হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমেদ ইয়াসিন রহ. ছিলেন একজন বীর মুজাহিদ এবং স্বাধীনকামী ফিলিস্তিনিদের স্বপ্নের ব্যক্তিত্ব।

তিনি মানুষকে জিহাদের দিকে উদ্ভুদ্ধ করতেন। প্রাথমিক জীবনে ওয়ায়েজ হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মানুষকে ওয়াজ-নসীহত করতেন।

যুবকদেরকে সৎপথে আহবান করতেন। সাধারণ মানুষের শিক্ষা-দীক্ষার দিকে ব্যাপক গুরুত্ব প্রদান করতেন। তিনি গাযা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

এই মহান মুজাহিদ ফিলিস্তিন জিহাদের একটি রূপরেখা তুলে ধরে বলেছিলেন,

ইনশাল্লাহ অচিরেই ইসরাইল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ, তারা কখনোই স্থায়ীভাবে বেশিদিন কোথাও রাজত্ব করতে পারে নি।

আহমাদ ইয়াসিন রহ. এর জন্ম ও শৈশব

শায়েখ আহমেদ ইয়াসিন ১৯৩৬ সালের জানুয়ারী মাসে ফিলিস্তিনের আশকালান শহর থেকে খানিকটা দূরে আল মাজদাল গ্রামের নিকট আল জুরাহ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

শায়েখের পিতার নাম আব্দুল্লাহ ইয়াসিন এবং মায়ের নাম সাআ’দা আল হা’বেল। আহমাদ ইয়াসিনের মাত্র ৫ বছর বয়সেই তার পিতা ইন্তিকাল করেন।

শৈশবে মানুষ তাকে আহমেদ সাআ’দা নামে চিনতো।

আহমাদ ইয়াসিনের জন্মের মাত্র এক বছর পূর্বেই ফিলিস্তিনে সর্বাত্মক জিহাদের ডাক দিয়েছিলেন শায়েখ ইজ্জউদ্দিন আল কাসসাম রহ.।

শায়েখ আহমেদ ইয়াসিন এর পড়াশোনা

শিশু বিভাগ থেকে নিয়ে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত আহমাদ ইয়াসিন আশকালানের স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান “আল জুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে” পড়াশোনা করেন।

এরপর ১৯৪৮ সালে আশাকালানসহ তাদের গ্রাম ইসরাইলের দখলে চলে গেলে তারা হিজরত করে গাজা উপত্যকায় চলে যেতে বাধ্য হন।

ইতিহাসে এই সময়টা ‘নাকাবা’ নামে প্রসিদ্ধ। ইসরাইল রাষ্ট্রটি ব্রিটিশ কুফরি শক্তির প্রত্যক্ষ সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হলে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী হিসেবে আশপাশের দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়।

অধিকৃত গাজা উপত্যকার “আশ-শাতিঈ” শরণার্থী ক্যাম্পে থাকার সময়ে প্রচন্ড শারিরিক ও মানসিক কষ্ট আস্তে আস্তে ইসরাইল ও জায়োনিস্টদের প্রতি বালক মনে ক্ষোভের সঞ্চার করে।

সেই সময়ে শরণার্থী শিবিরের প্রতিটি পরিবার প্রচণ্ড দারিদ্র ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছিল।

তাদেরকে তখন সমুদ্র থেকে মাছ ধরে উপার্জন করতে হতো।

ইয়াসিন এবং তার বন্ধুরা তাদের পরিবার এবং আত্মীয়দের জন্য খাবার চাইতে মিশরীয় সেনা ক্যাম্পের নিকট যেতেন।

তিনি এক বছরের জন্য (১৯৪৯-৫০) তার পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন এবং গাজার একটি রেস্তোরাঁয় তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সমর্থন করার জন্য কাজ করেন।

শায়েখে ইয়াসিন সেই যুগের কথা বর্ণনা বলেছেন, “যে আরব সৈন্যবাহিনী ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ করতে এসেছিল তারা আমাদের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়েছিল এই অজুহাতে যে সেনাবাহিনীর শক্তি ছাড়া অন্য কোনও শক্তি থাকা উচিত নয়। তাই আমাদের ভাগ্য তাদের সাথে যুক্ত ছিল, এবং যখন তারা পরাজিত হয়েছিল, তখন আমরা পরাজিত হয়েছিলাম এবং ইহুদিবাদী দলগুলো নিরপরাধকে ভয় দেখানোর জন্য গণহত্যা  করতে শুরু করেছিল। যদি সেই সময়ে আরবরা আমাদেরকে অস্ত্র দিত তাহলে আজ ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হতো।

দুর্ঘটনায় অটল-অবিচল শায়খ আহমেদ ইয়াসিন

১৯৫২ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে শায়েখ আহমেদ ইয়াসিন বন্ধুদের সাথে খেলাধূলার সময় তার ঘাড়ের কিছু কশেরুকা ভেঙ্গে যায়।

পরে প্রায় ৪৫ দিন ঘাড়ে প্লাস্টার করে রাখার পরও কোনো লাভ হয় নি। তিনি আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান। কিন্তু এটা তার পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায় নি।

আহমাদ ইয়াসিন ইমাম শাফী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আল কামেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে পড়াশোনা শেষ করেন।

১১ মার্চ ১৯৫৭ তারিখে, তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর প্রস্থানের পরে গাজায় সংঘটিত গণ-বিক্ষোভগুলিতে অংশ নেন এবং গাজার উপর আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধান প্রত্যাখ্যান এবং মিশরীয়দের পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানান।

আহমেদ ইয়াসিন পড়াশোনা শেষ করার পর তার স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণে প্রথমে তাকে আপত্তি জানানো সত্ত্বেও শিক্ষকতার সুযোগ পেতে সফল হন।

১৯৫৮ সালের অক্টোবরের শুরুতে, তিনি ইউএনআরডব্লিউএ স্কুলে আরবি এবং ইসলামিক শিক্ষা শেখানোর চাকরি পান।

তার শিক্ষকতার বেতনের বেশির ভাগই চলে গেছে তার পরিবারকে সাহায্য করতে। তিনি গাজার মসজিদে খতীব ও শিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছেন।

১৯৬৪ সালে তিনি গাজায় শিক্ষকতা করার সময় ইংরেজি অধ্যয়নের জন্য কায়রোর আইন শামস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

১৯৬৫ সালে ইখওয়ানুল মুসলিমীন সমর্থকদের গ্রেপ্তারের কারণে তাকে মিসরে ফিরে পরীক্ষা দিতে বাধা দেওয়া হয়।

এ বছরের শেষের দিকে গাজার মিশরীয় কর্তৃপক্ষ তাকে এক মাসের জন্য কেন্দ্রীয় গাজা কারাগারে আটক করে এবং তাকে ইখওয়ানের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করে।

সাংগঠনিকভাবে তাকে ওই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তারা তাকে ছেড়ে দেয়।

রাজনীতি ও জিহাদের ময়দানে শায়খ আহমেদ ইয়াসিন

১৯৬৭ সালে আরব-ইজরাইল যুদ্ধের সময় গাজাসহ পুরো ফিলিস্তিন দখল করে ফেলে ইজরাইল।

পঙ্গু আহমেদ ইয়াসিন তখন আল আকসার পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন স্থানে ভাষণ দিতেন। দলে দলে যুবকেরা যোগ দিতে থাকল তার এসব সমাবেশে।

১৯৭৮ সালে ৪৯ বছর বয়সে শায়েখ আহমেদ ইয়াসিন ফিলিস্তিনিদের সাহায্যের জন্য আল মুজাম্মা আল ইসলামী নামে একটি ইসলামি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

এই সংগঠন ব্যাপকভাবে জনসেবা এবং সামাজিক করতো। যেমন ফ্রি চিকিৎসা দান, ফ্রি স্কুলে শিক্ষাদান, মসজিদ এবং লাইব্রেরী নির্মাণ।

ইজরাইলের তখনকার নেতারা আহমেদ ইয়াসিনকে সেভাবে বাঁধা দেয়নি। ধীরে ধীরে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাড়ায় আহমাদ ইয়াসিনের কর্মকাণ্ড।

১৯৮০ সালে এই সংগঠন পরিবর্তিত হয়ে আল মুজাহিদ আল ফিলিস্তিনিয়্যিন সংগঠন গঠিত হয়।

‘মাজদ’ এই সাংকেতিক নামে ইসরাইলীদের উপর হামলা চালাতে থাকে তার গেরিলা মুজাহিদরা।

১৯৮৪ সালের এপ্রিলে, জায়োনিস্ট ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ শায়েখ ইয়াসিনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়।

তখন তাকে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী গঠন এবং অস্ত্র রাখার অভিযোগে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

তবে ১৯৮৫ সালের মে মাসে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এবং পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন-জেনারেল কমান্ডের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তিতে তিনি মুক্তি পান।

সশস্ত্র সংগঠন হামাসের প্রতিষ্ঠা

ফিলিস্তিন ভূখন্ডে পূর্ব থেকেই মিসরের ইখওয়ানুল মুসলিমীনের প্রভাব ছিল। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরই আরব-ইসরাইল যুদ্ধ সংগঠিত হয়।

এই যুদ্ধে ইখওয়ান বীরত্ব প্রদর্শন করে। কিন্তু মিসরের গাদ্দারির কারণে যুদ্ধে আরবরা হেরে যায়।

আস্তে আস্তে মিসর ও ইখওয়ানের প্রতি ফিলিস্তিনিদের বিরূপ মনোভাব চলে আসে।

শায়েখ আহমাদ ইয়াসিন ইখওয়ানের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতেন ফিলিস্তিনে। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর তাকে নতুনভাবে ভাবতে হয়।

তিনি তার ছাত্রদের ইখওয়ানের প্রতি আস্থা রাখতে বললেন। এছাড়াও প্রতিরোধ আন্দোলন চলমান রাখার জন্য তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেন।

ইবরাহীম আল মাকদামাহ, ইসমাইল আবু শানাব, আব্দুল আজিজ আওদাহ, ফাতহি আশ-শাকাকি, ইব্রাহিম আল ইয়াজুরি, মুসা আবু মারজুক ছিলেন শায়েখের তখনকার ছাত্র ও অনুগামী।

১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা সংগঠিত হলে ফিলিস্তিনিরা তাদের সর্বাত্মক সাথে থাকা শক্তি দিয়ে দখলদার ইসরাইলের উপর হামলে পড়ে।

এই সময়েই শায়েখ আহমাদ ইসাসিনের নেতৃত্বে তার ছাত্র ও ফিলিস্তিনের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় হামাসের প্রতিষ্ঠা হয়।

হামাস হলো সংক্ষিপ্ত রূপ। পূর্ণ রূপ হলো, হারাকাতুল মুকাওয়ামাতিল ইসলামিয়্যা ফী ফিলাস্তীন (ফিলিস্তিনে ইসলামী স্বাধীনতার লড়াই)।

প্রথম ইন্তিফাদা কিভাবে হয়

১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ই ডিসেম্বর ইসরায়েলে কাজ শেষে প্রত্যাবর্তনকারী একটি গাড়িকে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের কাছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ট্যাংক চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন শ্রমিক মারা যান।

নিহত শ্রমিকদের জানাযা শীঘ্রই একটি ব্যাপক বিক্ষোভে রূপ নেয়।

পরের দিন ইসরায়েলি গাড়িতে ফিলিস্তিনিরা হামলা করলে পাল্টা হামলায় আরো এক ফিলিস্তিনি যুবক নিহত হয় এবং ১৬ জন আহত হয়।

এই বিক্ষোভ দ্রুত পশ্চিম-তীর ও পূর্ব-জেরুজালেমেও ছড়িয়ে পড়ে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ব্যাপকভাবে ঘরবাড়ি ধ্বংস ও নিপীড়নের পথে অগ্রসর হয় এবং ৮০,০০০ সৈন্য মোতায়েন করে।

ফিলিস্তিনি জনগণ ইহুদি বসতিতে পাথর নিক্ষেপ, ইসরায়েলি পণ্য বর্জন, ট্যাক্স দিতে অস্বীকার, ব্যারিকেড সৃষ্টি, টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তাঘাটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

এই বিক্ষোভে নারী-শিশুসহ হাজারো বেসামরিক জনগণ শামিল হয়।

ইসরায়েল এসব ঘটনাকে দাঙ্গা হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, জল কামান, রাবার বুলেট, গোলাবারুদ; এমনকি সরাসরি গুলি ছুড়ে এর জবাব দেয়।

কিন্তু আন্দোলন দিনকে দিন বেগবান হতে থাকে। ইন্তিফাদার প্রথম ১৩ মাসে ৩৩২ জন ফিলিস্তিনি ও ১২ জন ইসরায়েলি নিহত হয়।

পশ্চিম-তীরের স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১ বছরের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্ল্যাক কারফিউ জারি করা হয় ১৬০০ বারেরও বেশি।

ফিলিস্তিনে পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং খামার ও ঘরবারি ধ্বংস করা হয়।

ইন্তিফাদার শুরুর দিন থেকেই ইখওয়ানের সকল গ্রুপ (ফিলিস্তিনে থাকা ইখওয়ানের কয়েকটি গ্রুপ ছিল) একই সঙ্গে কর্মতৎপরতা শুরু করে।

পরবর্তীতে উক্ত শাখাগুলোকে একত্রিত করেই শায়খ আহমেদ ইয়াসিন হামাস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারা তখন পাথর নিক্ষেপ কিংবা সাধারণ ককটেল নিক্ষেপ করতো।

প্রথম প্রথম ইসরাইল ধারণাও করতে পারে নি, কারা ইন্তিফাদা পরিচালনা করছে। তবে তারা শায়েখ ইয়াসিনকে এর জন্য দায়ী মনে করতো।

শায়েখ আহমেদ ইয়াসিনকে জায়োনিস্ট ইসরাইল কর্তৃক গ্রেপ্তার

১৯৮৮ সালের আগস্টের শেষের দিকে, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী তার বাড়িতে হামলা চালায় এবং তাকে লেবাননে নির্বাসিত করার হুমকি দেয়।

তারপর ১৯ মে ১৯৮৯ সালে ইসরায়েলিরা তাকে শতাধিক হামাস সদস্যসহ গ্রেপ্তার করে।

এরপর ইসরায়েলি সামরিক আদালত তাকে ১৫ বছর কারাদণ্ড দেয়।

তার বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সৈন্যদের হত্যা ও অপহরণ করার প্ররোচনা এবং হামাসের সামরিক ও নিরাপত্তা শাখা প্রতিষ্ঠা সহ নয়টি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

কারাগারের অবস্থা তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়। তিনি পঙ্গুত্ব বরণ ছাড়াও আরো অনেক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এর ফলে তাকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন হয়।

ইজ্জেদ্দিন আল-কাসাম ব্রিগেডের (হামাসের সামরিক শাখা) একটি গেরিলা ইউনিট তাকে এবং অন্যান্য বৃদ্ধ ও অসুস্থ বন্দীদের জেল থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছিল।

তারা ১৩ ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে নিসিম টোলেদানো নামে একজন ইসরায়েলি সীমান্ত পুলিশকে অপহরণ করে এবং ইসরায়েলিদের একটি বিনিময় চুক্তির প্রস্তাব দেয়।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে এবং জেরুজালেমের কাছে টোলেদানাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

শায়েখের কারাবাসের পরবর্তী বছরগুলিতে তাকে মুক্ত করার জন্য আরও অনেক প্রচেষ্টা করা হয়েছিল।

অবশেষে ১৯৯৭ সালের অক্টোবরে জর্ডান রাজ্য এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি বিনিময় চুক্তিতে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

যার ফলে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান খালিদ মিশালকে হত্যার ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর আটক দুই মোসাদ সদস্যের সাথে বন্দি বিনিময়ে জায়োনিস্ট ইসরাইল শায়েখ ইয়াসিনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

শায়েখ আহমাদ ইয়াসিনকে গুপ্তহত্যা চেষ্টা এবং মৃত্যু

২০০০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষদিকে দ্বিতীয় ইন্তফাদার পর ইসরায়েলি দখলদাররা ইন্তিফাদাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী হামাসের নেতাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

৬ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সালে শায়েখ ইয়াসিনকে হত্যার একটি ব্যর্থ চেষ্টা করে তারা।

ইসরায়েলি F/16 যুদ্ধবিমান গাজা উপত্যকার একটি ভবনে একটি কোয়ার্টার টন বোমা ফেলে।

আহমেদ ইয়াসিন তার সঙ্গীর সাথে লক্ষ্যবস্তু ভবনের ভিতরে একটি অ্যাপার্টমেন্টে উপস্থিত ছিলেন, বোমা হামলায় ইসমাইল হানিয়া ও শায়েখ ইয়াসিন সামান্য আহত হন

২২ মার্চ ২০০৪ ভোরে বাসা থেকে ১০০ মিটার দূরের মসজিদে হুইল চেয়ারে করে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদের দিকে যাওয়ার সময় ৬৪ অ্যাপাচি হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।

উক্ত হামলায় শায়খ আহমেদ ইয়াসিন এবং তার সাথে তার সাত সঙ্গী শহীদ হয় এবং তার দুই ছেলে আহত হয়।

শায়েখের হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে গাজার রাস্তায় নেমে আসে।

আল-ওমারি মসজিদে আহমাদ ইয়াসিন রহ. এর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

হাজার হাজার ফিলিস্তিনি রাস্তায় নামাজ পড়ে। কারণ গাজার বৃহত্তম এই মসজিদে মানুষের জায়গার সংকুলান হয় নি।

শায়খ আহমদ ইয়াসিনকে বিংশ শতাব্দীর সক্রিয় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।

শায়খ আহমেদ ইয়াসিন রহ. একবার বলেছিলেন: “জায়োনিস্ট ইসরায়েল ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে একটি মাত্র বিকল্প রেখে যায়। হয় প্রতিরোধ, সংগ্রাম অথবা শাহাদাত।”

তথ্যসুত্র

ইন্টারঅ্যাকটিভ প্যালেস্টাইন এনসাইক্লোপিডিয়া

আল জাজিরার একটি প্রতিবেদন

আহমেদ ইয়াসিন, বাংলা উইকিপিডিয়া

মারেফা ডট ওআরজি

ফিলিস্তিন ও হামাস, পৃষ্ঠা ৭৯-৮৯

Scroll to Top