নামাজ কি অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে?
ইসলামের ফরজ বিধানগুলোর অন্যতম একটি হলো সালাত তথা নামাজ। যাকে বলা হয়, ঈমান আনয়নের পর দ্বিতীয় ফরজ।
হাদীস শরীফে রয়েছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত। এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ্জ পালন করা এবং রমাযান মাসের সিয়াম পালন করা।
সহীহ: বুখারী ৮, মুসলিম ১৬
উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে, ঈমান আনয়নের পর মানুষের উপর সর্বপ্রথম নামাজ ফরজ হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিধান আরোপিত হয়।
আল্লাহ তাআলা তার বান্দার উপর প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। আর এই ৫ ওয়াক্ত নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করছেন, যারা নামাজ আদায় করে, তারা অশ্লীলতা থেকে মুক্ত থাকে।
এ প্রসঙ্গে সূরা আনকাবুতের ৪৫ নং আয়াতে বলেন,
اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ لَذِکۡرُ اللّٰهِ اَکۡبَرُ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ
তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা ভালোভাবেই জানেন।
২.
উক্ত আয়াতে নবীকে এবং সমগ্র উম্মতে মুহাম্মাদীকে কয়েকটা আদেশ করা হয়েছে। প্রথমত হলো, কুরআন তেলওয়াত করা।
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট অংশ তেলওয়াত করা। পাশাপাশি কুরআন হেফজ বা মুখস্ত করার চেষ্টা করা।
কারণ, এটি হলো একটি নেয়ামত। যা আল্লাহ সকলকে দেন না।
দ্বিতীয়ত আল্লাহ বলছেন, তোমরা সালাত তথা নামাজ কায়েম করো।
৫ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো মসজিদে গিয়ে পড়ো। ফরজ নামাজের আগে পরে সুন্নত, বিতির ও নফল আদায় করো।
তৃতীয়ত আল্লাহ আগের কথাটাকে জোর দিয়ে বলছেন, যদি তোমরা নামাজ কায়েম করো,
তাহলে অবশ্যই তোমরা অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত থাকবা।
من لم تنه صلاته عن الفحشاء والمنكر لم يزدد من الله إلا بعدًا
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত: যার সাল্লাত অশ্লীলতা ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখলো না, সে আল্লাহ হতে ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকে।
ইমরান ইবনে হুসাইন রা. হতে বর্ণিত: একবার রাসূল সা. কে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো।
তখন তিনি বললেন, যার সালাত তাকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখলো না, তার সালাত তথা নামাজ হয় নি।
হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত: একবার এক ব্যক্তি রাসূল সা. কে বললো, অমুক ব্যক্তি রাতে সালাত পড়ে এবং দিনে চুরি করে।
তখন রাসূল সা. বললেন, তার সালাত অচিরেই ঐ কাজ হতে তাকে বিরত রাখবে।
পড়ুন: আমার কথাও কি কুরআন আছে?!
আবুল আলীয়াহ রা. এই আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, সালাতের তিনটি গুণ রয়েছে।
যেই সালাতের মধ্যে তার একটিও না থাকে তাহলে তা প্রকৃতপক্ষে সালাত নয়।
১. ইখলাস তথা বিশুদ্ধ নিয়্যত।
২. আল্লাহর ভয় ও আল্লাহর যিকির।
৩. আল্লাহর কাজের আদেশ দান করে। আল্লাহর ভয় তাকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে।
সুতরাং আমাদের কয়েকটি কাজ করা উচিৎ। যা আমাদেরকে সালাতের মধ্যে এবং সালাতের বাহিরে অশ্লীল কাজ হতে বিরত রাখবে।
৩.
তা হলো, নিজেরা স্বেচ্ছায় গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা। অশালীন কথা বলা থেকে বিরত থাকা।
আপনার কি লজ্জা হবে না যে, আপনি নামাজও পড়েন আবার খারাপ কাজও করেন?
আমাদের বর্তমান সময়ে আমাদের ইন্টারনেটের ভুল ব্যবহার একটি মারাত্মক খারাপ কাজ বটে।
কোনো কারণ ছাড়াই আমারা ঘন্টার পর ঘন্টা ফেইসবুক বা ইউটিউবে পড়ে থাকি।
কখনো আমরা কারো সাথে কথা বলার সময় গালি দিয়ে কথা বলি। কখনো আমরা কোনো অশ্লীল ভিডিও দেখে পুলকিত অনুভব করি।
এসব কি একজন মুমিন মুসলমান করতে পারে? সে কি ভুলে গেছে তার স্রষ্টার কথা?
সূরা আনকাবুতের ২-৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنۡ یُّتۡرَکُوۡۤا اَنۡ یَّقُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا وَ هُمۡ لَا یُفۡتَنُوۡنَ. وَ لَقَدۡ فَتَنَّا الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ فَلَیَعۡلَمَنَّ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ صَدَقُوۡا وَ لَیَعۡلَمَنَّ الۡکٰذِبِیۡنَ. اَمۡ حَسِبَ الَّذِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ السَّیِّاٰتِ اَنۡ یَّسۡبِقُوۡنَا ؕ سَآءَ مَا یَحۡکُمُوۡنَ. مَنۡ کَانَ یَرۡجُوۡا لِقَآءَ اللّٰهِ فَاِنَّ اَجَلَ اللّٰهِ لَاٰتٍ ؕ وَ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ
মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আমিতো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম; আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা সত্যবাদী ও কারা মিথ্যাবাদী। যারা মন্দ কাজ করে তারা কি মনে করে যে, তারা আমার আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে? তাদের সিদ্ধান্ত কত মন্দ! যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ কামনা করে সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহর নির্ধারিত কাল আসবেই। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
তথ্যসুত্র
তাফসীরে ইবনে কাসীর। সূরা আনকাবুত অধ্যায়