জীবনের হিসাব নিকাশ – মানুষের একটা সময় কোনো অস্তিত্ব থাকে না। সে জন্ম নেয় মায়ের গর্ভ থেকে। দুনিয়ার আলো দেখতে পায়। দেখতে পায় ফোটন কণার বিচ্ছুরণ।
সে বুঝতে শিখে, পৃথিবী কোনো আরাম আয়েশের জায়গা নয়।
এখানে প্রতিটা মূহুর্ত লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। হয় নিজের সাথে, অন্যথায় নিজের নফসের সাথে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার একজন অক্ষম সাহাবাকে বলেছিলেন, যদি তুমি জিহাদের ময়দানে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে না পারো তাহলে তুমি নিজের নফসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো।
কেননা শয়তান সর্বদা মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য ওৎ পেতে থাকে। (হাদীসটা মূল ইবারত অনুয়ায়ী আমার বক্তব্য মিলতে নাও পারে, আমি মূল বক্তব্যটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।)
জীবেনের পরিবর্তন
মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা আসে বয়ঃসন্ধিকালের পরে। তখন সে দুনিয়াটাকে বুঝতে শিখে।
সে ভাবতে শিখে, আমার আশেপাশে এত লোকজন বসবাস করে। এদের সবাই কি আমার নিজের মতোই চিন্তা-ভাবনা করে? নাকি তারা কোনো ভিন্ন ধরণের মানব?
এভাবেই সে কিশোর বয়স পেরিয়ে যুবক বয়সে উপনীত হয়। সে তখন সমাজকে আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে। সে বুঝতে চায়, সমাজ তার কাছ থেকে কি চায়?
সে আত্মবিশ্বাসী হতে শিখে যে, আমি সমাজকে নতুন কিছু উপহার দিতে পারবো। এই কঠিন মূহুর্তগুলোয় তার সামনে তখন একটা জিনিষই পাথেয় হিসেবে থাকে।
তা হলো, তার পারিবারিক শিক্ষা। সে তখন তার পারিবারিক শিক্ষা-দীক্ষার উপরেই নিজের মতামতকে অন্যের সামনে পেশ করবে।
সে যদি কাউকে ভালো পরামর্শ প্রদান করার যোগ্যতা রাখে তাহলে সেটা তার পারিবারিক শিক্ষার সুফল। বিপরীত কাজ করলে সেটা তার পারিবারিক শিক্ষার কুফল।
মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে খুব কম।
কারণ, এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায় সবার মেজাজ আল্লাহ তা’আলা এক রকম করে বানান নি। তিনি প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন মেজাজ দিয়েছেন।
প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন রুচি দিয়েছেন। তাই সকলেই তার সামর্থ অনুযায়ী চলাফেরা করার চেষ্টা করে। একটা উদাহরণ দেই,
একজন ব্যক্তি তার সারদিনের কাজ কর্ম শেষে যখন ঘরে ফিরে আসে, তখন সে স্বভাবগতই বিরক্ত থাকে।
কারণ রাস্তাঘাটে চলাফেরার ক্লান্তি ও বিভিন্ন ধরণের ব্যক্তিদের সাথে তার চলাফেরা।
একেকজন ব্যক্তি তার নিকট একেক রকম চরিত্র আশা করে।
তাই সে থাকে কনফিউজট। এত ঝামেলার পরে সে যখন খানিকটা স্বস্তির খোঁজে বাসায় বা বাড়িতে আসে তখন সে স্বভাবগতই আশা করে, বাড়ির লোকেরা তাকে বিরক্ত করবে না।
স্ত্রী-সন্তানরা তার অবাধ্য হবে না। সে ভুল করলেও তার স্ত্রী বা সন্তানরা তার ভুল ধরবে না। তার সাথে উঁচু গলায় কথা বলবে না।
আর এখানেই সবচেয়ে বড় ভুলটা ঘটে। কারণ ব্যক্তি যেভাবে চায়, সেভাবে দুনিয়া চলে না।
একবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন ব্যক্তির লেখা পড়েছিলাম।
সেখানে বলা হয়েছিল,
স্ত্রীর নিকট দুই মিনিট বসুন। বুঝবেন জীবনটা কত কঠিন!
কোনো পীর সাহেব বা সাধুর নিকট দুই মিনিট বসুন। বুঝবেন জীবনটা কত সহজ!
কিংবা কোনো রাজনীতিবিদদের কাছে কিছুক্ষণ বসুন। বুঝবেন আপনার পড়ালেখা সব বেকার!
অথবা কোনো চাকুরীজীবিদের নিকট পাঁচ মিনিট বসুন। বুঝবেন আপনি তো ভালোভাবে পড়ালেখাই করেন নি।
লেখার এতুটুকু অংশই আমার মনে আছে। এখানে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায়, একেক ব্যক্তির নিকট জীবন একেকরকম।
তাই দিনশেষে বাসায় এসে শান্তি খোঁজার জন্য আগে আপনার বাসাকে শান্তির নীড় বানিয়ে নিন।
অন্যথায় হিতে বিপরীত ঘটতে পারে।
আপনি যদি একজন মুসলিম হন, তাহলে সঠিক ইসলামী শিক্ষাই আপনার পরিবারে শান্তি আনতে পারে।
আর সর্বদা দুনিয়ার পিছে দৌঁড়ানো ত্যাগ করুন।
টাকা-পয়সা আপনার যতুটুকু আছে ততুটুকুতেই সন্তুষ্টি থাকুন।
অন্যথায় আপনাকে পথভ্রষ্ট করার জন্য শয়তানের দু-মিনিটও লাগবে না।
জীবনকে সঠিকভাবে উপভোগ করুন।
ভবিষ্যত নিয়ে বৃধা চিন্তা করা বাদ দিন। আর সদকা দেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
জীবন বরকতময় হবে। আপনার আর পিছে ফিরে তাকানো লাগবে না।
তথ্যসুত্র
আমাদের জীবনের হিসাব কেমন, কবিতা
আমার জীবনের হিসাব – সেম ওয়্যার ইন ব্লগ
জীবনের হিসাব নিকাশ কবিতা, সুকুমার রায়