কথার আঘাত – বেঁচে থাকার জন্য যেমন আমাদের অক্সিজেন প্রয়োজন তেমনি মনের ভাব পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করার জন্য আমাদের কথা বলা প্রয়োজন।

মনের ভাব প্রকাশের সর্বোত্তম মাধ্যম হলো কথা বলা। কথার মাধ্যমে একটি বিষয় যত সহজে বুঝানো যায়, লিখেও ততটা সহজে বুঝানো যায় না।

আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে যবান দিয়েছেন কথা বলার জন্য। যবানের মাধ্যমে আমরা মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি।

পবিত্র কুরআনের সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৫৩ এ বলেন,

وَ قُلۡ لِّعِبَادِیۡ یَقُوۡلُوا الَّتِیۡ هِیَ اَحۡسَنُ ؕ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ یَنۡزَغُ بَیۡنَهُمۡ ؕ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ کَانَ لِلۡاِنۡسَانِ عَدُوًّا مُّبِیۡنًا

আমার বান্দাদেরকে বল, তারা যেন এমন কথা বলে, যা অতি সুন্দর। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বৈরিতা সৃষ্টি করে; নিশ্চয় শয়তান মানুষের স্পষ্ট শত্রু।

কখনো কখনো আমাদের নিজেদের অজ্ঞতাবশত বা ইচ্ছাকৃত এই কথা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কথার মাধ্যমে এ্ই ক্ষতিটা বিভিন্ন রকম হতে পারে। নৈতিক ক্ষতি, সামাজিক ক্ষতি, ধর্মীয় ক্ষতিসহ আরো বিভিন্ন রকম ক্ষতি।

অনেক সময় আমরা কথা বলার ক্ষেত্রে অন্যকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করি। অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করি। অন্যের মর্যাদা ক্ষুন্ন করি।

বিশেষ করে বন্ধুদের আড্ডায় এটি বেশি হয়। আমরা পরষ্পরের গোপনীয় ত্রুটি নিয়ে কটাক্ষ করি। হাসাহাসি করি।

সহীহ বুখারীর ৬৪৭৭ নং হাদীসে আছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يَتَبَيَّنُ فِيهَا يَزِلُّ بِهَا فِي النَّارِ أَبْعَدَ مِمَّا بَيْنَ الْمَشْرِقِ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয় বান্দা পরিণাম চিন্তা ব্যতিরেকেই এমন কথা বলে যে কথার কারণে সে ঢুকে যাবে জাহান্নামের এমন গভীরে যার দূরত্ব পূর্ব (পশ্চিম) এর দূরত্বের চেয়েও বেশি।

আমরা যদি আমাদের কথার মধ্যে লাগাম ব্যবহার না করি, তাহলে এটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

কোন কথাটি আমার বলা উচিৎ আর কোনটি বলা উচিৎ নয়, এটি বুঝতে হবে। কথার আঘাত নিয়ে কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।

অনেকেই আছেন, একটু উনিশ-বিশ হলেই গালির স্তুপ বের করা শুরু করেন।

যেটা ইচ্ছা সেটা বলে প্রতিপক্ষকে গালি দিয়ে গায়েল করার চেষ্টা করেন।

এটি খুবই বাজে একটি কাজ। একে তো গালি দেওয়াই খারাপ কাজ তার উপর আবার এসব কথা বলে নিজের আমলকে নিজেই বরবাদ করছি।

এই লেখায় যা যা থাকছে :

2

হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি তোমাকে গালি দিল তাকে তুমি ফিরতি গালি দিও না।

কেননা সে গালি দেওয়ার মাধ্যমে তোমার গুনাহের ভাগিদার হয়েছে আর তুমি তার নেকের ভাগিদার হয়েছ।

তাই আমাদের এসব খারাপ অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। যেন অপর কোনো ব্যক্তি কথার মাধ্যমে কষ্ট না পায়।

হযরত আবু হুরায়রা. রা. হতে একটি হাদীস আছে। নবীজি বলছেন, প্রকৃত মুসলমান হলো সেই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ হতে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।

সূরা কাফ, আয়াত ১৮ নং আয়াতে বলা হচ্ছে,

مَا یَلۡفِظُ مِنۡ قَوۡلٍ اِلَّا لَدَیۡهِ رَقِیۡبٌ عَتِیۡدٌ

মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা গ্রহণ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্তুত সংরক্ষণকারী রয়েছে।

Scroll to Top