দিনার ও দিরহাম হিসাব – ইসলামের শুরু থেকেই মুদ্রা হিসেবে কোনো কাগুজে মুদ্রাকে প্রাধান্য না দিয়ে দিনার ও দিরহামকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
এর মূল রহস্য কি? প্রকৃতপক্ষে দিনার ও দিরহাম কখনোই কাগুজে মুদ্রার মতো মূল্যমান এক জায়গায় আঁটকে রাখে না।
দিনার ও দিরহাম উভয়টাই স্বর্ণ ও রৌপ্য দ্বারা পরিমাপ করা হয় বিধায় স্বর্ণের সাথে সাথে এর মূল্যমান উঠানামা করতে থাকে।
দিরহামের পরিচিতি
দিরহাম হল রৌপ্যমুদ্রা। সাধারণত ৩ গ্রাম রূপা দিয়ে ১ দিরহাম তৈরি করা হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাম্রাজ্যে রূপার পরিমানে হেরফের হয়েছিল তাই আমরা একাধিক মান পাই।
উসমানি খিলাফতে ১ দিরহাম ৩.২০৭ গ্রাম রূপা দিয়ে তৈরি করা হত। দিরহামের মান নির্ধারণে ইমামদের মতভেদ রয়েছে।
হানাফিদের মত ৩.১২৫ আর অন্য ইমামদের মতে ২.৯৬, এছাড়াও অনেকের মতে ২.৯৭৫ হল সঠিক মান। যাইহোক আমরা ধরব,
১ দিরহাম = ৩ গ্রাম রূপা
সেই মোতাবেক ১ দিরহাম বাংলাদেশী টাকায় ৪৪১৳। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশে ২২ ক্যারেট ১ গ্রাম রুপার মূল্য ১৪৭৳।
(বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের ১৯ নভেম্বর ২০২৩ নোটিশ অনুযায়ী)
দিনারের পরিচিতি
দিনার হল স্বর্ণমুদ্রা। সাধারণত ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণে হয় ১ দিনার। এটা নিয়ে তেমন মতভেদ নেই যদিও কিছু আলেমের মতে ৪.২৩৫ গ্রাম স্বর্ণ হল ১ দিনার। যাইহোক আমরা ধরবো,
১ দিনার = ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ
সেই মোতাবেক ১ দিনার বাংলাদেশী টাকায় ৩৮,৭৬০৳। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশে ২২ ক্যারেট ১ গ্রাম স্বর্ণের মূল্য ৯,১২০৳।
(বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের ১৯ নভেম্বর ২০২৩ নোটিশ অনুযায়ী)
ফিকহী ক্ষেত্রে দিনার দিরহাম
প্রতিটি মাজহাবের যত উচ্চাঙ্গের মাসআলার কিতাব রয়েছে, প্রতিটাতেই অর্থব্যবস্থার ক্ষেত্রে দিনার ও দিরহাম দ্বারা হিসাব করা হয়েছে।
যদিও তারা কাগুজে টাকা দিয়ে করতো, তাহলে বড় একটি সমস্যায় পড়তে হতো আমাদেরকে।
মোহরে ফাতেমি ধরা হয় ৫০০ দিরহামকে। যা বর্তমান বাংলাদেশি টাকায় ২ লাখ ২০ হাজার ৫০০৳। সর্বনিম্ন মোহর (হানাফি মাজহাবে) ১০ দিরহাম।
কোনো কেউ যদি কোনো কিছু চুরি করে তাহলে বিধান হলো, হাত কেঁটে দেওয়া। এখন কথা হলো কতুটুকু সম্পদ চুরি করলে সে চোর বলে সাব্যস্ত হবে?
হানাফি মাহজাবের মতে, এটি হলো ১০ দিরহাম বা তার সমপরিমাণ মূল্যের সম্পদ। যা বাংলাদেশি টাকায় ৪,৪১০৳। কারণ, এটিই সর্বনিম্ন মোহর ধরা হয়।
বর্তমান বিশ্বে সোনা-রুপার প্রয়োজনীয়তা
বর্তমানে আমরা যেই কাগুজে নোট ব্যবহার করি, এটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ছাপানো মুদ্রা।
যেটি সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন চায়, নোট ছাপাতে পারে।
এর ফলে দেশের মধ্যে কখনো কখনো আমরা মুদ্রাস্ফীতি দেখতে পাই। দেশে যখন প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মুদ্রা থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই মুদ্রার মান কমে যায়।
স্বর্ণ বা রৌপ্য, এটি হলো প্রাকৃতিক সম্পদ। গত শত বছর আগেও এর প্রচলন ছিল।
১৯৭১ সালে আমেরিকার সরকার কর্তৃক স্বর্ণভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থাকে নিষিদ্ধ করে নতুন অর্থ সিস্টেম চালু করে।
যেটির নিজস্ব কোনো ভ্যালু নেই। এটি স্রেফ কিছু ক্যালকুলেশন ও নীতি-নির্ধারকের ইচ্ছার উপর প্রতিষ্ঠিত।
যখন যে যেভাবে ইচ্ছা, এটির মান কমাতে ও বাড়াতে পারে।
বর্তমান অর্থব্যবস্থায় স্বর্ণ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা হয় কম। কারণ, এটির দিকে জনগণ ধাবিত হলে সরকারের প্রচলিত অর্থব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্বর্ণকে যদিও মানুষের সামনে থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু এরপরও স্বর্ণকে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো জমা করে রাখছে।
যুক্তরাষ্ট্র ২০ হাজার টন স্বর্ণ মজুদ করেছে। কিন্তু তারাই আবার স্বর্ণকে ডলারে রুপান্তরের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
জার্মানি এবং আইএমএফ ৩ হাজার টন স্বর্ণ মজুদ করেছে।
চীন এত বেশি স্বর্ণকে জমা করছে যে, তারা কখনো তা প্রকাশ করে না। রাশিয়া প্রতি বছর ১ হাজার টনের বেশি স্বর্ণ মজুদ করছে!
স্বর্ণ যদি আসলেই মূল্যমান না হতো তাহলে কি এই পরাশক্তির দেশগুলো এভাবে স্বর্ণ জমা করতো? আফসোস আমাদের মুসলিম দেশগুলোর জন্য!
যারা ইহুদি-খৃষ্টানদের দেওয়া অর্থব্যবস্থার দিকে ধাবিত হয়ে নিজেদের প্রকৃত কারেন্সিকে ভুলে গেছে। একদিন সকলেই বাস্তবতা বুঝতে পারবে ইনশাল্লাহ।
স্বর্ণ নিয়ে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা জানতে “গোল্ড ইজ মানি” বইটা পড়তে পারেন। এছাড়াও এমন আরো অনেক বই বাজারে পাবেন।