রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত

রমজানের গুরুত্ব – আরবি বারো মাসের মধ্যে এক মাস আমাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রোজাকে ফরজ করেছেন। রোজা হলো ইসলামের মৌলিক ফরজ বিধানগুলোর মধ্যে অন্যতম।

রোজা এর আরবি শব্দ হলো সওম। আর শরীয়তের পরিভাষায় সওম বলা হয়, প্রত্যেক সজ্ঞান,

বালেগ মুসলমান নর-নারীর সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযার নিয়তে পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও রোযাভঙ্গকারী সকল কাজ থেকে বিরত থাকা।

রমজান মাসে মানুষের উপর পূর্ণ মাস রোজা রাখা ফরজ হয়। প্রত্যেক বালেগ ও সজ্ঞান নর-নারীর উপর তখন সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখা ফরজ।

আল্লাহ তাআলা সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার।

আল্লাহ তাআলা এই রোজা শুধুমাত্র এই উম্মতের উপরেই ফরজ করেন নি, পূর্বে বহু উম্মতের উপর রোজাকে তিনি ফরজ করেছিলেন।

আরব সরদার আহনাফ বিন কায়েস রহ. এর গল্প পড়ুন

হযরত মুসা আ. এর উপর ৪০ দিন রোজাকে ফরজ করেছিলেন। এ ছাড়াও অন্যান্য আরো অনেক নবীর উপর রোজাকে ফরজ করেছেন।

প্রত্যেক রমজান মাসে একজন মুসলমানের জন্য রোজা রাখা ফরজ। এই সম্পর্কে আল্লাহ  সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে বলেন,

فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে।

এই সম্পর্কে শুধু কুরআনে নয়, হাদীসেও নবীজি সা. ইরাশাদ করেছেন। সহীহ বুখারীর ১৯০৯ নং হাদীসে নবীজি সা. বলেন,

إذا رأيتم الهلال فصوموا وإذا رأيتموه فافطروا، فإن غم عليكم فصوموا ثلاثين،

যখন তোমরা (রমযানের) চাঁদ দেখবে, তখন  থেকে রোযা রাখবে আর যখন (শাওয়ালের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা বন্ধ করবে। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ত্রিশ দিন রোযা রাখবে।

নবীজি এখানে স্পষ্ট বলেছেন, রমজানের চাঁদ দেখার সাথে সাথেই রোজা ফরজ হয়ে যায়।

আর ২৯ দিন পর যদি শাওয়ালের চাঁদ দেখা যায়, তাহলে আর রোজা রাখতে হবে না।

কিন্তু যদি শাওয়ালের চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে তখনো রোজা ফরজ থাকবে। মুসলমানদের ৩০ দিন রোজা পূর্ণ করতে হবে।

কোনো ব্যক্তি যদি রমজান মাসে অলসতা করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করে বা রোজা না রাখে তাহলে ইসলামের এই ফরজ বিধান না মানার কারণে সে মারাত্মক গোনাহগার হবে।

মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা গ্রন্থের ৯৮৭৮ নং হাদীসে বলা হয়েছে,

من افطر يوما من رضمان متعمدا لم يقضه أبدا طول الدهر.

হযরত আলী  রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রমযান মাসের একটি রোযা ভঙ্গ করবে, সে আজীবন রোজা রাখলেও তার ক্ষতিপূরণ আদায় হবে না।

নবীজি মারাত্মক হুশিয়ারী দিয়েছেন ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গকারী সম্পর্কে। কিন্তু এরপরও মানুষের সাধ্যমতো এর ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।

রমজানের গুরুত্ব
রমজানের গুরুত্ব

অনিচ্ছাকৃত বা উযরবশত ছুটে যাওয়া রোজার বদলে কাযা, আর উযর ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেয়া রোজার বদলে দিতে হয় কাফফারা।

কাযা হলে সমপরিমাণ রোজা আদায় করতে হয়। আর কাফফারা হলে রোজা না রাখার কারণে সুনির্দিষ্ট কিছু কর্তব্য পালন করতে হয়। কাফফারা তিন ধরনের,

(১) গোলাম আযাদ করা, আর তা সম্ভব না হলে

(২) একাধারে ৬০টি রোযা রাখা, আর সেটিও সম্ভব না হলে

(৩) ৬০ জন মিসকীনকে এক বেলা খানা খাওয়ানো।

জিহাদ সম্পর্কে আয়াত, হাদীস ও মাসআলা পড়ুন

সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস নং ৩৪২৫

 عن أبى أمامة قال : قلت  يا رسول الله! مرنى بعمل قال : عليك بالصوم فإنه لا عدل له قلت : يا رسول الله! مرنى بعمل قال : عليك بالصوم، فانه لا عدل له

হযরত আবু উমামা রা. বর্ণনা করেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে কোনো আমলের আদেশ করুন। তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই। আমি পুনরায় বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে কোনো নেক আমলের কথা বলুন, তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা এর কোনো সমতুল্য কিছু নেই।

সুতরাং রমজানের গুরুত্ব অপরিসীম। রমজান মাসে রোজা রাখা হলো সবচেয়ে বড় ইবাদত। এর পরে আরো অনেক ইবাদত রয়েছে।

যথা, কুরআন তেলওয়াত, দান-সদকা, সৎ কাজের আদেশ, নফল নামাজ ইত্যাদি।

রমজান মাসে আমাদের সকল খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

মোবাইল, ইন্টারনেট, টিভি ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত ডিভাইস অহেতুক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

অনেকে আছে, রমজান মাসে অনেক সময় হাতে থাকায় মুভি, নাটক, ভিডিও, গান শোনা, গেম খেলায় লিপ্ত হয়ে যাই। এসকল গর্হিত কাজ থেকে রমজানে আমাদের অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

রমজান মাসকে আরো অর্থবহ করে তুলে সংগ্রহ করতে পারেন শায়েখ আহমাদুল্লাহ হাফিঃ কর্তৃক প্রকাশিত রমজান প্ল্যানার বইটি। এটি রকমারি অথবা ওয়াফিলাইফ থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।

রমজানের গুরুত্ব

আল্লাহ আমাদেরকে রমজান মাসে বেশি বেশি আমল করার ও সৎ কাজ করার তাওফিক দান করুন।

আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক কেমন হবে? পড়ুন

রোজা কী ?

রোজা বা সওম হলো, আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত একটি ইবাদত। এটি পানাহার না করে থাকতে হয়। সুবহে সাদিক থেকে সুর্যান্ত পর্যন্ত একজন মুসলমান পানাহার না করে থাকে

রোজা কাদের উপর ফরজ ?

প্রত্যেক বালেগ ও সজ্ঞান নর-নারীর উপর সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখা ফরজ। মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তির উপর রোজা রাখা ফরজ নয়। তদ্রুপ পাগলের উপর, শিশুর উপর রোজা ফরজ নয়

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top