খারেজীদের আকিদা বিশ্বাস ও বাড়াবাড়ি

খারেজীদের আকিদা বিশ্বাস – মুসলিম ইতিহাসের নিকৃষ্ট জাতির মধ্যে অন্যতম হলো খারেজী সম্প্রদায়। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ও মহামান্য ব্যক্তিদের অবজ্ঞা দ্বারাই তাদের সূচনা হয়।

তাদের প্রতিটা বিষয় নিয়ে আমরা নিচে মূলকথা ও ব্যাখ্যাসহ আলোচনা করছি।

ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি

খারেজীদের ব্যাপারে একটা কথা চিরসত্য যে, তারা খুবই ইবাদাত বন্দেগী করে। সর্বক্ষণ খোদার স্বরণে মত্ত থাকে।

কিন্তু তারা ইসলাম বা ধর্মকে বুঝেছে নিজেদের মন ও মত অনুযায়ী। তারা নিষিদ্ধ বিষয় থেকে খুবই দূরে থাকার চেষ্টা করে।

স্বয়ং রাসূল সা. তাদের সম্পর্কে বলেছেন,

يخرج قوم من أمتي يقرءون القرآن ليس قراءتكم إلى قراءتهم بشيء ولا صلاتكم إلى صلاتهم بشيء ولا صيامكم إلى صيامهم بشيء

 আমার উম্মতের মধ্য হতে এমন একটি দল বের হবে, তারা কুরআন পড়বে। তাদের কুরআন পাঠের তুলনায় তোমাদের কুরআন পাঠকে নগণ্য মনে হবে। তারা রোজা রাখবে। কিন্তু তাদের রোজার তুলনায় তোমাদের রোজা কিছুই না।

কিন্তু তারা এতটা ফরহেজগার হয়েও ইসলামের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে লাগলো। তাদের মতের বাহিরে কেউ গেলে তাদেরকে কাফের মনে করতো তারা।

দ্বীন-ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা

খারেজিদের আরেকটি বড় অসুবিধা হলো, তারা কুরআন-সুন্নাহ বা হাদীস সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ। তারা তাদের মনমতো ইসলামেকে বুঝতে চায়।

শরিয়তকে তারা সঠিকরূপে মান্য করতে চায় না। এরই প্রেক্ষিতে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. তাদেরকে সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

খারেজিদের সাথে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর বিরর্ক কেন হলো, পড়ুন

তারা দ্বীন ও ধর্মের বিধানগুলো না জেনেই আলী রা. সহ বড় বড় সাহাবীদের কাজকে কুফরী আখ্যা দিয়ে তাদের কাফের বলেছিল।

মুসলিম খলিফাকে মানতে অস্বীকৃতি

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, খারেজিদের ভ্রষ্ট নীতিগুলোর অন্যতম হলো তারা হেয়াদাত, ইসলামের ঈমাম ও মুসলিম জামাতের ব্যাপারে বেইনসাফির আকিদা পোষণ করে থাকে।

খারেজিদের সাথে আলী রা. এর যুদ্ধ কেন হলো, পড়ুন

তারা রাফেজী ও অন্যান্য ভ্রষ্ট দলগুলো থেকে নিজের নীতিমালা গ্রহণ করে থাকে। তারা নিজের মতের বিরুদ্ধে গেলেই কুফরী বলে আখ্যা দিয়ে থাকে।

তারা আমিরুল মুমিনীন আলী রা. এর খেলাফত মানতে অস্বীকার করে এবং তাকে কাফের বলে।

পাপের কারণে কাফের ফাতওয়া দেয়া ও মুসলমানদের রক্তকে বৈধ মনে করা

খারেজিরা কোনো পাপী ব্যক্তিকে সরাসরি কাফের বলে। সে তাকফিরের ভিত্তিতে মুসলমানদের জানমালকে বৈধ মনে করে।

তাকফির হলো, কোনো মুসলিমের ব্যাপারে কাফির ও মুরতাদ হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া।

তারা বিশ্বাস করে যে, মুসলিম খলিফার হাতে থাকা ভূখন্ড কখনোই মুসলামনের নিজস্ব ভূ-খন্ড নয়। অর্থাৎ তারা দারুল ইসলামকে দারুল হরব বলে থাকে।

খারেজিরা সর্বদা মুসলিম জামাত হতে পৃথক থাকতে পছন্দ করে। তারা নিজেদের আকিদাকে একমাত্র আল্লাহর মনোনীত মনে করে।

আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন, তারা নিজেদের ধর্মবিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে এতটা হীন যে, তাদের মতের বিরুদ্ধাচরণ করলে নারী-শিশুদের হত্যা করে। এমনকি তারা এটাকে বৈধ মনে করে।

তাদের নিকট মুসলমানরা কাফের হওয়ার মুলনীতি হলো,

১. যে ব্যক্তি ভুলে বা নিজের রায়ের মাধ্যমে কুরআনের বিরোধিতা করবে, সে কাফের।

২. যে উসমান রা. ও আলী রা. কে সমর্থন করবে, সেও কাফের।

এমনকি যারা উপরোক্ত ব্যক্তিদেরকে কাফের বলে না, খারেজিদের দৃষ্টিতে তারাও কাফের।

রাসূল সা. কে জালিম বলে আখ্যায়িত করা

খারেজীদের আকিদা বিশ্বাস এর আরেকটি হলো, রাসূল সা. এর ব্যাপারে নিজেদের স্বাধীন ভেবে নিয়েছে।

তারা বলে থাকে, নবীজি যুলুম করেছেন। (আল্লাহ আমাকে এমন বিশ্বাস থেকে হেফাজত করুন)

তারা রাসূলের আনুগত্যকে ওয়াজিব মনে করে না। এমনকি তারা নবীজির হাদীসে বর্ণিত বিষয়কেও অস্বীকার করে।

খারেজিরা মনে করে, রাসূলের প্রয়োজন ছিল কুরআন নাজিলের জন্য। যেহেতু কুরআন নাজিল হয়েছে, তাই এখন আর রাসূলের প্রয়োজন নেই।

তারা কুরআন না থাকা মাসআলার ক্ষেত্রে হাদীস থেকে গ্রহণ না করে নিজেদের মনমতো আমল করে।

দোষচর্চা করা ও ভ্রান্ত বিশ্বাস পোষণ করা

খারেজিরা মুসলিম খলিফাদের ভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট বলে আখ্যায়িত করে। তারা বলে, এসকল মুসলিম খলিফারা হেদায়াতের পথ থেকে দূরে সরে গেছেন।

কু-ধারণা পোষণ করা

রাসূল সা. এর উপর খারেজিদের পূর্বপুরুষ জুল খুয়াইসারার মতো মুর্খ আপত্তি তুলেছে। সেই মোতাবেক তারাও বিভিন্ন বিষয়ে আপত্তি তুলে।

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি কিছু গনীমতের মাল বণ্টন করছিলেন।

তখন বানু তামীম গোত্রের জুল-খুয়াইসারা নামে এক ব্যক্তি এসে হাযির হল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ইনসাফ করুন।

নবীজি বললেন, তোমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি ইনসাফ না করি, তবে ইনসাফ করবে কে? আমি তো নিষ্ফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হব যদি আমি ইনসাফ না করি। ’

হযরত ওমর রা. এর পরে কিভাবে খলিফা নির্বাচন করা হয়, পড়ুন

উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অনুমতি দিন আমি এর গর্দান উড়িয়ে দিই। তিনি বললেন, একে ছেড়ে দাও।

তার এমন কিছু সঙ্গী সাথী রয়েছে তোমাদের কেউ তাদের সালাতের তুলনায় নিজের সালাত এবং সিয়াম নগণ্য বলে মনে করবে।

এরা কুরআন পাঠ করে, কিন্তু কুরআন তাদের কন্ঠনালীর নীচে প্রবেশ করে না। তারা দ্বীন হতে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক হতে বেরিয়ে যায়।

মুসলমানদের বিরুদ্ধে চরমপন্থা অবলম্বন

তারা মুসলমানদের জান-মালকে বৈধ মনে করে। তারা মুসলমানদের হত্যা করা সওয়াবের বিষয় ভেবে থাকে। এমনকি তারা মুসলমানদের শত্রুদের সাহায্য করতে একটুও ভাবে না।

হক্কানি আলেমদের প্রতি বিষোদ্গার

খারেজিরা কোনো আলেম বা ইসলাম সম্পর্কে ধারণা রাখে, এমন ব্যক্তিদের পছন্দ করে না। তারা তাদের বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপ করে থাকে।

তাদের এসব কর্মকাণ্ডে অমুসলিমরা আরো উৎসাহ পায়। ফলে সাধারণ মুসলমানরাও কখনো কখনো এমন কাজের কারণে ধোঁকা খায়।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম রহ. বলেন, শরিয়ত, ইতিহাস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা এ ব্যাপারে সম্যক অবগত যে, সকল মর্যাদাবান ব্যক্তি ইসলামের জন্য উত্তম কীর্তি রেখে গেছেন, সুনাম অর্জন করেছেন।

আবু জাহেলের বিরুদ্ধাচরণ সত্ত্বেও নবীজি কিভাবে ইসলাম প্রচার করেছেন, পড়ুন

এরপরও তাদের কিছু কিছু ভুল হয়েছে। সেগুলোকে আমরা অপারগ বলে ধরে নিয়ে তাদের জন্য আজর বা পরকালে প্রতিদানের আশা রাখতে হবে।

কিন্তু খারেজিরা তাদেরকে পুরোপুরি পথভ্রষ্ট ও কাফের বলে থাকে।

তথ্যসুত্র

খারেজি: ড. আলী মুহাম্মাদ আস সাল্লাবী। পৃষ্ঠা ৫৭-১২৭ খারেজীদের আকিদা বিশ্বাস

Abdur Rahman Al Hasan
Scroll to Top