দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের ইন্তিকাল – এশার নামাজের পর কাজ শেষে বাসায় ফিরলাম। সকালেই শুনেছিলাম সাঈদী সাহেব অসুস্থ। মেডিকেলে আছেন।
বাসায় আসার সময় নিচের দোকানদারদের কথাবার্তা শুনি। সাঈদী সাহেব মারা গেছেন। কিন্তু আমি দূরে থাকায় শুনি হাজী সাহেব মারা গেছেন।
খারাপ লাগলো। কোন হাজী সাহেব মারা গেলেন এলাকার? বাসায় আসার পর আমার ছোট ভাই হোসাইন বললো,
শুনেছ, দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব মারা গেছেন। স্তব্ধ হয়ে গেলাম। পৃথিবী যেন থমকে গেল। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই মানুষটার প্রতি। একই সময়ে থেকে তাকে সরাসরি দেখতে পারি নি। জালেম সরকার তাকে আমার শৈশব থেকেই আটক করে রেখেছে।
স্মৃতির ডানায় ভর দিয়ে খানিকটা পেছনে গেলাম। শৈশবে তখন সাঈদী সাহেবের ওয়াজ আমরা ক্যাসেটে বা বাটন মোবাইলে শুনতাম।
কত বিষয়ে তার তাফসীর বয়ান ছিল। ছিল তাফসীরের সিরিজ। আমার দাদী, নানী, বাবা-মা মাওলানার বয়ান পছন্দ করতেন।
দাদীকে দেখতাম সাঈদী সাহেবের বয়ান শুনে কান্না করছেন। নানাকেও দেখেছিলাম সাঈদী সাহেবের কথা বলতে।
ছোটবেলায় এত কিছু বুঝতাম না। শুধু আলেম হিসেবে উনাকেই চিনেছিলাম। দুঃখের বিষয় হলো, ভালো করে চেনার আগেই উনাকে কুফফার সরকারের রোষানলের শিকার হতে হয়।
আওয়ামীলীগ সরকার তাকে রাজাকার ট্যাগ দিয়ে ২০০৯ সালে গ্রেফতার করে। এর পূর্বেও তিনি জেলে ছিলেন। ছাড়া পাওয়ার ৩ মাস পর আবার গ্রেপ্তার করে।
আমি তখন শান্তিনগরে একটি মাদ্রাসায় নাজেরা বিভাগে পড়তাম। উনাকে গ্রেপ্তারের সংবাদ পাওয়ার পর দেখেছিলাম হুজুররা উনার মুক্তির জন্য দোয়া করছেন।
ভেবেছিলাম হয়তো কিছুদিন পর ছেড়ে দিবে। কিন্তু তা আর হলো কই? ২০১২ সালে আমি হেফজখানায় পড়তাম।
তখন দেশের রাজনীতি ছিল উত্তপ্ত। সরকার রাজাকারদের বিচারের নামে প্রকৃত রাজাকারদের না ধরে আলেম উলামা ও ভালো মানুষগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরু করে।
তাদের অপরাধ ছিল, তারা জামায়াতে ইসলামীর সাথে রাজনীতি করতো। সে সময় শুনছিলাম, সাঈদী সাহেবকে ফাঁসি দিবে।
পত্রিকায় দেখেছিলাম রাজপথে এসব নিয়ে প্রতিবাদ করে বহু দ্বীনি ভাই শহীদ হয়েছিলেন। মানুষ কাফনের কাপড় পরিধান করে আন্দোলন করেছিল।
2
এরপরও তারা প্রথম রাজাকার ফাঁসি দেওয়ার নাম করে জামায়াতের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কাদের মোল্লা রহ. কে ফাঁসি দেয়।
ভালো মানুষটাকে তারা নির্দয়ভাবে হত্যা করলো। এরপর একে একে কামরুজ্জামান, গোলাম আজমকেও ফাঁসি দেয়।
মতিউর রহমান নিজামী তো বহু আগেই মারা গেলেন। জামায়াতের সাথে রাজনীতি করাই ছিল তাদের অপরাধ।
সাঈদী সাহেবকেও তারা ফাঁসি দিত। আন্তর্যাতিক চাপের কারণে তা সম্ভব হয় নি। উনাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আজ এই মুফাসসির আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মতো জেলখানাতেই হলো তার মৃত্যু।
উনার ছেলের ফেইসবুক থেকে জানলাম, গতকাল অসুস্থ হওয়ার পর আজ হাসপাতালে নেওয়ার পরও উনার ছেলেদেরকে তার সাথে দেখা করতে দেয় নি।
এই নিষ্ঠুর সরকার আর কত রক্ত চায়। আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। একদিন আসবে। যেদিন আওয়ামীলীগ হবে ইতিহাসের আস্থাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে।
মানুষ এই দলকে ঘৃণাভরে স্বরণ করবে। আজকে তাতারীদের যেমন কেউ দেখতে পারে না তেমনি এই দলকেও কেউ দেখতে পারবে না।
তাতারীদের ঢল যেমন আল্লাহ একদিন থামিয়ে দিয়েছেন তেমনি এই দলের দৌরাত্ম্যও একদিন থামিয়ে দিবেন।
আল্লাহ মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করো। তাগুত সরকারকে হেদায়েত বা ধ্বংস করে দাও