হেরেও জিতে যাওয়া – ছোটবেলা থেকে দুরস্তপনায় বেড়ে উঠা সালমান সারা গাঁয়ে দাপিয়ে বেড়ায়। বন-বাদাড়ে গভীর রাতেও হানা দিতে ভয় পায় না সে।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই মাঠে খেলতে যাওয়া আর দুপুরে শ্রান্ত হয়ে ঘরে ফিরে দু-মুঠ খেয়ে আবার মাগরিব পর্যন্ত খেলাই সালমানের প্রতিদিনের অভ্যাস।

বাবা ছেলেকে একদিন বললেন, তোমার খেলার মাত্রা একটু কমানো উচিৎ। সে তখন বললো, বাবা! খেলতে আমার ভালো লাগে। বড় হয়ে খেলোয়াড় হবো।

সালমানের বাবা মুচকি হেসে তাকে নিয়ে পুকুরপাড়ে বসলেন। সালমান তার বাবাকে খুব পছন্দ করে।

কারণ, বাবার সামনে বসলে তিনি ঝাঁপি থেকে গল্প পরিবেশন করেন।

সালমানের বাবা তখন তাকে বললেন, তুমি কোন খেলা বেশি পছন্দ করো? সালমান উত্তেজিত কণ্ঠে বললো, ফুটবল।

এরপর সালমানের বাবা প্রশ্নের সুরে বললেন, কিন্তু ফুটবলের চেয়েও তো আরো কত ভালো ভালো খেলা আছে।

তা কেন তোমার পছন্দ নয়?

সালমান বললো, তা হবে না কেন, আমি সব খেলাই পছন্দ করি। ফুটবল আমার বেশি ভালো লাগে।

পাড়ার ফুটবলের ক্লাবের ক্যাপ্টেন জাফরকে আমি প্রতিবারই হারিয়েছি।

সালমানের বাবা খুশী হয়ে বললেন, তাই নাকি? তো জাফর তো ভালো খেলে। দুইবার জেলা পর্যায়ের খেলায় মারাত্মক গোল দিয়ে ক্লাব জিতিয়েছে। সে তোমার সাথে পারে না কেন?

সালমান গদগদ করে বললো, সে খানিকটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটে। তাই তার বল কন্ট্রোল করলে খানিকটা সময় লাগে। আমি তাকে তখন কাটিয়ে গায়েল করে ফেলি।

সালমানের বাবা এটা শুনে খুশী হতে পারলেন না। তিনি তখন বললেন, আচ্ছা তোমাকে একটা গল্প শোনাতে চাই। শুনবে?

সালমান বললো, কেন নয়? অবশ্যই শুনবো। এরপর সালমানের বাবা বলতে শুরু করলেন।

হেরেও জিতে যাওয়া

হেরেও জিতে যাওয়া

একবার একটা দৌঁড় প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বড় বড় ক্রীড়াবিদরা উপস্থিত হলো। ঘোষণা করা হলো, যে এই প্রতিযোগিতায় জিতবে, তাকে অনেক পুরস্কার দেয়া হবে।

নির্দিষ্ট সময়ে সকলে এসে লাইনে দাঁড়ালো। সেখানে আফ্রিকান একজন মুসলিম দৌঁড়বিদ ছিল। তিনিও তাদের সাথে দৌঁড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

যখন রেফারি বাঁশি ফুৎকার দিল, সকলেই দৌড়াতে শুরু করলো। দৌড়ের শেষ সীমানা ছিল অনেক দূরে।

তাই কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে অনেকেই প্রতিযোগিতা থেকে ছিঁটকে পড়লো।

তারা আর দৌঁড়াতে পারছিল না। আফ্রিকান সেই মুসলিম ব্যক্তিটি অনেক সামনে ছিল।

তার আগে ছিল অস্ট্রোলিয়ান আরেক ব্যক্তি। সে খুব জোরে দৌড়াচ্ছিল।

কেউ তার নাগাল পাচ্ছিল না। একটা সময় দৌঁড়ের শেষ সীমানা দেখা গেল। ওই তো লাল ফিতা! সেটার সাথে যে আগে লাগবে, সেই জয়ী হবে।

অস্ট্রোলিয়ান ব্যক্তিটি অনেক জোরে দৌঁড়ানোর ফলে দড়ির নিকটে গিয়ে কুল হারিয়ে ফেললো। সে মাটিতে পড়ে গেল।

আর সামনে অগ্রসর হতে পারছিল না সে। হামাগুড়ি দিয়ে এগুনোর চেষ্টা করলো। কিন্তু শরীরের সব শক্তি যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে।

আফ্রিকান মুসলিম ব্যক্তিটি উক্ত প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ছিল।

তিনি যখন এটা দেখতে পেলেন তখন সাথে সাথে উক্ত আস্ট্রোলিয়ান ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে দড়ির সামনে চলে গেলেন।

এরপর উক্ত অস্ট্রোলিয়ানকে সামনে আগ বাড়িয়ে দিয়ে তিনি এরপর দড়ির সীমানায় প্রবেশ করলেন। প্রতিযোগিতা শেষ হলো।

অস্ট্রোলিয়ান ব্যক্তিটি আগে দড়ি ছুঁয়ে ফেলায় প্রথম স্থান অর্জন করলেন। কিন্তু উপস্থিত সমস্ত মানুষের অন্তর জয় করে নিলেন, উক্ত আফ্রিকান মুসলিম ব্যক্তিটি।

ট্রফি দেয়ার সময় আয়োজক আফ্রিকান ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তো চাইলেই আগে গিয়ে প্রথমস্থান অর্জন করতে পারতে। কিন্তু তুমি তা করো নি কেন?

তখন উক্ত ব্যক্তি বললেন, আমার ধর্ম আমাকে প্রথমে বলে তুমি প্রাপ্য ব্যক্তিকে তার হক দিয়ে দাও।

তারপর আমার ধর্ম বলে, অসহায় ব্যক্তিকে তুমি সাহায্য করো।

উক্ত অস্ট্রোলিয়ান যদি পড়ে না যেতেন তাহলে তিনিই প্রথম হতেন।

আর যেহেতু তিনি পড়ে গেছেন আর আমি নিকটেই ছিলাম, তাই আমার উচিৎ তাকে সাহায্য করা।

আমি তাই আমার দায়িত্ব পালন করেছি। এর বেশি কিছু করি নি। এটা শুনে উপস্থিত দর্শক এবং অন্যান্যরা হতবাক হয়ে গেল।

কেউ কি এমন সুযোগ পাওয়ার পরও তা ছেড়ে দেয়? কিন্তু আফ্রিকান ব্যক্তির এই কাজ এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছিল যে, পরদিন দৈনিক পত্রিকায় এটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলো।

সারা দেশের মানুষ একটি ভালো কাজ জানতে পারলো। পাশাপাশি এটাও জানলো যে, কখনো কারো অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে কিছু করা উচিৎ নয়।

মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় গল্পটি শুনলো সালমান। এরপর সে বললো, বাবা! আমি আর কখনো কারো অসহায়ত্বের সুযোগ নিব না।

সকলকে আমি সাহায্য করবো। সালমানের বাবা শুনে খুব খুশী হলেন। মনে মনে তার জন্য অনেক দোয়া করলেন।

Scroll to Top