ওমরের পরে খলিফা নির্বাচন – হযরত ওমর রাঃ মৃত্যুর পূর্বে তার স্থলাভিষিক্ত নির্বাচনের জন্য হযরত উসমান, আলী, আব্দুর রহমান বিন আউফ, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস, তালহা ও যুবাইর বিন আওয়াম রাঃ এর সমন্বয়ে যেই কমিটি গঠন করেছিলেন, তারা সকলে এক স্থানে বসে পরামর্শে বসেন।

হযরত ওমর রাঃ এর অসিয়ত অনুযায়ী আবু তালহা রাঃ কামরার বাহিরে পাহারায় নিযুক্ত ছিলেন। কারো জন্যই ভেতরে প্রবেশের অনুমতি ছিল না।

সাহাবাদের অপরকে অগ্রাধিকার দেয়া

পরামর্শের শুরুতে হযরত তালহা রাঃ হযরত উসমান রাঃ কে, হযরত যুবায়ের রাঃ হযরত আলী রাঃ কে, হযরত সাদ রাঃ আব্দুর রহমান রাঃ কে দায়িত্ব অর্পণ করে নিজেরা মুক্ত হয়ে যান।

তখন খেলাফতের জন্য শুধুমাত্র তিনজন ব্যক্তি ছিলেন। হযরত উসমান, হযরত আলী ও হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাঃ।

এ অবস্থায় হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাঃ হযরত উসমান ও আলী রাঃ কে বলেন,

আপনাদের দুজনের মধ্যে যে কোনো একজন নিজের অধিকার ছেড়ে দিন।

যিনি অধিকার ছেড়ে দিবেন, এ বিষয়ে তিনি ফায়সালা করবেন।

হেরে গিয়েও কিভাবে মানুষ জিতে যায়, পড়ুন

তিনি আল্লাহ এবং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে যাকে উত্তম মনে করবেন, তার ব্যাপারে ফায়সালা করবেন।

হযরত উসমান ও আলী রাঃ চুপ থাকলেন। তখন আব্দুর রহমান রাঃ বললেন, আচ্ছা তাহলে কি আপনারা আমাকে ফয়সালা করার অধিকার প্রদান করবেন?

আল্লাহর কসম! আমি আপনাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে ত্রুটি করবো না। হযরত উসমান ও আলী রাঃ আনন্দচিত্তে এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন।

নির্বাচন – ওমরের পরে খলিফা নির্বাচন

হযরত ওমর রাঃ মৃত্যুর পূর্বে শুরা কমিটিকে বলেছিলেন যে, লোকেরা আলী বা উসমানের মধ্য থেকে কাউকে গ্রহণ করবে।

যেহেতু এই দুজনই উম্মাহর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তাই তাদের মধ্যে যিনিই খলিফা হতেন তিনিই কল্যানকর হিসেবে সাব্যস্ত হতেন।

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাঃ বড় বড় সাহাবি ও ‍বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের নিকট গিয়ে তাদের মতামত জানলেন।

তিনি গ্রামের বেদুইন, সেনাছাউনিতে অবস্থানরত মুজাহিদ ও মদীনায় আগমণকারী বিভিন্ন কাফেলাকে তাদের অভিমত জিজ্ঞাসা করলেন।

সকলের সর্বসম্মত মত ছিল, উসমান রাঃ ই এই পদের জন্য অধিক উপযুক্ত।

ওমরের পরে খলিফা নির্বাচন

চতুর্থ দিন ফজরের নামাজের পর আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাঃ মসজিদের মিম্বরে আরোহণ করেন। প্রথমে তিনি আলি রাঃ এর হাত ধরে বলেন,

আপনার আল্লাহর রাসূলের আত্মীয়তা এবং প্রথম ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য রয়েছে। আমি আপনার নিকট হতে এই ওয়াদা নিচ্ছি যে,

যদি আপনার ব্যাপারে খেলাফতের ফায়সালা করি তাহলে আপনি ইনসাফ করবেন।

আর যদি আমি উসমানের ব্যাপারে ফায়সালা নেই তাহলে আপনি সন্তুষ্টচিত্তে তার আদেশ-নিষেধ মান্য করবেন।

এরপর তিনি হযরত উসমানকেও একই কথা বলেন। উভয়েই এই কথার উপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।

পড়ুন: কেন খালিদ রাঃ কে পদচ্যুত করা হলো?

এরপর আব্দুর রহমান রাঃ আলী রাঃ কে সম্মোধন করে বললেন,

আমি লোকজনকে ভালোভাবে জিজ্ঞাসা করেছি, তাদেরকে যাচাই করেছি। তারা উসমানকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তাই আপনি সামান্য পরিমাণও কষ্ট নিবেন না।

এরপর তিনি বলেন, উসমান! আপনি হাত বাড়ান। এরপর তিনি তার হাত ধরে এই বলে বাইয়াত হন যে,

আমরা আপনার নিকট আল্লাহর নির্দেশে রাসূল ও তার পরবর্তী দুই খলিফার রীতিতে বাইয়াত হচ্ছি।

এরপর আলী রাঃ ও উসমান রাঃ এর নিকট বাইয়াত হন। সেই মসলিসেই মুহাজির-আনসার সকলেই একত্র হয়ে উসমান রাঃ এর হাতে বাইয়াত হয়ে যান।

একটি ভুল বর্ণনা

উসমান রাঃ খলিফার হওয়ার বিষয়টি সকল মুসলমান সন্তুষ্টিচিত্তে মেনে নিয়েছেন। হযরত আলী রাঃ ও মেনে নিয়েছেন।

তারিখুত তাবারীতে একটি ঘটনা আছে যে, উক্ত বাইয়াতের মসলিসে হযরত মিকদাদ রাঃ ও আম্মার বিন ইয়াসির রাঃ আলী রাঃ এর খলিফা হওয়ার ব্যাপারে আওয়াজ তুলেছিলেন।

কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি বর্ণনা। এই ঘটনা বর্ণনা করে আবু মিখনাফ। সে ছিল রাফেজীদের সদস্য।

তার বর্ণনা ছিল পুরোপুরি বানোয়াট

তথ্যসুত্র

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খন্ড ৩। পৃষ্ঠা ২৫০-২৫২

আরো পড়ুন

নিকটবর্তী আসমানে কিভাবে আল্লাহর ফেরেশতারা নেমে আসে

নাস্তিকদের নিকট কেন আত্মহত্যা বৈধ? জানুন

ওমর রাঃ জন্ম

আনুমানিক ৫৮৩ খৃষ্টাব্দ (হস্তি ঘটনার ১৩ বছর পর)

ওমর রাঃ মৃত্যু

৩ নভেম্বর ৬৪৪ খৃষ্টাব্দ মোতাবেক ১ মহরম ২৪ হিজরী

Abdur Rahman Al Hasan
Scroll to Top