ইসলামপন্থীদের উত্থান ও মিডিয়া ট্রায়াল

ইসলামপন্থীদের উত্থান ও মিডিয়া – স্থানীয় এবং বৈশ্বিক মিডিয়াগুলো জনমত গঠন এবং সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

কখনো কখনো বিভ্রান্তিকর শিরোনামের নিউজ প্রচার করে জনমতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার যোগ্যতাও তারা রাখে।

স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে নতুন অন্তবর্তীকালীন সরকার আসে।

এরপর থেকে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

এই সকল মিডিয়া সমূহ বারবার একটি জিনিসই সামনে আনছে। তা হলো “ইসলামী উগ্রবাদ”।

মিডিয়ার ইসলামী উগ্রবাদের আড়ালে ফুটে উঠেছে ইসলামবিদ্বেষ।

গত ১ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে নিউ ইয়র্ক টাইমস বাংলাদেশের ‘চরমপন্থা’ নিয়ে একটি নিউজ করে।

যেখানে তারা বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া কিছু কার্যকলাপকে ‘চরমপন্থা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এর মধ্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যে-ই সকল কাজের বিরোধিতা করেছে, সেটিকেও ‘চরমপন্থা’ হিসেবে দেখিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, আর্টিকেলটি লিখেছে বাংলাদেশী দুইজন ব্যক্তি। শুনেছি, এক নাকি সাবেক কওমী মাদ্রাসা পড়ুয়া!

হাসিনা সরকারের পতনের পর এই আন্তর্জাতিক মিডিয়া একটি মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়েছিল বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে।

বলেছিল, দেশের হিন্দুদের মেরে ফেলা হচ্ছে। সকলের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ জুলাইয়ের পর আগস্টে আওয়ামীলীগের দালাল ও সহযোগী মুসলিম-হিন্দু, উভয়েরই উপর আক্রমণ চালিয়েছিল বিক্ষুব্ধ জনতা।

মুসলমানদের কথা এই মিডিয়া আনে নি। কিন্তু হিন্দু দালালদের ‘সাধারণ হিন্দু’ হিসেবে প্রচার করে তারা এমন মিথ্যা নিউজ ছাপিয়েছিল।

এবার নিউ ইয়র্ক টাইমস ‘ইসলামী চরমপন্থা’ হিসেবে বিগত কয়েক মাসের বেশ কয়েকটি কার্যক্রম তুলে ধরেছে। পয়েন্ট আকারে তা তুলে ধরছি।

  • স্বৈরশাসকের পতনের পর, একটি শহরে ধর্মীয় মৌলবাদীরা ঘোষণা করে যে তরুণীরা আর ফুটবল খেলতে পারবে না।
  • আরেকটি শহরে, জনতা এক ব্যক্তিকে মুক্ত করতে পুলিশকে বাধ্য করে, যিনি প্রকাশ্যে এক নারীকে হিজাব না পরার কারণে হয়রানি করেছিলেন।
  • ঢাকায় একটি সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা সরকারকে সতর্ক করে দেয়—ইসলামকে অসম্মানকারীদের মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।
  • ইসলামপন্থি নেতারা বাংলাদেশে একটি “ইসলামী সরকার” প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছেন।

পর্যালোচনা

উপর্যুক্ত চারটি টপিককেই ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস বিশাল বড়ো করে দুই হাত রচনা লিখে। নারীরা অর্ধ উলঙ্গ হয়ে ফুটবল খেলতে পারবে না, এটি যতটা না ‘ইসলামী মৌলবাদী’রা বলে, তার চেয়েও বেশি বলে সাধারণ জনগণ।

দেশের লজ্জাশীল কোনো মানুষই এটি পছন্দ করবে না। গত জানুয়ারির শেষের দিকে নারীদের জন্য জেলাপ্রশাসক ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে, তখন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এতে বাধা দেয়।

এটিকেই “ইসলামী চরমপন্থা” হিসেবে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রচার করে। অথচ এখানে কেউ প্রশ্ন তুলল না, এই জেলা প্রশাসকের কেন এত চুলকানি যে, সে নারীদেরকে ছোটো ছোটো কাপড় পরিধান করিয়ে মাঠে নামাচ্ছে!

তার যদি বাস্তবেই ফুটবল খেলার আয়োজনের ইচ্ছা থাকত তাহলে পুরুষদের কেন আনল না? কেন তাকে নারীদেরই আনতে হবে দেশীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় জনতা কখনোই এই ধরনের অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা মেনে নেবে না।

গত মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এক ব্যক্তি একজন নারীকে পবিত্র রমাদান মাসে উচ্ছৃঙ্খল কাপড় পরিধান করায় সরাসরি রাস্তায় তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

এতে উক্ত নারী ঢাবির ছাত্রদের কাছে এবং নারী সমন্বয়কদের নিকট বিচার দেয়। ছেলেটাকে মার খাওয়ায়।

এরপর তাকে শাহবাগ থানায় আটক করে। এর বিরুদ্ধে ‘নিপীড়নের মামলা’ দেওয়া হয়। তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোর্টে চালান করার কথা শোনা যায়।

এই সময় বেশ কিছু ইসলামপ্রিয় ভাই শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেয়। পুলিশের সাথে কথা বলে এবং উক্ত ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নেয়।

হ্যাঁ আমরা মানছি, এখানে উক্ত ব্যক্তির ভুল আছে। সে স্থান-কাল-পাত্র না বুঝেই দাওয়াহ দিতে গিয়েছে। এটি উচিত হয়নি। এখানে দোষী কে? উক্ত ব্যক্তি নাকি এই সমাজব্যবস্থা?

এই দেশে ধর্ষণ, ডাকাতি, চুরি, চাঁদাবাজি, খুন-গুমের বিচারও এত তাড়াতাড়ি হয়নি, এই নারী হেনস্তার বিচারটি যত তাড়াতাড়ি হয়েছে! উক্ত নারীকে কেন প্রশ্নের সম্মুখীন করা হলো না! সে কেন পবিত্র রমাদান মাসে অশালীন পোশাক পরিধান করে রাস্তায় বের হয়েছে? এই বিষয় কি কেউ প্রশ্ন করেছে? ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিলে কি চরমপন্থা হয় না? নাকি চরমপন্থা শুধুমাত্র এলিটদের ইচ্ছার বিরুদ্ধের জন্যই খাছ?

2

এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাখাল রাহা সহ আরও বেশ কিছু নাস্তিক ইসলাম ও নবীজি ﷺ কে কটূক্তি করে।

একজন মুসলমানরা যতদিন বেঁচে আছে, ততদিন কোনো কাফির-মুরতাদ এই কাজ করে পার পারে, এমনটা কখনোই হওয়ার কথা নয়।

যে-ই ব্যক্তি আল্লাহর নবীকে গালি দেয়, তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এই কাহিনির পর ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে।

অনলাইনে ব্যাপক তোলপাড় হয়। মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত হানা এই ব্যক্তির কাজকে কোনো দোষণীয় হিসেবে খুঁজে পেল না।

অথচ এই ব্যক্তির এমন ন্যক্কারজনক কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো ব্যক্তিদেরকে ‘চরমপন্থি’ হিসেবে উল্লেখ করছে মিডিয়া।

এই মিডিয়া চায়, ইসলাম চিরতরে পৃথিবী থেকে চলে যাক। তাহলেই তারা শাস্তিতে থাকবে। কিন্তু এটি কখনোই হবে না।

বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম এবং ইসলামী স্কলাররা সর্বদাই ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ কায়েমের কথা বলেন। যে-ই ব্যক্তি শরীয়াহ শাসন চায় না, সে মুসলিম হতে পারে না।

একজন কাফিরই চায়, দেশে ইসলাম কায়েম না হোক। সে তখন বিভিন্ন তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে দেশ শাসন করতে চায়।

কিন্তু একজন মুসলিমের প্রথম রাষ্ট্রীয় পরিচয় হলো, সে শরীয়াহ শাসন চাইবে। ইসলামী শাসন চাইবে। হ্যাঁ, পদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে। সেটি অন্য আলাপ।

কিন্তু সে এই মূলকথাটি চাইবে। নিউজ মিডিয়া, প্রোপাগান্ডা মিডিয়া, ইসলামবিদ্বেষীদের নিকট এগুলোই উগ্রতা, ধর্মান্ধতা। আমরা ধর্মান্ধই হব।

ইসলামকে মান্য করতে হবে পরিপূর্ণভাবে। এখানে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। ওরা চরমপন্থা, তাওহিদী জনতা, উগ্র এবং আরও বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে ইসলামকে দমাতে চাইবে। কিন্তু তারা যতই চেষ্টা করুক, আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top