জিজিয়া

জিজিয়া – মুসলিমরা পুরো বিশ্বে ইসলাম ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভূখণ্ড জয় করেন। এই সময়ে উক্ত ভূখণ্ডগুলোকে তিনটি প্রস্তাব দেওয়া হয়।

  1. ইসলাম গ্রহণ করো। তাহলে তোমরা আমাদের ভাই হয়ে যাবে।
  2. জিজিয়া (কর) দিয়ে আমাদের অধীনে চলে আস। তাহলে তোমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের।
  3. যুদ্ধের ময়দানে তোমাদের ও আমাদের মাঝে ফয়সালা হবে। হয় তুমি জিতবে অথবা আমরা জিতব।

জিযিয়া সাধারণত দুই প্রকার। এক, পারস্পরিক সম্মতি ও সমঝোতার ভিত্তিতে ধার্যকৃত পরিমাণ।

দুই, কাফিরদের উপর বিজয়লাভ করার পর উক্ত ভূখণ্ডের কাফিরদের সহায়-সম্পত্তির উপর বহাল রেখে শাসক নিজেই এই করের পরিমাণ নির্ধারণ করবেন। এদেরকে আহলুয জিম্মা বলা হয়।

জিজিয়া নেওয়া হয় হয় কাফিরদের নিরাপত্তার জন্য। মুসলিমদের অধীনস্থ থেকে তারা স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারবে।

ব্যবসাক্ষেত্র, চাকুরিক্ষেত্র, মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে তারা স্বাধীনতা লাভ করবে। শুধুমাত্র তারা সামরিক কার্যক্রম, ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেকে বিরত থাকবে।

এই কর নেওয়া হবে স্বাধীন, সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের নিকট হতে। অর্থাৎ যে-ই পুরুষরা যুদ্ধ করতে সক্ষম।

নারী, শিশু, বৃদ্ধ, কর্মহীন দরিদ্র, শারীরিকভাবে অক্ষম, সাধারণ দাস-দাসী ও সন্ন্যাসীদের উপর কোনো জিযিয়া নেই।

এই জিযিয়া ওয়াজিব হয় হত্যার পরিবর্তে। তাই যাদেরকে কুফরের কারণে হত্যা করা জায়েজ নয়, তাদের উপর জিযিয়া ওয়াজিব হয় না। যেমন শিশু ও নারী।

জিযিয়া (করের) পরিমাণ ও সংখ্যা

জিজিয়ার পরিমাণ নির্ধারিত হয় উক্ত ভূখণ্ডের অভাব ও ধণাট্যতার ভিত্তিতে।

ধনী ব্যক্তিদের জন্য বছরে ৪৮ দিরহাম জিযিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিমাসে সে ৪ দিরহাম করে পরিশোধ করবে।

মধ্যবিত্ত ব্যক্তিদের জন্য বছরে ৪০ দিরহাম নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিমাসে সে ২ দিরহাম করে পরিশোধ করবে।

আর দরিদ্র শ্রমিকদের জন্য বছরে ১২ দিরহাম নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিমাসে সে ১ দিরহাম করে পরিশোধ করবে।

দিনার-দিরহামের বর্তমান বাজারমূল্যে কত টাকা? দেখুন এখানে

এটিই হানাফি মাজহাবের মত। এই পরিমাপগুলো হলো মুসলিম ভূখণ্ডে বসবাসরত আহলে জিম্মিদের জন্য।

আর ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, সর্বাবস্থায় ১ দিনার বা ১ দিনারের সমপরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে ধনী-দরিদ্র সমান।

যদি জিযিয়া নির্ধারণ করার আগেই যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়লাভ করে তাহলে কাফির সৈন্যদের স্ত্রী-সন্তানরা গনিমতের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর তাদেরকে গোলাম বানানো বৈধ।

কাদের উপর জিজিয়া নেই?

আরব ভূখণ্ডের মূর্তিপূজকদের উপর এবং সমগ্র বিশ্বের মুরতাদদের উপর জিযিয়া নির্ধারণ করা হবে না। কারণ, তাদের কুফরী গুরুতর।

তাদের সামনে পথ দুইটি। হয় ইসলাম গ্রহণ করবে অথবা তাদেরকে হত্যা করা হবে।

আর তাদের উপর বিজয়লাভ করার পর তাদের স্ত্রী-সন্তানরা মালে গনিমতের অন্তর্ভুক্ত হবে।

যদি বছর পূর্ণ হওয়ার মাথায় আহলুয জিম্মা মারা যায় অথবা যে-ই কোনো সময়ে মারা যায় তাহলে তার থেকে আর জিযিয়া নেওয়া হবে না।

কাফিররা ইসলাম গ্রহণ করলেও জিযিয়া বাতিল হয়ে যাবে। কেননা তখন আর সে জিম্মি থাকে না। সে মুসলমানদের সমপরিমাণ মর্যাদার অধিকারী হয়।

তথ্যসুত্র

আল-হিদায়া, খণ্ড ২, জিযিয়া অধ্যায়

الجزية من محاسن الإسلام

জিজিয়া কি

আহলুয যিম্মিদের মুসলিম ভূমিতে বসবাসের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিনিময়ে প্রদানকৃত কর। এটি ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে

জিজিয়া কাদের থেকে নেওয়া হবে

এই কর নেওয়া হবে স্বাধীন, সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের নিকট হতে। অর্থাৎ যে-ই পুরুষরা যুদ্ধ করতে সক্ষম।

কাদের থেকে জিজিয়া নেওয়া হয় না

নারী, শিশু, বৃদ্ধ, কর্মহীন দরিদ্র, শারীরিকভাবে অক্ষম, সাধারণ দাস-দাসী ও সন্ন্যাসীদের উপর কোনো জিযিয়া নেই।

মুরতাদদের নিকট হতে জিযিয়া নেওয়া হবে

না। তাদের জন্য শুধুমাত্র দুইটা সুযোগ আছে। হয় তারা ইসলামগ্রহণ করবে। অথবা তাদেরকে হত্যা করা হবে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top