গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়

গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় – সেদিনও সিগারেট ধরিয়ে গ্রামে নদীর কোণে বসে আনমনে ভাবছি। আর মাত্র কিছুদিন পরেই তাহলে বিয়েটা হয়ে যাচ্ছে। ভাবতেই কেমন যেন একটা খুশি খুশি ভাব চলে আসলো।

মাথায় তেমন কোনো আইডিয়া নেই। তাই কিভাবে কি করবো, তাও জানি না।

কবে এবং কোথা থেকে আমার জীবনে নতুন স্বপ্ন বোনা শুরু করেছিলাম, তা ঠিক ঠাওর করতে পারছি না।

গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়

হঠাৎ একদিন

বরাবরের মতো সেদিন ও আমাদের ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা ছিল। আমাদের সপ্তাহে ৭ দিনের মধ্যে ৪ দিনই ক্লাস টেস্ট থাকে।

দিন বাদে কয়েকমাস পর এসএসসি পরীক্ষা। আমি সেদিন বসেছিলাম মাইশার পাশে। মাইশার সাথে আগে কখনো কথা হয় নি।

কোথায় থাকে, কি করে, তাও জানি না। নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে কখনো কথাও বলি নি। কিন্তু সেদিন আগ বাড়িয়ে কথা বলতে শুরু করলাম।

সাধারণত মেয়েরা এমনিতেই মেধাবী হয়। যদিও সৃষ্টিকর্তা সবার মেধা একই রকম দিয়ে থাকে। যে চেষ্টা করে, সে ফল পায়।

আমি সিগারেট খাওয়া শুরু করেছিলাম ক্লাস এইট থেকে। কামাল সর্বপ্রথম আমাকে একটা সিগারেট দিয়েছিল খেতে।

এরপর থেকে কখনো বাদ দেই নি।

মাইশার সাথে কথা বলতে চাইলে সে আগ্রহ প্রকাশ করলো না। কারণ, আমার মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ আসছিল।

শেষে ব্যাগ থেকে বোতল বের করে ভালোভাবে কুলি করলাম।

মাইশা বুঝতে পারলো, আজ অন্তত আমি তার কাছে ঠেকা। তাই বললো, এভাবে নয়। বালু মুখে নিয়ে কুলি করো।

আমিও সাত-পাঁচ না ভেবে স্কুল মাঠের কোণে স্তুপ করে রাখা এক মুষ্টি বালু মুখে নিয়ে নিলাম।

এ দেখে মাইশা হাসাহাসি শুরু করে দিল।

সপ্তাহখানেক পর

মাইশার সাথে বসে সেদিন ম্যাথ ক্লাস টেস্টে আমি ২০ এর মধ্যে ১৮  পেয়েছিলাম। কখনো ভাবি নি, এতটা নম্বর পাবো। অবশ্য সবগুলো অংক মাইশা দেখিয়েছে।

কিছুদিন পর থেকেই মাইশার প্রতি আস্তে আস্তে দুর্বল হতে লাগলাম। তার চলাফেরা, তার হাঁটা, তার খাওয়া, তার যে কোনো কিছুই আমার কাছে ভালো লাগতে লাগলো।

কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলাম। যেখানে সে মানে আমি। আমি মানে সে। তখনো তার সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সম্পর্ক হয় নি।

তবে তার সাথে অতিরিক্ত কথা বলায় সে খানিকটা বুঝতে পারছিল। একদিন সে আমাকে তার বাড়ির পাশের আমবাগানে ডাকলো।

বাগানের চারিপাশে সারি সারি গাছ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। পাখির কিঁচির মিচির আওয়াজ পরিবেশকে আরো রোমাঞ্চকর করে তুললো।

আমি আগে থেকেই তাকে ফুল দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। তাই সকাল সকাল সদরে গিয়ে ২০০ টাকা দিয়ে টাটকা গোলাপ কিনে এসেছি। সাথে একটা সোনালী কালার চেইন।

প্রায় আধ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর সে একটা চাদর গায়ে জঁড়িয়ে আসলো। তার আসার ভঙ্গিমা দেখে মনে হলো, কোনো রাজকন্যা এগিয়ে আসছে।

সে ওড়না পরিহিত ছিল। আমি তখন তাকে সারপ্রাইজ দিতে প্রস্তুত হলাম। তখনই সে বললো, রাজু তোমাকে কেন ডেকেছি, জান?

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, নাহ্। তবে খানিকটা অনুমান করেছি।

মাইশা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো, তোমার বয়সের প্রতিটা ছেলেই একই অনুমান করে।

আমি তো আনন্দে নেচে উঠলাম। মাইশা তাহলে রাজী। যাক্ বাবা। আমি তো ভয়ে ছিলাম। তখনই মাইশা এমন কিছু কথা বললো যা শোনার জন্য আমি কখনো প্রস্তুত ছিলাম না।

মাইশা বললো,

ছোটবেলায় যখন আমার দাদা আমাকে বলতো, পর্দা করা নারীদের জন্য ফরজ তখন বুঝি নি যে, কেন তিনি এই কথা বলেন।

এই তো কিছুদিন আগেও আমি দিপা আপুর বিয়েতে যেভাবে নেচেছি, তাতে উপস্থিত দর্শকরা যে কতুটুকু পরিতৃপ্ত ছিল, তা তাদের চাহনি দেখেই বুঝতে পেরেছি।

গত পরশু যখন সাদিয়া মাতবরের ছেলের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হলো তখন বুঝতে পারলাম, কেন দাদা আমাকে পর্দা করতে বলতো।

আমরা তো মেয়ে। আমাদেরকে সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন কমণীয়ভাবে। যে কোনো পুরুষ আমাদের দেখে দোল খাবেই।

তাই বলে কি আমাদের উপস্থিত ব্যক্তিদের অন্তর চুরি করে নিজের সতীত্ব শেষ করে দিতে হবে?

আমি জানি, তুমি আমাকে ভালোবাসো। এটা আমি জানি, তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও। কিন্তু রাজু আমি ফিরে যেতে চাই।

এরপর

আমি বললাম, কোথায় ফিরে যেতে চাও?

মাইশা বললো, আল্লাহর আদেশের নিকট। নবীজির সুন্নাহর নিকট।

স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি। অজান্তেই হাত থেকে গোলাপটা খসে পড়লো। পুরো শরীর নিস্তেজ হয়ে আসতে লাগলো। আগ্রহ-উদ্দীপনা মিইয়ে যেতে লাগলো।

মাইশা গোলাপ ফুলটি নিয়ে মাটিতে পুঁতে দিতে দিতে বললো,

হারাম জিনিষ সাময়িকভাবে আনন্দিত করলেও কখনো তা আজীবনের জন্য কল্যান বয়ে আনতে পারে না। আমাকে ক্ষমা করো।

ডিপ্রেশন

জীবনের প্রথম কোনো মেয়েকে ভালোবেসে শুরুতেই এমন ঘটনা ঘটবে, তা কে জানতো। এরপর থেকে সিগারেট খাওয়া বাড়িয়ে দিলাম।

মাইশা এরপর দিন থেকে আর কখনো স্কুলে আসে নি। সে এক মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। আমিও পড়ালেখা ছেড়ে দিলাম।

বাবা-মা তো আর এমন অকর্মা হয়ে বসে থাকতে দিবে না। তাই তারা জোর করে তাবলীগে পাঠিয়ে দিল।

আল্লাহর রহমতে তাবলীগে ৮০ দিন পার করে আমি আজ বুঝেছি, দ্বীন কি।

নতুন জীবনের খোঁজে

হালাল-হারামের অদ্ভুত মিশ্রনের দুনিয়াতে হারাম সর্বদা কাছে টানলেও হালালকে গ্রহণ করতে হয়। এই ঘটনার প্রায় ৪ বছর পর আমি বিয়ের মাধ্যমে আমার অর্ধেক দ্বীনকে পাই।

৫ বছর পর এই ঘটনা লিখতে গিয়ে বারবার স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। থমকে গিয়েছি কয়েকবার। আল্লাহ চাইলে কি না হয়।

মাইশা চায়ের কাপ হাতে করে এনে আমার টেবিলে রেখে বললো, সারাদিন এত বই পড়লে এবং লেখালেখি করলে মাথা ঠিক থাকে? চলো কোথাও ঘুরতে যাই!!

মনে রাখবেন

গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় হলো, যখনই কোনো গুনাহ অন্তরে দেখা দিবে সাথে সাথে ফিরে আসুন। মন থেকে তাওবা করে নিন। দেখবেন জীবন আলোকিত হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

আরেকটি গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় হলো, হারাম সম্পর্ক থেকে বিরত থাকুন। যদি আপনার জন্য সে লিখিত থাকে তাহলে আল্লাহ ব্যবস্থা করে দিবেন। অন্যথায় সারা জীবন ঘুরেও কোনো লাভ নেই।

পড়ুন

আবু বকর রা.

খালিদ বিন ওয়ালিদ রা.

শিয়া আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ

আরো পড়ুন

গুনাহ মাফের দোয়া কি, জানুন

কবিরা গুনাহের তালিকা

গুনাহ কত প্রকার

গুনাহ থেকে ফিরে আসুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top