ট্রান্সজেন্ডার বলা হয়, রুপান্তরকামীকে। অর্থাৎ মানুষের জন্মগত জেন্ডার (পুরুষ বা মহিলা) পরিচয়কে বাদ দিয়ে নিজের মতো জেন্ডার নির্ধারণ করা।

একজন ব্যক্তি জন্মগতভাবে হয় পুরুষ হবে অথবা মহিলা হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম তথা হিজড়াও দেখা যায়।

কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার আর হিজড়া কখনোই এক জিনিষ নয়। একজন পুরুষ যদি নিজেকে মহিলা দাবী করে, তাহলে সে ট্রান্সজেন্ডার (মহিলা) হিসেবে পরিচিত।

একজন মেয়ে নিজেকে পুরুষ দাবী করলে, সেও ট্রান্সজেন্ডার (পুরুষ) হিসেবে পরিচিত হবে। এমন ধারণা পশ্চিমা বিশ্বে বহু আগে থেকেই বাস্তবায়িত হওয়া শুরু হয়।

ট্রান্সজেন্ডার বা এলজিবিটি কি একই জিনিষ?

শব্দের মারপ্যাচে আমাদের ফেলে ভুল জিনিষ জানানো হচ্ছে গণমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে। Sex বা Gender শব্দ দুটি প্রায়গিক ক্ষেত্রে সমার্থক মনে হলেও এই দুটি জিনিষ সম্পূর্ণ আলাদা।

Sex বা লিঙ্গ হচ্ছে মানুষের জন্মগত যৌন পরিচয়। আর বর্তমানে Gender বা আইডেন্টিটি হচ্ছে মনের ইচ্ছানুযায়ী স্বাধীন যৌন বিষয়।

বিভিন্ন সময়ে সমকামিতাকে প্রমোট করার জন্য বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করেছে তথাকথিত সভ্য (!) ব্যক্তিরা। পূর্বে এটিকে Gay এবং Lesbian শব্দ দ্বারা বুঝানো হতো।

কিন্তু বর্তমানে সমকামিতাকে বুঝাতে তিনটি শব্দ ব্যবহার করা হয়।

১. Transgender ট্রান্সজেন্ডার (পূর্বে এটি আলাদা সম্প্রদায় ছিল)

২. LGBTQ এলজিবিটিকিউ

৩. Non-binary নন-বাইনারি (তথা প্রচলিত লিঙ্গ বহির্ভূত)

মোটাদাগে বর্তমানে ট্রান্সজেন্ডার, এলজিবিটি, নন-বাইনারি, জেন্ডার ডিসফোরিয়া, জেন্ডার কুইয়ার, সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন শব্দগুলো ব্যবহারের উদ্দেশ্য হচ্ছে,

জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়কে অস্বীকার করে নিজের ইচ্ছামতো জেন্ডার পরিচয় তথা সমকামিতাকে প্রমোট করার মডেল হিসেবে।

কিভাবে ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় প্রকাশ করা হয়?

যেহেতু ট্রান্সজেন্ডার চিন্তাধারাটি শুধুমাত্র মনের সাথে সম্পৃক্ত। তাই এতে কোনোরূপ সার্জারি, অপারেশন করা লাগে না।

শুধুমাত্র মনে মনে নিজেকে ছেলে থেকে মেয়ে বা মেয়ে থেকে ছেলে দাবী করলেই তাকে ট্রান্সজেন্ডার বলা হবে।

মেডিকেল প্রক্রিয়া ট্রান্সজেন্ডারে রূপান্তর হওয়া অনেক ব্যয়বহুল, যা ক্ষেত্রবিশেষে অসম্ভবও বটে। তবে তাদের চেনার বেশ কিছু মাধ্যম হলো:

নাম পরিবর্তন। তারা নিজেদের নাম পরিবর্তন করে বিপরীত লিঙ্গের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখে। এক্ষেত্রে আগের নামকে Dead Name বলে।

নতুন প্রোনাউন্স গ্রহণ করা। যেমন প্রচলিত He or She এর পরিবর্তে They একবচন হিসেবে ব্যবহার করা।

পোশাক পরিবর্তন। ট্রান্সজেন্ডাররা বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধান করা শুরু করে। ছেলেরা মেয়েদের পোশাক আর মেয়েরা ছেলেদের পোশাক পরিধান করে।

হেয়ারকাটিং, মেকাপ পরিবর্তন।

কণ্ঠস্বর এবং চাল-চলনে পরিবর্তন। ছেলেরা মেয়েদের ন্যায় কণ্ঠ চিকন করে কথা বলা ইত্যাদি।

সমকামিতা বা ট্রান্সজেন্ডার কি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক?

পবিত্র কুরআনে কওমে লুতের ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। হাদীসে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে। একবারও কি ভেবেছি, তাদের কি অপরাধ ছিল?

তারা সমকামিতাকে অপরাধ মনে করতো না। তাই আল্লাহ তাদেরকে যমীন উল্টিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছেন।

অতএব সমকামিতা বা জেন্ডার পরিবর্তন ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম এবং পরিত্যাজ্য।

বর্তমান সময়ে কিশোর-কিশোরীরা জেন্ডার আইডেন্টি নিয়ে শঙ্কায় ভুগে। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কোনো মেয়ে যৌন নিপীড়ন হয়ে এই কাজ করতে পারে।

কোনো ছেলে নিজেকে মেয়েদের মধ্যে নিয়ে ধর্ষণের ইচ্ছা থেকে সে নিজেকে মেয়ে বলে পরিচয় দিতে পারে। এমন অসংখ্য ঘটনা আছে।

বর্তমানে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, সামাজিক সাইটে মানুষের যৌন পরিচয় (Sex) না লিখে সেখানে Gender শব্দটি ব্যপক ব্যবহার হচ্ছে।

সম্প্রতি রবি টেলিকমের একটি সাইটে তারা ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি পর্যন্ত উল্লেখ করে মানুষকে এই নরকের দিকে আহবান করছে।

বাংলাদেশের প্রত্যেক সচেতন ব্যক্তিকে এটি নিয়ে অবশ্যই সচেতন হওয়া উচিৎ। অন্যথায় দেখা যাবে আপনার অজান্তেই আপনার ছেলে কিংবা মেয়ে এই ভয়াবহ থাবার শিকার হচ্ছে।

তথ্যসুত্র

সন্তান প্রতিপালনে এ যুগের চ্যালেঞ্জ। ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন। পৃষ্ঠা ৩৬-৩৯

Scroll to Top