কুরআন জীবন্ত মুজিজা ও কিতাব । আল্লাহর কালাম । প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্যই আমাদের জন্য শিক্ষা। আমি শিক্ষা গ্রহণ করতে প্রস্তুত কি না, সেটা হলো বিষয়। কুরআন কারীম আমার জন্য হেদায়াতের পসরা সাজিয়ে রেখেছে। আমরা সাজিতে করে হেদায়াতের কিছু ফুল কুড়িয়ে নিতে পারি কি না দেখা যাক ।
(এক) আমি মানুষ । আমার চিন্তা ও ক্ষমতা সীমাবদ্ধ । কিন্তু আমি যার বান্দা তার ক্ষমতা অসীম । কল্পনাতীত। আমার দায়িত্ব যখন তিনি নিজ হাতে তুলে নেবেন, পৃথিবীর সমস্ত শক্তিকে আমার অধীনে নিয়োজিত করে দিবেন। আমার কাছে যা অসম্ভব মনে হয় সেটাকেই তিনি অনায়াসলব্ধ করে দিবেন। নাগালের চৌহদ্দিতে এনে দিবেন ।
সূরা সাবা, আয়াত নং ১০
وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا دَاوٗدَ مِنَّا فَضۡلًا ؕ یٰجِبَالُ اَوِّبِیۡ مَعَهٗ وَ الطَّیۡرَ ۚ وَ اَلَنَّا لَهُ الۡحَدِیۡدَ
আর অবশ্যই আমি আমার পক্ষ থেকে দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আমি আদেশ করলাম) হে পাহাড়-পর্বত ও পাখিরা! তোমরা দাউদের সাথে আমার তাসবীহ পড়ো (পবিত্রতা বর্ণনা করো)। আর আমি দাউদের জন্য লোহাকেও নরম করে দিয়েছিলাম।
রাব্বে কারীম চাইলে কী না হয়। তিনি চাইলে বনের পাখ-পাখালি পর্যন্ত অনুগত হয়ে যায়। মৌনি পাহাড় পর্যন্ত কল্যাণী হয়ে যায়। জড়পদার্থ শক্ত লোহাও নরম হয়ে যায় ।
(দুই) বান্দার কাজ হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে যাওয়া । তার প্রতিটি কথা, প্রতিটি কাজ হবে আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিমিত্তে।
সূরা নাহল, আয়াত ৯৭
مَنۡ عَمِلَ صَالِحًا مِّنۡ ذَکَرٍ اَوۡ اُنۡثٰی وَ هُوَ مُؤۡمِنٌ فَلَنُحۡیِیَنَّهٗ حَیٰوۃً طَیِّبَۃً ۚ وَ لَنَجۡزِیَنَّهُمۡ اَجۡرَهُمۡ بِاَحۡسَنِ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ
যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী হোক, আমি তাকে উত্তম জীবন দান করব এবং তারা পূর্বে যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।
আয়াতটা আমায় শিক্ষা দিয়েছে, আমি ভালো কাজ করলে, আল্লাহ আমাকে সুখ-শান্তি দান করবেন। আমার জীবনটাকে নিরাপদ করে দিবেন। আমাকে তার নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখবেন। আন্তরিক পরিচর্যায় লালন-পালন করবেন। যাবতীয় তিক্ততাকে মিষ্টতায় পরিণত করে দিবেন ।
(তিন) আমি আল্লাহর কাছে অনেক কিছুই চাই । কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি । মনেপ্রাণে দু’আ করি । মরিয়া হয়েই দু’হাত তুলি । হেঁচকি তুলে কেঁদে কেঁদে তার কাছে আর্জি জানাই! কিন্তু সাথে সাথে ফল পাই না!
সূরা নূর, আয়াত ১৯
وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ
আল্লাহ যা জানেন, তোমরা তা জান না।
আয়াতটা আমায় শিক্ষা দিয়েছে, আন্তরিক চাওয়াগুলো আমার নিজের ইচ্ছামতো পূরণ হবে না। কেন হবে না, সেটা আমার জানার দরকার নেই। আল্লাহ তা’আলা জানেন । তিনি বিশেষ কোনো হেকমতের কারণে চাওয়া পূরণ করতে বিলম্ব করছেন । আমার কাজ হলো, তার ওপর তাওয়াক্কুল করে নির্ভার হয়ে থাকা । নিশ্চিত্ত হয়ে যাওয়া। নিরাশ না হওয়া। কারণ, সবকিছু আল্লাহরই হাতে । তার নির্দেশ ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়বে না।
(চার) কম আর বেশ আমরা প্রায় সবাই ভালো কাজ করি । নেক আমল করি। আমলে সালেহ করি। গরীব-দুঃখী ভাইদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করি। প্রতিটি পরোপকারের সময় আমি মনে রাখব,
সূরা হুদ, আয়াত ২৯
اِنۡ اَجۡرِیَ اِلَّا عَلَی اللّٰهِ
আমার পারিশ্রমিকের দায়িত্ব তো শুধু আল্লাহর নিকট, অন্য কারো নিকট নয়।
আমি শিখতে পেরেছি, আমার ভালো কাজের প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা দিবেন । মানুষের কাছে বদলা পাওয়ার আশা করে বসে থাকা ঠিক নয় । শোভনও নয় । কেবল আল্লাহর সাথেই আমি নিজেকে জুড়ে রাখব । সব সময় আয়াতটা মাথায় রাখব ।
(পাঁচ) মাঝেমধ্যে ভীষণ কাতর হয়ে পড়ি। হতোদ্যম হয়ে পড়ি। নিজেকে সর্বহারা ভাবি। কিন্তু কেন…?
সূরা আনআম, আয়াত ৫৯
ومَا تَسْقُط مِن وَرَقَةٍ إِلا يَعْلَمُهَا
তাঁর (আল্লাহর) অবগতি ব্যতীত গাছ হতে একটি পাতাও ঝরে পড়ে না।
এ আমার গোপন অশ্রুর কথা তিনি জানেন । আমার হৃদয়ের রক্তক্ষরণের কথা তিনি জানেন । তবে আমার এত ভাবনা কিসের?
(ছয়) আশপাশের মানুষজন বৈরী ভাবাপন্ন? শত্রুতাপরায়ণ? আমি এগিয়ে গেলেও তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়? তারপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়?
সূরা তাওবা, আয়াত ১২৯
فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَقُلۡ حَسۡبِیَ اللّٰهُ
তারপরও যদি যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বলে দাও, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
পুরো বিশ্ব আমার বিরুদ্ধে চলে গেলেও পরোয়া কিসের? সারা বিশ্বের সমস্ত শক্তি একজোট হয়ে আমাকে হামলা করলেও পরোয়া কিসের? আল্লাহ আছেন না? আমার সবকিছু তারা ছিনিয়ে নিলেও, আমার পায়ের তলার মাটিও যদি তারা কেড়ে নেয়, কুছ পরোয়া নেহি! আল্লাহ তা’আলা এক মুহূর্তেই সব ফিরিয়ে দিতে পারেন!
(সাত) আমার দেহে এখন প্রাণ আছে। শরীরে তাকত আছে । চাইলে কাজকর্ম করতে পারি। মানুষ মৃত্যুর পর কী নিয়ে আক্ষেপ করবে, তা আল্লাহ তা’আলা আগেই আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন,
সূরা ফাজর, আয়াত ২৪
یَقُوۡلُ یٰلَیۡتَنِیۡ قَدَّمۡتُ لِحَیَاتِیۡ
সে বলবে, হায়! আমার এ জীবনের জন্য আমি যদি কিছু অগ্রিম পাঠাতাম!
পরে কী হতে পারে, তা আগেই জেনে গেলাম। সতর্ক হওয়ার সময় ও সুযোগ পেয়ে গেলাম । সংশোধন হয়ে যাওয়া খুবই জরুরী।
(আট) তিনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন । তিনিই আমার সবকিছুর মালিক । আমার উচিত সব সময় তার কথা ভাবা । তার যিকির করা । তার চিন্তায় বিভোর থাকা
সূরা কাহাফ, আয়াত ২৪
وَ اذۡکُرۡ رَّبَّکَ اِذَا نَسِیۡتَ وَ قُلۡ عَسٰۤی اَنۡ یَّهۡدِیَنِ رَبِّیۡ لِاَقۡرَبَ مِنۡ هٰذَا رَشَدًا
যখন তোমার প্রতিপালককে ভুলে যাও, তখন তুমি তোমার রবের যিকির কর এবং বল, আশা করি, আল্লাহ আমাকে এর চেয়েও নিকটবর্তী সত্য পথের হিদায়াত দেবেন।
আমি তার। তিনি আমার। তার স্মরণের মাঝেই আমার ইহজীবনের সার্থকতা । সময় পেলেই বলব,
-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
-সুবহা-নাল্লাহিল আযীম
-সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহি
-আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি
–আল্লা-হুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদ
(নয়) মানুষ তো! দুর্বলতা থাকবেই । না থাকাটাই অস্বাভাবিক । ভেঙে পড়বো কেন?
সূরা মারইয়াম, আয়াত ৪
قَالَ رَبِّ اِنِّیۡ وَهَنَ الۡعَظۡمُ مِنِّیۡ وَ اشۡتَعَلَ الرَّاۡسُ شَیۡبًا وَّ لَمۡ اَکُنۡۢ بِدُعَآئِکَ رَبِّ شَقِیًّا
যাকারিয়া (আ.) বলেছিল, ‘হে আমার রব! আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে গেছে এবং বার্ধক্যবশতঃ আমার মাথার চুলগুলো সাদা হয়ে গেছে। হে আমার রব, আপনার নিকট দো‘আ করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি’।
আমার যাবতীয় কষ্টের কথা আল্লাহর কাছে তুলে ধরব । তার কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে বলব । নিঃসংকোচে। অকপটে। কোনো লজ্জা করব না । আমার যত ধরনের দুর্বলতা আছে, সবই তার কাছে বলব । শারীরিক-মানসিক সব । তারপর নিশ্চিন্তে আমার সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা চালাতে থাকব! যাকারিয়া আ. বুড়ো হলেও হতোদ্যম হয়েছিলেন? না, হননি ।
ইব্রাহিম আ. কুরবানীর জন্য ইসমাইল আ. নাকি ইসহাক আ. কে নিয়েছিলেন? জানুন
(দশ) কাজটা করলাম মানুষের ভালোর জন্য । কিন্তু যার জন্য রক্ত দিলাম সেই বলে ‘খারাপ’ । যাদের জন্য সারা বিশ্বের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালাম, তারাই গালমন্দ করছে!
সূরা বাকারা, আয়াত ১৯৭
وَ مَا تَفۡعَلُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ یَّعۡلَمۡهُ اللّٰهُ ؕؔ وَ تَزَوَّدُوۡا فَاِنَّ خَیۡرَ الزَّادِ التَّقۡوٰی ۫ وَ اتَّقُوۡنِ یٰۤاُولِی الۡاَلۡبَابِ
তোমরা যা কিছু সৎকর্ম করবে, আল্লাহ তা জানেন। নিশ্চয় উত্তম পাথেয় হলো, তাকওয়া। আর হে জ্ঞানী ব্যক্তিরা! তোমরা আমাকে ভয় কর।
(উপরোক্ত আয়াত যদিও হজ্জ্বের বিধান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, কিন্তু কথাগুলো সর্বক্ষেত্রেই আমলযোগ্য।)
আমি ভালো কিছু করলে, আল্লাহর তা জানা আছে । লোকজনের কটুকাটবে আমার পরোয়া করার প্রয়োজন নেই । আমি আমার কাজ করে যাব ।
(এগার) কী হাহুতাশ! কী হাহাকার! কত চিৎকার! আহা কী হবে! হায় কীভাবে দিন গুজরান হবে?
সূরা লুকমান, আয়াত ৩৪
اِنَّ اللّٰهَ عِنۡدَهٗ عِلۡمُ السَّاعَۃِ ۚ وَ یُنَزِّلُ الۡغَیۡثَ ۚ وَ یَعۡلَمُ مَا فِی الۡاَرۡحَامِ ؕ وَ مَا تَدۡرِیۡ نَفۡسٌ مَّاذَا تَکۡسِبُ غَدًا ؕ وَ مَا تَدۡرِیۡ نَفۡسٌۢ بِاَیِّ اَرۡضٍ تَمُوۡتُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ
কিয়ামাতের জ্ঞান শুধু আল্লাহর নিকট রয়েছে, তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনিই জানেন যা জরায়ুতে রয়েছে। কেহ জানেনা আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেহ জানেনা কোন্ স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ব বিষয়ে অবহিত।
এ কত জনে কত কথা বলে! এসব পড়লে ভবিষ্যত অন্ধকার! মানুষের কাছে হাত পাততে হবে! দ্বীনের পথে চললে গরীব থাকতে হবে। আরে বাপু, তোমার ভবিষ্যৎ কি খুবই আলো ঝলমলে? তোমার নিজের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবো আগে! রিযিকের মালিক আল্লাহ! রিযিকের দায়িত্ব তার! তিনিই এসব নিয়ে ভাববেন! তুমি কেন আগ বাড়িয়ে খোদকারী করতে যাচ্ছো! আমার ভবিষ্যত নিয়ে আমি নিশ্চিন্ত! মুতমাইন । সুখী । আল্লাহ আমার রব, তিনিই আমার সব ।
কুরআনের আয়াত সংখ্যায় ভিন্নতা দেখা দেয় কেন?
(বারো) বিপদ যখন আসে, মনে হয় যেন চারদিক হুড়মুড় ভেঙে পড়ছে মাথার ওপর । আর বাঁচার উপায় নেই। নিস্তার নেই এই ধরা থেকে। এটা আমার মনের দুর্বলতা। চিন্তার অপরিপক্কতা। অদূরদর্শিতা ! বিপদ যার পক্ষ থেকে আসে, তিনিই তো বিপদ আবার দূর করবেন!
সূরা তাওবা, আয়াত ১১৭
الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡهُ فِیۡ سَاعَۃِ الۡعُسۡرَۃِ
যারা কঠিন মুহুর্তে নবীর সঙ্গে থেকেছিল।
তাবুক যুদ্ধের সময়টা ছিল খুবই কঠিন! প্রচণ্ড গরম! আবার ফল পাকার মওসুম! কিন্তু দুঃসময় কেটে যেতে কি বিলম্ব হয়েছিল? সুদিন ফিরে আসতে দেরি হয়নি। তবে আমি কেন বিপদে হাল ছেড়ে বসে থাকব! সংগ্রাম থেকে পিছিয়ে পড়ব? ধর-পাকড় চলছে, জেল-জুলুম চলছে, ব্যস পিছিয়ে যাবো? উঁহু, মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে!
(তেরো) চারদিকে ঘোর অমানিশা। ঘুটঘুটে অন্ধকার! দূরে কোথাও মিটমিটে বা টিমটিমে আলোও দেখা যাচ্ছে না! শুধু হতাশা আর হতাশা! আমি বুঝি নিরাশ হয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবো?
সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৭
وَ ذَاالنُّوۡنِ اِذۡ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ اَنۡ لَّنۡ نَّقۡدِرَ عَلَیۡهِ فَنَادٰی فِی الظُّلُمٰتِ اَنۡ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنۡتَ سُبۡحٰنَکَ ٭ۖ اِنِّیۡ کُنۡتُ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ
আর স্মরণ কর যুন-নূন এর কথা, যখন সে রাগান্বিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল যে, আমি তার উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করব না। তারপর সে অন্ধকার থেকে ডেকে বলেছিল, ‘আপনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই’। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম’।
বসে থাকব কেন? শত নিশ্ছিদ্র আঁধার হলেও সেখানে আমার জ্বলজ্বলে বাতি আছে । রাত গভীর হলেও প্রভাতের আশ্বাস আছে। মাছের পেটে গেলেও বাঁচার পথ ঠিকই আছে। শুধু দু’টি হরফ (কাফ ও নূন কুন)’ প্রয়োজন । রব্বে = কারীমের পক্ষ থেকে এ-শব্দটা উচ্চারণ আলোতে যেমন হতে পারে, আঁধারেও হতে পারে! ইউনুস আ.-কে তিনি বাঁচিয়ে আনেন নি? তো?
(চৌদ্দ) কেউ দেখছে না বুঝি? কামরার দরজা বন্ধ? আশেপাশে কেউ নেই? কেউ জানবে না?
সূরা আলাক, আয়াত ১৪
اَلَمۡ یَعۡلَمۡ بِاَنَّ اللّٰهَ یَرٰی
তবে সে কি জানে না যে, আল্লাহ তাকে দেখছেন?
চিন্তাটা শিশুসুলভ হয়ে গেল না! একেবারে কেউ দেখবে না এ সম্ভব! কেউ না দেখলেও একজন তো ঠিকই দেখবেন। সবকিছু গোচরে রাখবেন । আমি মানুষকে বেশি ভয় পাচ্ছি? ভয় তো পেতে হবে আল্লাহকে! তার অগোচরে আমি থাকি কী করে? গুনাহ করার চিন্তাই-বা করি কী করে ? কী করে?
(পনের) বিপদ এসেছে? মনে করছি এটা শাস্তি? গযব? দুঃখ পেয়েছি? এজন্য মন খারাপ?

সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৩
فَاَثَابَکُمۡ غَمًّۢا بِغَمٍّ
ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্টের উপর কষ্ট প্রদান করলেন।
মন খারাপ করার কিছু নেই। দুঃখ-শোকও আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। আমি যেটাকে বিপদ ভাবছি, সেটা প্রকারান্তরে আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘পুরষ্কার ও হতে পারে । ছোট বিপদ দিয়ে ভবিষ্যতের বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছেন। এমনও হতে পারে! আল্লাহ তা’আলা এই আয়াতে বলেছেন, তাদেরকে প্রতিদান দিয়েছি। অথচ আলোচনার দাবী ছিল (“আসাবা”) বলা । অর্থ আক্রান্ত করা । আপতিত করা । তার মানে, সাহাবায়ে কেরামের ওপর নেমে আসা সেই দুশ্চিন্তাটা ছিল প্রতিদান । বিপদ নয় ।
(ষোল) কতজনের কাছে যাই! কতভাবে হাত পাতি! নতজানু হই । সান্ত্বনা খুঁজি! প্রেরণা ভিক্ষা করি!
সূরা নিসা, আয়াত ৮১
کَفٰی بِاللّٰهِ وَکِیۡلًا
কাজ সম্পাদনে আল্লাহই যথেষ্ঠ।
আল্লাহ তা’আলা থাকতে অন্য দিকে চাইতে হবে কেন। অন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়ার ভাবনাই-বা আসে কী করে? রাব্বে কারীম আমাদের কুরআন কারীমকে আমাদের হৃদয়ের বসন্ত বানিয়ে দিন। কলবের নূর বানিয়ে দিন। হিম্মতোদ্দীপক বানিয়ে দিন। শোকের উপশম বানিয়ে দিন । সর্বোপরি এই আয়াতের পরিপূর্ণ ক্ষেত্র বানিয়ে দিন।
সূরা আবাসা, আয়াত ৩৮-৩৯
وُجُوۡهٌ یَّوۡمَئِذٍ مُّسۡفِرَۃٌ. ضَاحِکَۃٌ مُّسۡتَبۡشِرَۃٌ
সেদিন কতক মুখ উজ্জ্বল হবে। সহাস্য প্রফুল্ল।
তথ্যসুত্র
উপরোক্ত লেখাগুলো নেয়া হয়েছে মাওলানা আতিক উল্লাহ সাহেবের লিখিত “আই লাভ কুরআন” বই থেকে। আগ্রহীরা চাইলে উক্ত বইটি সংগ্রহ করে পড়তে পারেন।