রাখা।

আমেরিকার সাথে আছে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, ইজরাইলসহ ইউরোপের সামরিক শক্তিশালী দেশগুলো।

এই লেখায় যা যা থাকছে :

2

এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।

এটি বঙ্গোপসাগরের একটি ছোটো দ্বীপ হলেও, সেন্টমার্টিনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যদি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বড়ো কোনো ভূরাজনৈতিক সংঘাত ঘটে, তবে সেন্টমার্টিন হতে পারে একটি কৌশলগত ঘাঁটি বা সামরিক অবস্থানের ক্ষেত্র।

আর এই সুযোগটিই নেবে আমেরিকা। সেন্টমার্টিন থেকে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামরিক যান পরিচালনা সহজ।

কারণ, ভূমি দুটি সমান্তরালের কাছাকাছি। যদিও এখনও এই ভূমি সরাসরি সংঘাতে ব্যবহৃত হয়নি।

তবুও ভবিষ্যতে এ দ্বীপ নিয়ে আন্তর্জাতিক টানাপোড়েন তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

বাংলাদেশের ভেতরেই আরেকটি ভূরাজনৈতিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রয়েছে। সেটি হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম।

রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি নিয়ে গঠিত এ অঞ্চল ঐতিহাসিকভাবেই সাংস্কৃতিক ও জাতিগতভাবে ভিন্ন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাহাড়ি গোষ্ঠীগুলোর একটি অংশ স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না। পরে মুজিব উপজাতিদের সাথে শান্তিচুক্তি করেন।

তবে জিয়ার শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, যা পাহাড়িদের সাথে বিরোধের অন্যতম কারণ।

বর্তমানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী অনেক জায়গায় সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং ভেতরে-ভেতরে কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এখনও সক্রিয়।

তাদের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সেভেন সিস্টার অঞ্চল এবং মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের আরাকান আর্মিদের পুরোনো যোগাযোগ রয়েছে।

যদিও এখনও সরাসরি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, তবুও পরিস্থিতি অস্থিতিশীল রাখার প্রচেষ্টা স্পষ্ট। মাঝে মাঝেই বাঙালি অপহরণ, গুম এবং সহিংসতার খবর আসে।

বর্তমানে ইউনুস সরকারের আমলে আরাকান আর্মিকে করিডর দেওয়ার মাধ্যমে দেশকে ব্যাটল গ্রাউন্ডে পরিণত করার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

গত দুই মাস ধরে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে খুবই সরব দেখাচ্ছে ইউনুসকে। কারও সাথে পরামর্শ না করে, সেনাপ্রধানদের না জানিয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নেয়।

একদিকে জাতিসংঘের প্রধানকে খবর দিয়ে এনে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের নাটক দেখিয়ে দেশ বিক্রির পাঁয়তারা করছে তারা।

হাসিনা যেমন মোংলা বন্দরসহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল, তেমনি ইউনুসও কূটচাল দিয়ে পরাশক্তিকে এই ভূমিতে ডেকে আনার পাঁয়তারা করছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশ নরকের পাশে দাঁড়িয়ে বীভৎস খেলা দেখছে। অথচ এর পরিণাম যে ভয়াবহ, তার দিকে ভ্রুক্ষেপই করছে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top