ভয়াবহ ফিতনা এবং মুসলমানদের করণীয়

ফিতনা হলো পরীক্ষা। চলাচলের রাস্তায় উৎ পেতে থাকা ফাঁদ। পৃথিবীতে রয়েছে ভয়াবহ ফিতনা এবং বিপদের ছড়াছড়ি। সম্পদের ফিতনা, অভাবের ফিতনা, নাম না জানা কত ফিতনা আছে, তার কোনো হিসাব নেই। ফেতনার এই মূহুর্তে মুসলমানদের করণীয় কি, সেটি একজন মুসলমানের জানা উচিৎ।

নবীজি সা. পৃথিবীর এত লাখো লাখো ফিতনার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ফিতনা বলে আখ্যা দিয়েছেন নারীঘটিত ফিতনাকে।

সহীহ বুখারীর ৫০৯৬ নং হাদীসে নবীজি সা. ইরশাদ করেন, হাদীসটি হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রা. হতে বর্ণিত,

عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার পর আমি পুরুষের জন্য দুষ্টু নারীর চেয়ে অধিক ক্ষতিকর কোন ফিতনা আমি রেখে যাচ্ছি না।

এই হাদীসে নবীজি সা. পৃথিবীতে নারীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফেতনাকে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বলে সাব্যস্ত করেছেন।

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন,

নারীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফিতনা অন্যান্য ফিতনা হতেও অনেক ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে। যেমনটা কুরআনে আল্লাহ বলেছেন।

পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরানের ১৪ নং আয়াতে বলা হচ্ছে,

زُیِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوٰتِ مِنَ النِّسَآءِ وَ الۡبَنِیۡنَ وَ الۡقَنَاطِیۡرِ الۡمُقَنۡطَرَۃِ مِنَ الذَّهَبِ وَ الۡفِضَّۃِ وَ الۡخَیۡلِ الۡمُسَوَّمَۃِ وَ الۡاَنۡعَامِ وَ الۡحَرۡثِ ؕ ذٰلِکَ مَتَاعُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ اللّٰهُ عِنۡدَهٗ حُسۡنُ الۡمَاٰبِ

মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে প্রবৃত্তির ভালবাসা- নারী, সন্তানাদি, রাশি রাশি সোনা-রূপা, চি‎‎হ্নিত ঘোড়া, গবাদি পশু ও শস্যক্ষেত। এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগসামগ্রী। আর আল্লাহ, তাঁর নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।

কেন নারীরা পুরুষের জন্য ফিতনাস্বরুপ?

আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীতে নারীদেরকে সৃষ্টি করেছেন স্বভাবগত কোমল করে। এছাড়াও তাদেরকে খানিকটা দুর্বল করেও সৃষ্টি করা হয়েছে।

এই দুর্বলতা নিয়ে একটি আশ্চর্যজনক তথ্য উঠে এসেছিল জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে। সেখানের তথ্যমতে, বিশ্বের 90% মানুষ নারীদের দুর্বল মনে করে।

এই জরিপটি করা হয়েছিল ৭৫টি দেশের মানুষের উপর গবেষণা করে। তবে ইসলামে নারীদেরকে দুর্বল বলে সবক্ষেত্রে দুর্বল হিসেবে বলা হয় নি।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের চেয়েও সবল। ইসলামী শরীয়াহ প্রত্যেকে আলাদা আলাদা মানদন্ড দিয়েছে, মর্যাদা দিয়েছে।

সাধারণত নারীদের বুদ্ধিতে ‘নুকস’ তথা স্বল্পতা বিদ্যমান। এছাড়াও নারীদের মধ্যে খুব কমই দ্বীনি বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করে।

এছাড়াও নারীদের কারণে কখনো কখনো পুরুষদের ইলম অর্জনে বাধা সৃষ্টি হয়, তাদেরকে পার্থিব বিষয়ের অর্জনে যুক্ত হতে হয়। এটি অনেক সময় বড় ফিতনা আকারে প্রকাশ পায়।

সহীহ মুসলিম শরীফের ২৭৪২ নং হাদীসে হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত আছে,

إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللَّهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ

নবীজি সা. বলেন, অবশ্যই দুনিয়াটা চাকচিক্যময় মিষ্টি ফলের মতো আকর্ষণীয়। আল্লাহ তা’আলা সেখানে তোমাদেরকে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। তিনি লক্ষ্য করতেছেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ করো। তোমরা দুনিয়া ও নারী জাতি থেকে সতর্ক থেকো। কেননা বনী ইসরাঈলদের মাঝে প্রথম ফিতনাহ নারীকেন্দ্রিক ছিল।

এই ফিতনা থেকে কতটুকু সতর্ক থাকা উচিৎ?

নারীঘটিত ফিতনাকে আল্লাহ তা’আলা এবং নবীজি সা. সবচেয়ে বড় ফিতনা বলে আখ্যায়িত করেছেন।

বর্তমানে এই পৃথিবীতে নারীঘটিত কারণে অসংখ্য খারাপ কাজ হচ্ছে।

সমাজে ইহুদি-খৃস্টানদের সাথে উন্নতির তাল মিলিয়ে চলতি গিয়ে আমাদের নারীরা পর্দাকে “মধ্যযুগীয় পন্থা” বলে নিজেকে প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছে।

এই নারীঘটিত ফিতনার কারণেই খুন-গুম, রাহাজানি, হানাহানি, ধর্ষণ, পতিতাবৃত্তি, ব্যভিচার বা অবাধ যৌনাচার, পর্ন মিডিয়া, হস্তমৈথুনের মতো বহু ভয়ঙ্কর এবং খারাপ কাজ সংগঠিত হচ্ছে।

আমাদের গাইরে মাহরাম থেকে তো অবশ্যই বেঁচে থাকা দরকার। এর পাশাপাশি মাহরাম মহিলাদের থেকেও ক্ষেত্রবিশেষে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার।

ইমাম নববী রহ. বলেন, ‘দুনিয়ার ফিতনা হতে বাঁচ’ কথা দ্বারা হাদীসে সকল নারীকেই অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এমনকি নিজের স্ত্রীকেও।

একবার এক খলিফা তার যুগের বড় বড় ফকীহ ও আলেমদের নিকট হাদিয়া-তোহফা পাঠালেন। সকলেই সেটা খুশিমনে গ্রহণ করলেন।

তবে হযরত ফুদাইল ইবনে ইয়াজ রহ. তা গ্রহণ করেন নি। তিনি তার ফেরৎ পাঠালেন। এটি দেখে তার স্ত্রী বলতে লাগলো,

আপনি কিভাবে ১০ হাজার দিনার (বর্তমানে ৩৯,৩৯,৭৫,০০০৳ উনচল্লিশ কোটি উনচল্লিশ লক্ষ পচাত্তর হাজার টাকা। ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ এ বাংলাদেশের স্বর্ণের মূল্য অনুযায়ী) ফেরৎ পাঠিয়ে দিলেন অথচ ঘরে একদিনের বাজারও নেই।

তখন হযরত ফুদাইল ইবনে ইয়াজ রহ. বললেন, আমার আর তোমার উদাহরণ হলো সেই জাতির মতো, যাদের কাছে একটি গাভী ছিল। প্রত্যেকেই গাভীর দুধ খেয়ে জীবন ধারণ করতো। কিন্তু যখন গাভীটি বৃদ্ধ হয়ে গেল তখন সেটিকেই তারা যবেহ করে ভক্ষণ করলো। সুতরাং আমি হলাম সেই গাভী আর তুমি হলে সেই জাতি।

তথ্যসুত্র

ফিতনাতুন নিসা, সালিহ আল মুনাজ্জিদ, পৃষ্ঠা ১৯-২৩

মুসলমানদের জন্য ভয়াবহ ফিতনা কি

নারীঘটিত ফিতনাকে মুসলমানদের জন্য ভয়াবহ ফিতনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে কুরআন-হাদীসে।

ভয়াবহ ফিতনা এবং মুসলমানদের করণীয় কি

নারী ফিতনা থেকে বেঁচে থাকা হলো একজন মুমিন মুসলমানের উপর কর্তব্য

Scroll to Top