রোমানদের বিরুদ্ধে উসমান রা. এর অভিযান

রোমানদের বিরুদ্ধে উসমান রা. – হযরত উমর রা. এর মৃত্যুর মাধ্যমে জিহাদের পতাকা অস্তমিত হয় নি। পূর্বের মতোই তা বহাল তবিয়তে চলতে থাকে।

সে সময় কুফার সেনাছাউনিতে সবসময় ৪০ হাজার মুজাহিদ প্রস্তুত থাকতো। যাদের মধ্যে প্রতি বছর ১০ হাজার মুজাহিদ সীমান্তে নিয়োজিত থাকতো।

তাদের মধ্যে ৬ হাজার আজারবাইজানে আর ৪ হাজার রায় শহরে অবস্থান করতো। (তারিখুত তাবারী, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৪৬)

হযরত উসমান রা. এর শাসনকালের পূর্ব থেকেই ওয়ালিদ উবনে উকবা রা. আলজাজিরার গভর্নর ছিলেন।

তিনি আপন সেনাপতি সালমান বিন রাবিয়া রহ. কে ১২ হাজার মুজাহিদ দিয়ে আর্মেনিয়া পাঠিয়েছিলেন। যারা কয়েকটি অঞ্চল জয় করে প্রচুর গণিমত নিয়ে আসে।

রোমান সরদারের তাবুতে – রোমানদের বিরুদ্ধে উসমান রা.

রোমানরা উমর রা. এর শাহাদাতের ফলে ভাবতে থাকে, মুসলমানদের শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই তারা শামের সীমান্তে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

এই সময়ে রোমানদের বিরুদ্ধে উসমান রা. একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। তিনি রোমানদের ব্যাপারে অবগত হয়ে ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. কে চিঠি লিখেন। তাকে শামের মুসলমানদের সাহায্যে ১০ হাজার মুজাহিদ পাঠাতে বললেন।

ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. তৎক্ষণাৎ সালমান বিন রাবিয়া রহ. এর নেতৃত্বে মুজাহিদ বাহিনীকে শামের সীমান্তে পাঠিয়ে দেন।

হযরত হাবিব বিন মাসলামা রা. সেখানে স্থানীয় মুজাহিদদের সাথে সাহায্যের অপেক্ষায় ছিলেন।

ওদিকে রোমানরা ৮০ হাজার সৈন্য নিয়ে শিবির স্থাপন করে।

হাবিব বিন মাসলামা রা. পরিকল্পনা পরিবর্তন করে আক্রমণ করতে খুব দক্ষ ছিলেন। তিনি শত্রুদের উপর রাতের অন্ধকারে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন।

যখন তিনি নিজ তাবু থেকে বের হতে লাগলেন তখন তারা সম্মানিতা স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, এরপর আবার কোথায় সাক্ষাৎ হবে?

তিনি বললেন, রোমান সেনাপতির তাবুতে কিংবা জান্নাতে।

তিনি রাতে অন্ধকারে রোমানদের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। এ সময় তার স্ত্রী বেশভূষা পরিবর্তন করে প্রাণোৎসর্গকারী মুজাহিদদের মধ্যে শামিল হয়ে যান।

হযরত হাবিব বিন মাসলামা রা. বিজলির মতো আকস্মিক শত্রুদের উপর আক্রমণ করেন।

তিনি লড়াই করতে করতে রোমান সেনাপতির তাবু পর্যন্ত পৌঁছে যান।

তিনি দেখতে পান তার স্ত্রী তার আগেই সেখানে পৌঁছে গেছেন। এই যুদ্ধে রোমানদের পরাজয় হয়। মুসলমানরা বিজিত হয়ে ফিরে আসে।

রোমানদের আলেকজান্দ্রিয়া দখল

এই পরাজয়ের পরও রোমানরা মনে করছিল, মুসলমানরা কিঞ্চিৎ হলেও দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই আক্রমণ করে কিছুটা হলেও ভূমি দখল করা যাবে।

তাই তারা মিসরের উপকূলবর্তী শহর আলেকজান্দ্রিয়া দখল করার পরিকল্পনা নেয়। রোমান সেনাপতি মুনায়েল সেখানে অত্যন্ত শক্তিশালী নৌবাহিনী নিয়ে পৌঁছে যায়।

স্থানীয় রোমানরা আগেই বিদ্রোহ করে বসে। এর ফলে রোমানরা আলেকজান্দ্রিয়া দখল করতে সক্ষম হয়।

কিন্তু মিসরের গভর্নর হযরত আমর বিন আস রা. তাদেরকে বেশিদিন বিজয়ের আনন্দ উপভোগের সুযোগ দেন নি।

২৫ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে তিনি পাল্টা হামলা করে রোমান নৌবাহিনীকে পরাজিত করেন।

এর মাধ্যমে তিনি পুনরায় আলেকজান্দ্রিয়ায় ইসলামের পতাকা উড্ডীন করেন।

আলেকজান্দ্রিয়ার স্থানীয় কিবতিরা জনগোষ্ঠী বিদ্রোহের সময় সঙ্গ দেয় নি। তাই রোমানরা পরাজিত হওয়ার পর পালানোর সময় তাদের আর্থিক ক্ষতিসাধন করে।

হযরত আমর ইবনে আস রা. কিবতিদের যথাসম্ভব ক্ষতিপূরণ দেয়ার চেষ্টা করেন।

প্রাচ্যবিদরা মুসলমানদের এই কার্যক্রমকে ডাকাতি বলে উল্লেখ করে থাকে। অথচ এ ধরণের কার্যক্রম বাইজেন্টাইনরাও করতো।

উভয় পক্ষ থেকে চলমান এই কার্যক্রমকে যুদ্ধই বলতে হবে। যা ছিল প্রচলিত যুদ্ধ থেকে ভিন্ন।

এটাকে ডাকাতি বা লুটপাট বলে আখ্যা দেয়াটা রাজনৈতিক নীতিমালা সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচয় বহন করে।

রোমানদের বিরুদ্ধে উসমান রা. এর এই অভিযান ইতিহাসে স্বরণীয় হয়ে আছে।

তথ্যসুত্র

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৭৭-২৮১

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top