জিহাদ সম্পর্কিত আয়াত ও হাদিস – জিহাদ হলো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি মহান আল্লাহর ফরজ বিধান এবং পৃথিবীতে সত্যের বাণী পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম।
জিহাদের বিষয়ে কুরআন-হাদীস ও ফিকহের কিতাবে যা বর্ণিত আছে, সেগুলোকে আমরা এক মলাটে তথা এক পেজে আনার চেষ্টা করেছি বাংলাভাষী মানুষদের জন্য।
বর্তমানে জিহাদ নিয়ে অনেকে অনেক প্রোপাগান্ডা ছড়ায়। কেউ কেউ আছে, আলেমদেরকে না জিজ্ঞাসা করেই কুরআনের কোনো ভুল ব্যাখ্যা বুঝে বসে থাকে।
তাই আপনি নিম্নের আয়াত-হাদীস ও মাসআলা পড়ার পর যদি কোনো বিধান সঠিকভাবে না বুঝেন তাহলে নিকটস্থ আলেমদের জিজ্ঞাসা করুন অথবা আমাদের ইমেইল করুন এখানে।
জিহাদ সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত
সূরা আলে ইমরানের ১৬৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَ لَا تَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ قُتِلُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اَمۡوَاتًا ؕ بَلۡ اَحۡیَآءٌ عِنۡدَ رَبِّهِمۡ یُرۡزَقُوۡنَ
যারা আল্লাহর পথে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে, তুমি তাদেরকে মৃত মনে করো না। বরং তারা তো তাদের রবের নিকট জীবিত। এমনকি তাদেরকে রিযিকও দেয়া হয়।
কুরআনের সূরা আলে-ইমরানের ১৫৬-১৫৮ নং আয়াতে আছে,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ قَالُوۡا لِاِخۡوَانِهِمۡ اِذَا ضَرَبُوۡا فِی الۡاَرۡضِ اَوۡ کَانُوۡا غُزًّی لَّوۡ کَانُوۡا عِنۡدَنَا مَا مَاتُوۡا وَ مَا قُتِلُوۡا ۚ لِیَجۡعَلَ اللّٰهُ ذٰلِکَ حَسۡرَۃً فِیۡ قُلُوۡبِهِمۡ ؕ وَ اللّٰهُ یُحۡیٖ وَ یُمِیۡتُ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা কুফরী কাজ করেছে এবং তারা তাদের ভাইদেরকে বলেছে – যখন তারা সফরে বের হয়েছিল অথবা তারা ছিল যোদ্ধা (অতঃপর নিহত হয়েছিল) – ‘যদি তারা আমাদের কাছে থাকত, তারা তারা মরতো না এবং তাদেরকে হত্যা করা হত না’। আল্লাহ তা তাদের অন্তরকে আক্ষেপে পরিণত করেন এবং আল্লাহ জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।
وَ لَئِنۡ قُتِلۡتُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اَوۡ مُتُّمۡ لَمَغۡفِرَۃٌ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَحۡمَۃٌ خَیۡرٌ مِّمَّا یَجۡمَعُوۡنَ
যদি তোমরা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হও কিংবা মৃত্যুবরণ কর, তবে তারা যা সঞ্চয় করে তার চেয়ে আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা অতি উত্তম।
وَ لَئِنۡ مُّتُّمۡ اَوۡ قُتِلۡتُمۡ لَاِالَی اللّٰهِ تُحۡشَرُوۡنَ
তোমাদের মৃত্যু হলে অথবা নিহত হলে, আল্লাহর কাছে তোমাদের সকলকে অবশ্যই একত্রিত করা হবে।
সূরা বাকারার ২১৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الۡقِتَالُ وَ هُوَ کُرۡهٌ لَّکُمۡ ۚ وَ عَسٰۤی اَنۡ تَکۡرَهُوۡا شَیۡئًا وَّ هُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ۚ وَ عَسٰۤی اَنۡ تُحِبُّوۡا شَیۡئًا وَّ هُوَ شَرٌّ لَّکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ
জিহাদের বিধান তোমাদের জন্য ফরজ করা হলো। যদিও এটা তোমাদের কাছে নিতান্তই অপছন্দনীয়। কিন্তু তোমরা যেটি পছন্দ কর না, হতে পারে সেটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর তোমরা যেটি পছন্দ কর, হতে পারে তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর জিনিষ। আল্লাহ যা জানেন, তোমরা তা জান না।
কুরআনের সূরা আলে ইমরানের ১৭১-১৭৫ নং আয়াতে আল্লাহ ওহুদ যুদ্ধের পরবর্তী সময়ের কথা নিয়ে ও নবীজির হারমাউল আসাদ পর্যন্ত অগ্রসর হওয়া নিয়ে বলেন,
یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ بِنِعۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ فَضۡلٍ ۙ وَّ اَنَّ اللّٰهَ لَا یُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ
তারা আল্লাহর নিকট হতে অনুগ্রহ ও নি‘আমাত লাভ করার কারণে আনন্দিত হয়। আর এ জন্য যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসীগণের প্রতিদান নষ্ট করেন না।
اَلَّذِیۡنَ اسۡتَجَابُوۡا لِلّٰهِ وَ الرَّسُوۡلِ مِنۡۢ بَعۡدِ مَاۤ اَصَابَهُمُ الۡقَرۡحُ ؕۛ لِلَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوۡا مِنۡهُمۡ وَ اتَّقَوۡا اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ
যারা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছে যখমপ্রাপ্ত হওয়ার পরও, তাদের মধ্য থেকে যারা সৎকর্ম করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।
لَّذِیۡنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدۡ جَمَعُوۡا لَکُمۡ فَاخۡشَوۡهُمۡ فَزَادَهُمۡ اِیۡمَانًا ٭ۖ وَّ قَالُوۡا حَسۡبُنَا اللّٰهُ وَ نِعۡمَ الۡوَکِیۡلُ
যাদেরকে মানুষেরা বলেছিল যে, ‘নিশ্চয় লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় কর’। কিন্তু তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক’!
فَانۡقَلَبُوۡا بِنِعۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ فَضۡلٍ لَّمۡ یَمۡسَسۡهُمۡ سُوۡٓءٌ ۙ وَّ اتَّبَعُوۡا رِضۡوَانَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ ذُوۡ فَضۡلٍ عَظِیۡمٍ
অতঃপর তারা ফিরে এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিআমত ও অনুগ্রহসহ। কোন মন্দ তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছিল। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।
اِنَّمَا ذٰلِکُمُ الشَّیۡطٰنُ یُخَوِّفُ اَوۡلِیَآءَهٗ ۪ فَلَا تَخَافُوۡهُمۡ وَ خَافُوۡنِ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ
এ লোকেরা হচ্ছে শয়তান, তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়। তোমরা তাদেরকে ভয় করো না। আমাকেই ভয় কর, যদি তোমরা মু’মিন হও।
সূরা নিসার ৭১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا خُذُوۡا حِذۡرَکُمۡ فَانۡفِرُوۡا ثُبَاتٍ اَوِ انۡفِرُوۡا جَمِیۡعًا
হে মুমিনগণ! তোমরা সতর্কতা অবলম্বন কর। এরপর দলে দলে অথবা বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হও। কিংবা একসঙ্গে সকলে মিলে অগ্রসর হও। [1]
কুরআনের সূরা নিসার ৭২-৭৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَ اِنَّ مِنۡکُمۡ لَمَنۡ لَّیُبَطِّئَنَّ ۚ فَاِنۡ اَصَابَتۡکُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ قَالَ قَدۡ اَنۡعَمَ اللّٰهُ عَلَیَّ اِذۡ لَمۡ اَکُنۡ مَّعَهُمۡ شَهِیۡدًا
আর তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছে, যে অবশ্যই বিলম্ব করবে। সুতরাং তোমাদের কোন বিপদ আপতিত হলে সে বলবে, ‘আল্লাহ আমার উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, আমি তাদের সাথে উপস্থিত ছিলাম না’।
وَ لَئِنۡ اَصَابَکُمۡ فَضۡلٌ مِّنَ اللّٰهِ لَیَقُوۡلَنَّ کَاَنۡ لَّمۡ تَکُنۡۢ بَیۡنَکُمۡ وَ بَیۡنَهٗ مَوَدَّۃٌ یّٰلَیۡتَنِیۡ کُنۡتُ مَعَهُمۡ فَاَفُوۡزَ فَوۡزًا عَظِیۡمًا
আর যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ হয়, তবে যেন তোমাদের ও তাদের মধ্যে কোন প্রকারের সম্পর্ক ছিল না, এমনিভাবে অবশ্যই বলে উঠবে, ‘আফসোস! যদি আমিও তাদের সঙ্গে থাকতাম তাহলে তো মহা সাফল্য লাভ করতাম!
সূরা নিসার ৭৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
فَلۡیُقَاتِلۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ الَّذِیۡنَ یَشۡرُوۡنَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا بِالۡاٰخِرَۃِ ؕ وَ مَنۡ یُّقَاتِلۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ فَیُقۡتَلۡ اَوۡ یَغۡلِبۡ فَسَوۡفَ نُؤۡتِیۡهِ اَجۡرًا عَظِیۡمًا
যারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিক্রি করে দিতে চায় তারা যেন আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করে। আর যে আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করবে সে নিহত হোক কিংবা বিজয়ী, অচিরেই আমি তাকে দেব মহা পুরস্কার।
কুরআনের সূরা নিসার ৭৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَ مَا لَکُمۡ لَا تُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ الۡمُسۡتَضۡعَفِیۡنَ مِنَ الرِّجَالِ وَ النِّسَآءِ وَ الۡوِلۡدَانِ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَخۡرِجۡنَا مِنۡ هٰذِهِ الۡقَرۡیَۃِ الظَّالِمِ اَهۡلُهَا ۚ وَ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ وَلِیًّا ۚۙ وَّ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ نَصِیۡرًا
তোমাদের কী হল, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী এবং শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই জনপদ থেকে বের করুন। এখানের অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারীও নির্ধারণ করুন।’
সূরা আনফালের ১৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا لَقِیۡتُمُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا زَحۡفًا فَلَا تُوَلُّوۡهُمُ الۡاَدۡبَارَ
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা বিশাল বাহিনী নিয়ে কাফিরদের মুখোমুখি হবে তখন তাদের থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো না।
কুরআনের সূরা আনফালের ২৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّمَاۤ اَمۡوَالُکُمۡ وَ اَوۡلَادُکُمۡ فِتۡنَۃٌ ۙ وَّ اَنَّ اللّٰهَ عِنۡدَهٗۤ اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ
জেনে রাখ, তোমাদের এই ধন-সম্পদ আর সন্তান- সন্ততি হচ্ছে পরীক্ষার সামগ্রী মাত্র। (এ পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবে তাদের জন্য) আল্লাহর নিকট তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।
সূরা আনফালের ৪৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا لَقِیۡتُمۡ فِئَۃً فَاثۡبُتُوۡا وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
হে মুমিনগণ, যখন তোমরা কোন শত্রুদলের মুখোমুখি হও তখন অটল ও অবিচল থাক। আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হও।
কুরআনের সূরা তাওবার ১১১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
اِنَّ اللّٰهَ اشۡتَرٰی مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَنۡفُسَهُمۡ وَ اَمۡوَالَهُمۡ بِاَنَّ لَهُمُ الۡجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ ۟ وَعۡدًا عَلَیۡهِ حَقًّا فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ وَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِعَهۡدِهٖ مِنَ اللّٰهِ فَاسۡتَبۡشِرُوۡا بِبَیۡعِکُمُ الَّذِیۡ بَایَعۡتُمۡ بِهٖ ؕ وَ ذٰلِکَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান-মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে অনন্তকালের জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। আর তারা শত্রুকে মারে ও নিজেরাও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল এবং কুরআনে এ সম্পর্কে ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর চেয়ে অধিক দায়িত্বশীল আর কে হতে পারে? সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে যেই বিনিময় করেছ, সেই বিনিময়ের জন্য আনন্দিত হও। কারণ সেটাই মহাসাফল্য।
জিহাদ সম্পর্কিত নবীজির কিছু হাদীস
সহীহ বুখারীর ২৫৯১ নং হাদীসে রয়েছে,
قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ ـ رضى الله عنه ـ سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَىُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ قَالَ ” الصَّلاَةُ عَلَى مِيقَاتِهَا ”. قُلْتُ ثُمَّ أَىٌّ. قَالَ ” ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ ”. قُلْتُ ثُمَّ أَىٌّ قَالَ ” الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ”.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, ’ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন কাজটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন, ’সময়মত সালাত (নামাজ) আদায় করা। আমি বললাম, এরপর কোনটি? তিনি বলেন, ‘পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করা।’ আমি বললাম, ’অতঃপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ’আল্লাহর পথে জিহাদ।’
হাদীসের কিতাবে সহীহ বুখারীর ২৫৯৫ নং হাদীসে রয়েছে,
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ حَدَّثَنِي عَطَاءُ بْنُ يَزِيدَ اللَّيْثِيُّ، أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ ـ رضى الله عنه ـ حَدَّثَهُ قَالَ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَىُّ النَّاسِ أَفْضَلُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” مُؤْمِنٌ يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ ”. قَالُوا ثُمَّ مَنْ قَالَ ” مُؤْمِنٌ فِي شِعْبٍ مِنَ الشِّعَابِ يَتَّقِي اللَّهَ، وَيَدَعُ النَّاسَ مِنْ شَرِّهِ ”.
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজিকে জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষের মধ্যে কে উত্তম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেই মুমিন যে নিজ জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। সাহাবীগণ বললেন, তারপর কে? তিনি বললেন, সেই মুমিন যে, পাহাড়ের কোন গুহায় অবস্থান করে আল্লাহকে ভয় করে এবং নিজ অনিষ্ট থেকে অন্য লোকদেরকে নিরাপদে রাখে।
সহীহ বুখারীর ২৬০৪ নং হাদীসে রয়েছে,
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْلاَ أَنَّ رِجَالاً مِنَ الْمُؤْمِنِينَ لاَ تَطِيبُ أَنْفُسُهُمْ أَنْ يَتَخَلَّفُوا عَنِّي، وَلاَ أَجِدُ مَا أَحْمِلُهُمْ عَلَيْهِ، مَا تَخَلَّفْتُ عَنْ سَرِيَّةٍ تَغْزُو فِي سَبِيلِ اللَّهِ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوَدِدْتُ أَنِّي أُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ أُحْيَا، ثُمَّ أُقْتَلُ ثُمَّ أُحْيَا، ثُمَّ أُقْتَلُ ثُمَّ أُحْيَا، ثُمَّ أُقْتَلُ ”.
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, যদি মুমিনদের এমন একটি দল না থাকত, যারা জিহাদ থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করে না এবং যাদের সকলকে সাওয়ারী দিতে পারব না বলে আশংকা করতাম, তাহলে যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছে, আমি সেই ক্ষুদ্র দলটির সঙ্গী হওয়া থেকে কখনোই বিরত থাকতাম না। সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, আমি পছন্দ করি আমাকে যেন আল্লাহর রাস্তায় শহীদ করা হয়। এরপর আবার জীবিত করা হয়, এরপর শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়। তারপর আবার জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়।
সূনানে আবু দাউদ শরীফের ২৪৭৬ নং হাদীসে রয়েছে,
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ مُطَرِّفٍ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ عَلَى مَنْ نَاوَأَهُمْ حَتَّى يُقَاتِلَ آخِرُهُمُ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ ” .
ইমরান ইবন হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে একটি দল সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদের দুশমনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের উপর জয়ী হবে। অবশেষে তাদের শেষদলটি কুখ্যাত প্রতারক দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে।
আবু দাউদের ২৪৭৮ নং হাদীসে রয়েছে,
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، أَنَّ رَجُلاً، قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ائْذَنْ لِي فِي السِّيَاحَةِ . قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم “ إِنَّ سِيَاحَةَ أُمَّتِي الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ تَعَالَى ” .
হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি নবীজীকে বলল, হে আল্লাহ রাসূল! আমাকে ইবাদতের উদ্দেশ্যে বনবাসে যাওয়ার অনুমতি দিন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, আমার উম্মাতের জন্য (বনবাস করে ইবাদত করার প্রয়োজন নেই।) মহান আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাই বড় ইবাদতের শামিল।
সুনানে আবু দাউদের ২৪৮২ নং হাদীসে রয়েছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ حَدَّثَتْنِي أُمُّ حَرَامٍ بِنْتُ مِلْحَانَ، أُخْتُ أُمِّ سُلَيْمٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ عِنْدَهُمْ فَاسْتَيْقَظَ وَهُوَ يَضْحَكُ . قَالَتْ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا أَضْحَكَكَ قَالَ ” رَأَيْتُ قَوْمًا مِمَّنْ يَرْكَبُ ظَهْرَ هَذَا الْبَحْرِ كَالْمُلُوكِ عَلَى الأَسِرَّةِ ” . قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ . قَالَ ” فَإِنَّكِ مِنْهُمْ ” . قَالَتْ ثُمَّ نَامَ فَاسْتَيْقَظَ وَهُوَ يَضْحَكُ . قَالَتْ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا أَضْحَكَكَ فَقَالَ مِثْلَ مَقَالَتِهِ . قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ . قَالَ ” أَنْتِ مِنَ الأَوَّلِينَ ” . قَالَ فَتَزَوَّجَهَا عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ فَغَزَا فِي الْبَحْرِ فَحَمَلَهَا مَعَهُ فَلَمَّا رَجَعَ قُرِّبَتْ لَهَا بَغْلَةٌ لِتَرْكَبَهَا فَصَرَعَتْهَا فَانْدَقَّتْ عُنُقُهَا فَمَاتَتْ .
আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মে সুলায়মের ভগ্নি উম্মে হারাম বিনত মিলহান (রাঃ) (আমার খালা) আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট (ঘরে) নিদ্রা গিয়েছিলেন। তারপর হাসতে হাসতে নিদ্রা হতে জাগ্রত হলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কী কারণে আপনার হাসি পাচ্ছে।
তিনি বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম একদল লোক এই সমুদ্রপৃষ্ঠে নৌযানে আরোহণ করছে। যেমনভাবে রাজা-বাদশাহরা সিংহাসনে আরোহণ করে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ নিকট আমার জন্য দু’আ করূন যাতে আমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হতে পারি। নবীজি বলেন, নিশ্চই তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হবে। সাহাবী বললেন, এরূপ বলার পর তিনি আবার ঘুমিয়ে পড়লেন।
পুনরায় তিনি খুশিতে হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আবারও আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কী কারণে আপনার হাসি পাচ্ছে। উত্তরে তিনি পূর্ববত একই কথা ব্যক্ত করলেন। তিনি বলেন, আমি আবার আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার জন্য দু’আ করুন, যাতে আল্লাহ্ আমাকে তাদের মধ্যে শামিল করেন। তিনি বললেন, তুমি তো তাদের প্রথম সারিতেই থাকবে।
আনাস (রাঃ) বলেন, উবাদা ইবনুল সামিত (রাঃ) এর সাথে তাঁর (উম্মে হারামের) বিবাহ হয়েছিল। তিনি নৌবাহিনীতে যোগদান করে সমুদ্র-যুদ্ধে যাত্রা করার সময় তাঁকেও সঙ্গে নিলেন। যুদ্ধ শেষে যখন উবাদা (রাঃ) দেশে ফিরলেন, তখন উম্মে হারামের জন্য একটি খচ্চর নিকটে আনা হল। এর পিঠে চড়তেই খচ্চরটি তাঁকে ফেলে দিল। ফলে, তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে গেল এবং তিনি মারা গেলেন। (এরূপে নবীজির ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হল)।
আবু দাউদ শরীফের ২৫৩৩ নং হাদীসে রয়েছে,
حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ خَالِدٍ أَبُو مَرْوَانَ، وَابْنُ الْمُصَفَّى، قَالاَ حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ، عَنِ ابْنِ ثَوْبَانَ، عَنْ أَبِيهِ، يَرُدُّ إِلَى مَكْحُولٍ إِلَى مَالِكِ بْنِ يُخَامِرَ أَنَّ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ، حَدَّثَهُمْ أَنَّهُ، سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : ” مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فُوَاقَ نَاقَةٍ فَقَدْ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ، وَمَنْ سَأَلَ اللَّهَ الْقَتْلَ مِنْ نَفْسِهِ صَادِقًا ثُمَّ مَاتَ أَوْ قُتِلَ فَإِنَّ لَهُ أَجْرَ شَهِيدٍ ” . زَادَ ابْنُ الْمُصَفَّى مِنْ هُنَا : ” وَمَنْ جُرِحَ جُرْحًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ نُكِبَ نَكْبَةً فَإِنَّهَا تَجِيءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَأَغْزَرِ مَا كَانَتْ، لَوْنُهَا لَوْنُ الزَّعْفَرَانِ، وَرِيحُهَا رِيحُ الْمِسْكِ، وَمَنْ خَرَجَ بِهِ خُرَاجٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَإِنَّ عَلَيْهِ طَابَعَ الشُّهَدَاءِ ” .
মু’আয ইবন জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ রাস্তায় একটি উটের দু’বেলা দুধ দোহানের মধ্যবর্তী ফাঁকের সময়টুকুও যুদ্ধে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়। আর যে ব্যক্তি সত্যিকারভাবে আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর নিকট নিজের জান কুরবান করার প্রার্থনা জানায়, তারপর সে ঘরেই মারা যায় বা নিহত হয়, তার জন্য একজন শহীদের পুণ্য অবধারিত।
ইবন মুসাফফা বর্ণিত অত্র হাদীসে এরপর আরও অধিক বলা হয়েছে যে, এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে গিয়ে শত্রুর আঘাতে আহত হল অথবা অন্য কোন দুর্ঘটনার শিকার হল, তবে কিয়ামতের দিন উক্ত ক্ষতস্থান জাফরানের রং এর মত উজ্জল রং ধারণ করবে এবং তথা হতে মিশক আম্বরের সুগন্ধ ছড়াতে থাকবে। আর জিহাদরত অবস্থায় যার শরীরে ফোঁড়া, পাঁচড়া ইত্যাদি দেখা দেয় তার শরীরে শহীদের মোহর অংকিত হবে।
জিহাদের বিধি-বিধান
মেশকাতুল মাসাবীহের ৩৮০১ নং হাদীসে আছে,
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَنْ يَبْرَحَ هَذَا الدِّينُ قَائِمًا يُقَاتِلُ عَلَيْهِ عِصَابَةٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ حَتَّى تقوم السَّاعَة» . رَوَاهُ مُسلم
জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় এ দীন (ইসলামী জীবন বিধান) সর্বদা সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং একদল মুসলিম কিয়ামত দিবস পর্যন্ত এই দীনের জন্য সংগ্রাম করতে থাকবে।
(হাদীসের মান সহীহ)
জিহাদ ফরজে কেফায়া হিসেবে গন্য হবে। আর যদি তা একান্তই প্রয়োজন হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপ্রধান অর্থাৎ খলিফা আহবান করে, তাহলে তা ফরজে কেফায়া হিসেবে গন্য হবে।
ইমাম মুহাম্মাদ রহ. বলেন, জিহাদ হলো ওয়াজিব। তবে মুসলমানদেরকে অবকাশ দেয়া হয়েছে। যখন তার প্রয়োজন হবে, তখন তারা বের হবে।
অপ্রাপ্তবয়ষ্ক বালক, দাস ও স্ত্রী লোকদের উপর জিহাদ ফরজ নয়।
কেননা বালক ছোট, দাস মনিবের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল আর স্ত্রী স্বামীর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
অন্ধ, প্রতিবন্ধী, শারিরীকভাবে অক্ষম ব্যক্তির জন্য জিহাদ ফরজ নয়। কেননা তারা অক্ষম।
কিন্তু যদি শত্রুপক্ষ শহরে আক্রমণ করে তখন সকলের উপর জিহাদ ওয়াজিব হয়ে যাবে।
তখন বালক, দাস, স্ত্রী, প্রতিবন্ধী ও অক্ষম ব্যক্তিও জিহাদে অংশ নিবে।
মুজাহিদদের জন্য সাধারণ জনগণের থেকে যুদ্ধ-ট্যাক্স নেয়া মাকরুহ।
যদি বাইতুল মালে বা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে সম্পদ থাকে। আর যদি না থাকে, তাহলে ট্যাক্স নেয়া যাবে।
জিহাদে লড়াইয়ের প্রস্তুতি
মুসলিম বাহিনী যখন দারুল হরব বা যুদ্ধকবলিত এলাকায় প্রবেশ করে দুর্গ বা শহর অবরোধ করে, তখন তাদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিবে।
কেননা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, নবীজি সা. কোনো জাতি বা কওমকে ইসলামের দাওয়াত না দিয়ে যুদ্ধ করেন নি।
যদি তারা দাওয়াতে সাড়া দেয়, তাহলে আর লড়াই করতে হবে না। কেননা নবীজি সা. বলেছেন,
عن ابن عمر رضي الله عنهما ، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ( أمرت أن أقاتل الناس ، حتى يشهدوا أن لا إله إلا الله ، وأن محمدا رسول الله ، ويقيموا الصلاة ، ويؤتوا الزكاة ، فإذا فعلوا ذلك عصموا مني دماءهم وأموالهم إلا بحق الإسلام ، وحسابهم على الله تعالى ) رواه البخاري ومسلم .
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, আমাকে হত্যার আদেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই ও মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসূল। আর তারা নামাজ বা সালাত কায়েম করবে। যাকাত প্রদান করবে। যদি তারা তা করে, তাহলে ইসলামের হক ব্যতিত তাদের জান-মাল রক্ষা করা আমার উপর ওয়াজিব হয়ে যায়।
আর যদি তারা সাড়া দেয়া থেকে বিরত থাকে তাহলে তাদেরকে জিযিয়া বা কর প্রদানের জন্য আহবান করবে।
কিন্তু মুরতাদ ও আরবের মুর্তিপূজকদের থেকে জিযিয়ার বিধান নেই।
কারণ, তাদের থেকে জিযিয়া নেয়ার দ্বারা কোনো ফায়েদা হবে না। কেননা আল্লাহ সূরা ফাতহের ৪৮ নং আয়াতে বলেন,
قُلۡ لِّلۡمُخَلَّفِیۡنَ مِنَ الۡاَعۡرَابِ سَتُدۡعَوۡنَ اِلٰی قَوۡمٍ اُولِیۡ بَاۡسٍ شَدِیۡدٍ تُقَاتِلُوۡنَهُمۡ اَوۡ یُسۡلِمُوۡنَ ۚ فَاِنۡ تُطِیۡعُوۡا یُؤۡتِکُمُ اللّٰهُ اَجۡرًا حَسَنًا ۚ وَ اِنۡ تَتَوَلَّوۡا کَمَا تَوَلَّیۡتُمۡ مِّنۡ قَبۡلُ یُعَذِّبۡکُمۡ عَذَابًا اَلِیۡمًا
বেদুঈনদের মধ্যে যারা পেছনে রয়ে গিয়েছিল তাদেরকে বলো, ‘অবশ্যই তোমাদেরকে যুদ্ধ করতে ডাকা হবে খুবই শক্তিশালী এক জাতির বিরুদ্ধে। তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে অথবা তারা আত্মসমর্পণ করবে। তোমরা যদি সেটি মান্য কর তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দিবেন। আর যদি পিঠ ফিরিয়ে নাও যেমন তোমরা আগে পিঠ ফিরিয়ে নিয়েছিলে, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্টদায়ক শাস্তি দিবেন।
যদি অমুসলিমরা জিযিয়া বা কর দিতে সম্মত হয়, তাহলে তারা মুসলমানদের মতো যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পাবে।
আর মুসলমানরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
প্রস্তুতি
আলী রা. বলেন, তারা জিযিয়া দিয়েছে এ জন্য যে, তাদের রক্ত আমাদের রক্তের ন্যায় নিরাপদ হয়ে যায় এবং তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের ন্যায় নিরাপদ হয়ে যায়।
যাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে নি, তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার পর ই লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হবে। এর আগে নয়।
কেননা দাওয়াত প্রদানের মাধ্যমে তারা বুঝতে পারবে, আমরা তাদেরকে একত্ববাদের দিকে আহবান করছি। সম্পদ লুন্ঠনের জন্য তাদের নিকট আসি নি।
তখন যদি তারা ইসলাম কবুল করে নেয়, তাহলে তারা আমাদের ভাই হয়ে যাবে। আর যদি দাওয়াত কবুল না করে, তবেই তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে।
আর যদি কেউ দাওয়াত না দিয়ে লড়াই শুরু করে, তাহলে উক্ত মুসলমান গুনাহগার হবে।
তবে এতে কোনো ক্ষতিপূরণ আসবে না ইসলামী বিধি মোতাবেক। কারণ, তারা দ্বীন গ্রহণ করে নি কিংবা দারুল ইসলাম বা ইসলামী রাষ্ট্রে আশ্রয় নেয় নি।
আর যাদের নিকট পূর্বে দাওয়াত পৌঁছেছে তাদেরকে পূনরায় দাওয়াত দেয়া মুস্তাহাব। তবে তা ওয়াজিব নয়।
নবীজি সা. বনু মুস্তালিকের উপর অতর্কিত হামলা করেছিলেন।
ইমাম কুদুরী রহ. বলেন, যদি অমুসলিমরা দাওয়াত কবুল না করে, তাহলে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে এবং লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবে।
মুসলমানদের উচিৎ তারা যেন জিহাদের ময়দানে বিশ্বাস ভঙ্গ না করে এবং গনিমতের মাল চুরি না করে ও লাশ বিকৃত না করে।
সুনানে ইবনে মাজাহর ২৮৫৮ নং হাদীসে রয়েছে,
كان رسولُ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم إذا بعَث سَريَّةً قال اغزُوا بِسمِ اللهِ وفي سبيلِ اللهِ فقاتِلوا مَن كفَر باللهِ لا تغُلُّوا ولا تغدِروا ولا تُمثِّلوا ولا تقتُلوا وليدًا ولا امرأةً ولا شيخًا
যখন নবীজি সা. কোনো সারিয়্যায় পাঠাতেন অর্থাৎ সাহাবাদেরকে যুদ্ধে পাঠাতেন তখন তিনি বলতেন, তোমরা আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো, যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। তোমরা জিহাদ করো, বিশ্বাসঘাতকতা করো না, চুরি করো না, কারো অঙ্গহানি বা অঙ্গ বিকৃত করো না এবং শিশু, বৃদ্ধ ও মহিলাদের হত্যা করো না।
নিজের মুশরিক পিতাকে অগ্রসর হয়ে হত্যা করা মাকরুহ।
মুসলিম শাসক যদি কোনো সম্প্রদায়ের সাথে মুসলমানদের কল্যানের ভিত্তিতে সন্ধি করেন তাহলে তাতে কোনো দোষ নেই।
কেননা আল্লাহ সূরা আনফালের ৬১ নং আয়াতে বলেন,
وَ اِنۡ جَنَحُوۡا لِلسَّلۡمِ فَاجۡنَحۡ لَهَا وَ تَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ ؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ
যদি তারা সন্ধি করতে আগ্রহী হয়, তাহলে তুমিও তাদের সাথে সন্ধি করো। আর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করো। নিশ্চয় তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
[1] আয়াতের প্রথমাংশে জিহাদের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ এবং আয়াতের দ্বিতীয় অংশে জিহাদে অংশ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।