সেনাপতি রুস্তম এর নিকট মুসলিম দূত

সেনাপতি রুস্তম এর নিকট মুসলিম দূত – কাদেসিয়ায় অবস্থিত মুসলমান সেনাদের নিকট ওমর রাঃ এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা আসছিল। তিনি একটি চিঠিতে মুসলমানদেরকে শত্রুদের সংখ্যা দেখে ভীত হতে নিষেধ করেন।

হযরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস রাঃ এক মাস কাদেসিয়ার ময়দানে সৈন্যদের নিয়ে অবস্থান করেন। এর মধ্যে পারস্যের বাদশাহ ইয়াজদাগিরদ সেনাপতি রুস্তমের নেতৃত্বে ১ লক্ষ ২০ হাজার সেনা প্রেরণ করে।

রুস্তম এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে এতটা আশাবাদী ছিল না। তারপরও সে সেনাবাহিনীদের নিয়ে অগ্রসর হয়। সে জায়গায় জায়গায় অবস্থান করে সময় অতিবাহিত করছিল।

রুস্তমের বাহিনী

রুস্তমের বাহিনীর প্রথম কাতারে ৪০ হাজার যোদ্ধা ছিল। ডান বাহুতে ৩০ হাজার সৈন্য ছিল। এর নেতৃত্ব ছিল হুরমুজানের হাতে। সে ছিল ধূর্ত অফিসার।

বাম বাহুতে ছিল ৩০ হাজার সৈন্য। তাদের অফিসারের নাম ছিল মেহরান। মুসলমানদের সাথে লড়াইয়ের ব্যাপারে তার যথেষ্ঠ অভিজ্ঞ ছিল।

এ ছাড়াও পারসিকদের নিকট ছিল ৩৩ টি জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাতি। এত বড় বাহিনী থাকতেও রুস্তম যুদ্ধ এড়ানোর চেষ্টা করছিল।

সে মুসলমানদের নিকট দূত পাঠিয়ে বলে, একজন প্রতিনিধি পাঠানো হোক। যার সাথে আলোচনা করা যাবে।

মুসলমানদের দূত রুস্তমের নিকট

হযরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস রাঃ দূত হিসেবে মুগিরা বিন শুবা রাঃ কে দূত হিসেবে পাঠান। মুগিরা রাঃ এলে রুস্তম বলে,

তোমরা তো আমাদের প্রতিবেশি। আমরা সর্বদা তোমাদের সাথে ভালো আচরণ করেছি। তোমাদের ব্যবসায় আমরা কোনো বাঁধা প্রদান করি না।

তাই তোমরা এখান থেকে ফিরে যাও। মুগিরা রাঃ তখন বললেন, আমাদের উদ্দেশ্য দুনিয়ার কোনো সম্পদ নয়। আমরা তো পরকালের প্রত্যাশী।

আমরা আমাদের ধর্ম প্রচারের জন্য অন্য দেশের নিকট গমন করি। রুস্তম তখন আগ্রহভরে ইসলামের পরিচয় জানতে চায়।

তখন মুগিরা রাঃ সংক্ষেপে তাকে ইসলামের শিক্ষা ও বিভিন্ন দিকগুলো উল্লেখ করেন। রুস্তম তখন বলছিল, এটা তো অতি উত্তম জিনিষ।

পরিশেষে সে জিজ্ঞাসা করে, যদি আমরা এই ধর্ম কবুল করে নেই, তাহলে কি হবে?

মুগিরা রাঃ উত্তরে বলেন, তাহলে আমরা তোমাদের রাজ্যের ধারেকাছেও আসবো না। এ কথা শুনে রুস্তম আনন্দপ্রকাশ করে।

সে তখন মুগিরা রাঃ কে বিদায় দিয়ে পারসিক সরদারদের ইসলাম ধর্ম করুল করে নিজেদের সাম্রাজ্য রক্ষার জন্য বলে।

কিন্তু সকলেই এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। রুস্তম তখন যুদ্ধের জন্য টালবাহানা করতে থাকে। এরপর সে পূনরায় সাদ রাঃ কে প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য বলে।

পরবর্তী দূত প্রেরণ – সেনাপতি রুস্তম এর নিকট

এরপর সাদ রাঃ হযরত রিবয়ি বিন আমের রাঃ কে পাঠান। রুস্তম এবার অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ দরবার প্রস্তুত করে মুসলমানদেরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।

কিন্তু এসব জাঁকজমক রিবয়ি বিন আমের রাঃ কে প্রভাবিত করতে পারে নি। বরং তিনি নিজের অমুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করার জন্য ঘোড়া দ্বারা গালিচা মাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন।

এরপর ঘোড়াকে মূল্যবান আসনের সাথে বাঁধেন।

রোমান পাহারাদাররা তার অস্ত্র খুলে রাখতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তোমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এখানে এসেছি। তাই আমি যেভাবে এসেছি, সেভাবে ভেতরে যেতে দাও।

অন্যথায় আমি চলে যাচ্ছি। পাহারাদাররা তখন আর তাকে আটঁকাতে পারে নি।

তিনি নিজের বর্শা দ্বারা গালিচা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন।

ফলে রুস্তমের গালিচা এক সাইড থেকে অন্য সাইড পর্যন্ত পুরোটা বিদীর্ণ হয়ে যায়।

এই কর্মকান্ডের কারণে রুস্তম ভীত হয়ে যায়। সে জিজ্ঞাসা করে, বলো তোমরা কেন এসেছ?

হযরত রিবয়ি বিন আমের রাঃ অত্যন্ত চমৎকার ভাষায় মুসলমানদের আগমণের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আল্লাহ আমাদেরকে পাঠিয়েছেন,

যাতে তিনি যাকে চান তাকে মানুষের গোলামি থেকে আমরা আল্লাহর গোলামির দিকে নিয়ে যেতে পারি।

রুস্তম এই কথা শুনে চিন্তাভাবনা করার সময় চায়।

আবার মুগিরা রাঃ কে প্রেরণ

পরবর্তীতে আাবার মুগিরা রাঃ কে দূত হিসেবে প্রেরণ করা হয়। তিনি গিয়ে সোজা রুস্তমের পাশে থাকা সিংহাসনে বসে পড়েন।

দরবারের লোকেরা চিৎকার শুরু করলে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে কেবল আমার সম্মান উঁচু হয়েছে।

তোমাদের মুনিবের সম্মানের কোনো ঘাটতি হয় নি।

রুস্তম তখন বুঝতে পারে, যুদ্ধ অনিবার্য। তাই সে শেষ পর্যন্ত  যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।

সে মুগিরা রাঃ কে বলে, আগামীকাল তোমাদেরকে আমাদের বীরত্ব দেখাবো।

তথ্যসুত্র

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খন্ড ৩। পৃষ্ঠা ১৫৪-১৫৮

ফিহিলের যুদ্ধ কিভাবে সংগঠিত হয়, পড়ুন

ইয়ারমুকের যুদ্ধ কিভাবে সংগঠিত হয়, পড়ুন

পড়ুন, ইয়ারমুকের দ্বিতীয় যুদ্ধ কিভাবে সংগঠিত হয়

হিজাব কি নারীকে নিরাপত্তা দেয়, পড়ুন

ইবরাহিম আ. ইসমাইলকে কুরবানী করেছেন নাকি ইসহাককে? পড়ুন

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top