সাম্যতা বা সমতা। এটি থাকার মধ্যেই প্রকৃত সুখ রয়েছে” এমনটাই বলে থাকে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ভাইয়েরা। সকলেই কেন একরকম নয়, এটা ভেবে অনেকেই আক্ষেপ করেন।

কেউ কেউ স্রষ্টার প্রতি অভিযোগও তোলেন যে, কেন আল্লাহ কাউকে গরিব বা কাউকে ধনী বানায়? কেন সকলকে একরকম সম্পদ দেয় না?

আল্লাহ তা’আলা সূরা আসরের ১-৩ নং আয়াতে বলেন,

وَ الۡعَصۡرِ ۙ  اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَفِیۡ خُسۡرٍ ۙ اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ تَوَاصَوۡا بِالۡحَقِّ ۬ۙ وَ تَوَاصَوۡا بِالصَّبۡرِ

সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু তারা নয় যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় এবং পরস্পরকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেয়।

উপরোক্ত সূরার আয়াতগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করলে আমরা অনেকগুলো বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাই। আল্লাহ শুরুতেই সময়ের কসম বা শপথ করেছেন।

সময় হলো, পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। সময় ধরেই আমরা কাজ করি। আমাদের জীবনও সময় ধরে অতিবাহিত হয়।

মুমিন ব্যক্তি কেন অমরত্ব বা আজিবন বেঁচে থাকতে চায়, পড়ুন

এরপর আল্লাহ বলছেন, মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। উক্ত কথা দ্বারা তিনি বলে দিচ্ছেন, অবশ্যই আপনি কিংবা আমি ক্ষতির মধ্যে রয়েছি।

আমরা যতই সম্পদ অর্জন করি, কিংবা যতই গরীব হই, আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থ। মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ শুনে যেন বান্দা নিরাশ না হয়ে যায়, তাই আল্লাহ পরের আয়াতে বলছেন।

কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। তার মানে আমরা বুঝতে পারলাম, সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ নয়। কেউ কেউ সফল।

আর সফল হলো তারাই, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে ও দুনিয়াতে সৎকাজ করে। এরপরে আল্লাহ বলছেন, তারা পরষ্পরকে সত্যের উপদেশ দেয়

সত্য কি হতে পারে সুখী হওয়ার জন্য? আল্লাহর ফরজ পাঁচটি বিধানই হতে পারে প্রথমত সুখী হওয়ার প্রথম কারণ।

ঈমান আনার পর আপনি নামাজ ও রোজার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করতে পারবেন।

আর যদি আপনি সম্পদশালী হন, তাহলে আপনার উপর যাকাত ও হজ্জ্ব ফরজ হবে।

আর যদি না হন, তাহলে আপনার উপর ফরজ নয়। আয়াতের শেষে আল্লাহ বলছেন, তারা পরষ্পরকে ধৈর্য্যধারণের উপদেশ দেয়

যাকে আল্লাহ সম্পদ দেন নি, তার উচিৎ ধৈর্য্যধারণ করা। আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। এমন যেন না হয় যে,

সম্পদ না থাকায় আফসোস করছি অথবা আল্লাহকে দোষারোপ করছি।

সূরা বুরুজের ১১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَهُمۡ جَنّٰتٌ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ ۬ؕؑ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡکَبِیۡرُ

নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। এটাই বিরাট সফলতা।

এই আয়াতে কিন্তু সফলতার একটা মূলনীতি স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করবে, তারাই হলো সফল।

একজন মুসলমানের পরিবার কেমন হওয়া উচিৎ, পড়ুন

কারণ, তারা জান্নাতে যাবে। আর জান্নাত ই হলো সফলতার পুরষ্কার। দুনিয়াতে যতই সম্পদ থাকুক,

যদি জান্নাতে না যেতে পারে, তাহলে সবই বৃথা।

সূরা আরাফের ১০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

وَ لَقَدۡ مَکَّنّٰکُمۡ فِی الۡاَرۡضِ وَ جَعَلۡنَا لَکُمۡ فِیۡهَا مَعَایِشَ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَشۡکُرُوۡنَ

আমি তোমাদেরকে যমীনে প্রতিষ্ঠিত করেছি। আর সেখানে তোমাদের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করেছি। তবে তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর!

আমরা সারাদিন কাজকর্ম করে, দিনশেষে বাড়ি ফিরে গীবত ও দোষচর্চার আখড়া খুলে বসি। অমুকের বদনাম করি। তমুকের দোষ বর্ণনা করি।

অথচ আল্লাহ যে আপনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, রোগমুক্ত রেখেছেন, সে জন্য কোনো শুকরিয়া করি না। তাই আল্লাহ বলছেন,

তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। এটা খুবই ভয়াবহ কথা। বান্দা যদি স্রষ্টার কৃতজ্ঞতা আদায় না করে,

তাহলে সে কার কৃতজ্ঞতা আদায় করবে?

সূরা তাগাবুনের ১৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

اِنَّمَاۤ اَمۡوَالُکُمۡ وَ اَوۡلَادُکُمۡ فِتۡنَۃٌ ؕ وَ اللّٰهُ عِنۡدَهٗۤ اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ

তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষা বিশেষ। আর আল্লাহর নিকটই রয়েছে মহান প্রতিদান।

আমাদের যদি মনে হয়, কেন ই বা তিনি আমাকে এত সম্পদ দিয়েছেন বা এত সন্তান দিয়েছেন? তাহলে এই আয়াতটি হতে পারে, আমাদের আশার আলো।

পড়ুন: বৈবাহিক ধর্ষণ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে, এবং নাস্তিকদের অভিযোগ কি?

মুমিন ব্যক্তি দুনিয়াতে কখনো সুখের আশা করে না। খোদ নবীজি যেখানে সুখের আশা করেন নি,

সেখানে আমরা তার উম্মত হয়ে কিভাবে প্রকৃত সুখ আশা করতে পারি?

Abdur Rahman Al Hasan
Scroll to Top