উসামার বাহিনী ও ওমরের মতামত

উসামার বাহিনী ও ওমরের মতামত – নবীজির ইন্তিকালের পর হযরত আবু বকর খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন।

এতদিন যেসব মুনাফিকরা লোক দেখানোর জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছিল, তারা ভাবলো ইসলামের শক্তি শেষ হয়ে গেছে।

তাই তারা এক এক করে বিদ্রোহ করতে শুরু করলো। এই বিদ্রোহী শ্রেণীকে কয়েকভাগে ভাগ করা যায়।

প্রথমত: মিথ্যা নবুয়তের দাবী করা।

দ্বিতীয়ত: যাকাত আদায়ে অস্বীকৃতি জানানো।

তৃতীয়ত: ইরতিদাদ বা মুরতাদ হয়ে যাওয়া।

উসামা রাঃ এর বাহিনী প্রেরণ – উসামার বাহিনী ও ওমরের মতামত

নবীজির ইন্তিকালের পূর্বেই হযরত যায়েদ বিন হারিসা রাঃ এর পুত্র উসামা বিন যায়েদ রাঃ এর নেতৃত্বে একদল বাহিনী গঠন করলেন।

তিনি এই বাহিনীকে রোমানদের বিরুদ্ধে পাঠানোর মনস্থ করলেন। যখন এই বাহিনীর রওয়ানা হওয়ার কথা ছিল তখনই নবীজি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

হযরত উসামা রাঃ সেনাবাহিনী নিয়ে মদীনার বাহিরে অবস্থান করছিলেন এবং নবীজির সুস্থ হওয়ার অপেক্ষা করছিলেন।

এর মধ্যেই নবীজি সাঃ ১২ রবিউল আউয়ালে ইন্তিকাল করেন। এরপর খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন হযরত আবু বকর রাঃ।

তিনি নবীজির ইচ্ছানুযায়ী, প্রথমেই উসামা রাঃ এর বাহিনীকে রোমানদের বিরুদ্ধে পাঠানোর মনস্থ করলেন। যখন আবু বকর রাঃ এই ঘোষণা দিলেন তখন বেশ কিছু সাহাবী ভিন্নমত পোষণ করলেন।

কারণ, তখন উসামা রাঃ এর বয়স ছিল ১৭ বছরের একটু বেশি। অনেকেই বলছিল, তার থেকে বড় ও অভিজ্ঞ কাউকে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করতে।

সাহাবারা আবু বকর রাঃ এর প্রধান উপদেষ্টা ওমর রাঃ এর নিকট গিয়ে এই মত পেশ করলেন। আর তাকে আবু বকরের নিকট পাঠালেন।

হযরত আবু বকর রাঃ এই প্রস্তাব শুনে এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে, তিনি ওমর রাঃ এর দাঁড়ি ধরে বললেন,

হে খাত্তাবের পুত্র! রাসূল তো নিজেই উসামাকে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেছেন। আর তুমি কিনা রাসূলের নিযুক্ত সেনাপ্রধানকে পদচ্যুত করতে চাও?

ওমরের ব্যথ মনোরথে ফেরা – উসামার বাহিনী ও ওমরের মতামত

হযরত ওমর রাঃ তখন অপমানিত হয়ে আবু বকর রাঃ এর নিকট হতে আসলেন। বাহিরে সাহাবারা ওমরের জন্য অপেক্ষা করছিল।

তারা জিজ্ঞাসা করলো, কিছু কি করতে পেরেছেন?

ওমর রাঃ তখন রেগে গিয়ে বললেন, যাও ভাগো এখান থেকে। তোমাদের জন্য আমি আল্লাহর রাসূলের খলিফার কাছে কিভাবেই না লজ্জিত হলাম!

ওসামা রাঃ এর বাহিনীর যাত্রা

আবু বকর রাঃ ওসামার বাহিনীকে  প্রস্তুত করলেন। তখন মদীনার চারপার্শ্বে বিদ্রোহীরা জোট করছিল। অনেকেই এই আশংকা করেছেন যে,

উসামার বাহিনী যাওয়ার পর মদীনা অরক্ষিত হয়ে পড়বে। তাই পরে প্রেরণ করা উচিৎ। আবু বকর রা. বুদ্ধিদ্বীপ্তভাবে এই সমস্যার সমাধান করলেন।

উক্ত বাহিনীকে প্রেরণের সময় আবু বকর রাঃ তাদের সাথে কিছুদূর পর্যন্ত গেলেন। তখন আবু বকর রাঃ পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন।

সেনাপ্রধান ওসামা রাঃ ঘোড়ার পিঠে ছিলেন। উসামা রা. তখন বললেন, হে আল্লাহর রাসূলের খলিফা! আপনি বাহনে উঠুন। অন্যথায় আমি নেমে যাই।

আবু বকর রাঃ বললেন, না। তুমি বাহনেই থাক। আমি যদি তোমাদের সাথে অগ্রসর হই, তাহলে হয়তো আমি কিছুটা হলেও সওয়াবের ভাগিদার হবো।

ওমর রাঃ কে রাখার অনুরোধ

উক্ত বাহিনীতে হযরত রাঃ সাধারণ সৈন্য হিসেবে ছিলেন। তখন আবু বকর রাঃ উসামা রাঃ কে বললেন, যদি তুমি চাও তাহলে ওমরকে আমার কাছে রেখে যাও।

কারণ, তাকে আমার প্রয়োজন আছে। উসামা রাঃ তৎক্ষণাত অনুমতি দিয়ে দিলেন।

হিরাক্লিয়াসের নিকট সংবাদ ও তার পলায়ন

হিরাক্লিয়াস সে সময় শামের সীমান্তে বাহিনী নিয়ে অবস্থান করছিল। সে চাচ্ছিল, অতর্কিতভাবে মুসলমানদের উপর হামলা করে মদীনা দখল করে নেয়া।

উসামার বাহিনী শামের দিকে অগ্রসর হওয়ার হওয়ার পর গোয়েন্দাদের মাধ্যমে হিরাক্লিয়াস  একইসাথে নবীজির মৃত্যুর সংবাদ ও উসামার বাহিনীয় অগ্রসর হওয়ার কথা জানতে পারলেন।

হিরাক্লিয়াস তখন ভয় পেয়ে বললো, এরা কেমন লোক যে, একদিকে তাদের নবী ইন্তিকাল করেছে। অন্যদিকে তারা আমাদের দিকে তেড়ে আসছে?

হিরাক্লিয়াস তখনই তড়িগড়ি করে তার রাজ্যের মধ্যে পাালিয়ে যায়। উসামা রাঃ প্রায় ২০ দিন শামের সীমান্তে বাহিনী নিয়ে অবস্থান করেন।

এরপর তিনি বিজয়ীবেশে মদীনায় আগমন করেন। আবু বকর রাঃ তাকে অভ্যর্থনা জানান।

তথ্যসুত্র

জীবন ও কর্ম: উমর রা.। পৃষ্ঠা ১৪৬-১৪৮

আবু বকর রা. জীবনী। পৃষ্ঠা ২৫৫-২৭৭

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খন্ড ৩। পৃষ্ঠা ৪৫-৪৯

বাহ্যিক লিংক থেকে পড়ুন

বাইতুল মামুর কোথায় অবস্থিত: পড়ুন

মুআবিয়া রা. কি ইসলাম বিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেন? পড়ুন

হযরত মারিয়া কিবতিয়া রা. ও রাসূলের নিকট উপহার

উসামা রাঃ কে কখন রাসূল সাঃ সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেছিলেন?

রাসুলের ইন্তিকালের পূর্বে রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ‍উসামা রাঃ কে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেছিলেন।

উমর রাঃ কেন উসামার নেতৃত্বের বিরোধিতা করেছিলেন?

অনেক সাহাবারাই চাচ্ছিলেন যে, বড় বড় ও অভিজ্ঞ সাহাবারা থাকতে উসামার পরিবর্তে যেন তাদেরকে সেনাপ্রধান করা হয়। তাই উমর রাঃ এই প্রস্তাব নিয়ে আবু বকরের নিকট গিয়েছিলেন। কিন্তু আবু বকর রাঃ তা গ্রহণ করেন নি

Scroll to Top