তাওহীদ আল আমালী – শাঈখ উল মুজাহিদীন ইমাম আব্দুল্লাহ আযযাম (রহঃ) এর খুৎবার অংশবিশেষ। বিসমিলাহির রহমানির রহীম।

যখন আফগানিস্তানে ছিলাম তখন আমি ভালভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি যে,

জিহাদের ময়দানে অংশগ্রহণ করা ব্যতীত একজন মানুষের অন্তরে তাওহীদের ভিত্তি মজবুত হতে পারে না।

এই হচ্ছে সেই তাওহীদ যার সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলে গিয়েছেনঃ “আমাকে পাঠানো হয়েছে কেয়ামতের পূর্বে তলোয়ার সহ…” কেন? “…যাতে শুধুমাত্র এক আলাহর ইবাদত করা হয় শরীক বিহীন অবস্থায়।”

সুতরাং, দুনিয়ার বুকে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে তলোয়ার এর মাধ্যমে…।

শুধু আক্বীদা অথবা আমলের বই পড়ার মাধ্যমে নয়। প্রকৃতপক্ষে, রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে সেই তাওহীদ আল-উলুহিয়্যাহ-র

জিহাদ সম্পর্কে কুরআন ও হাদীস কি বলে? বিস্তারিত পড়ুন

(সকল ইবাদতে আল্লাহর একত্ববাদ অক্ষুন্ন রাখার) শিক্ষা দিয়েছেন যার কারণে তিনি প্রেরিত হয়েছেন; যাতে এই তাওহীদ আল-উলুহিয়্যাহ প্রতিষ্ঠিত হয়।

তিনিই শিখিয়েছেন যে, কোন বিদ্যা শিক্ষার মাধ্যমে এটি তওহীদ প্রতিষ্ঠিত হবার নয়। বরং এটি প্রতিষ্ঠিত হবে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে,

জিহাদের ময়দানে কাফিরদের মোকাবেলার মাধ্যমে, তাগুতের মুখোমুখি হয়ে অত্যাচার সহ্য করার মাধ্যমে ও সর্বোপরী নফ্সের কুরবানী করার মাধ্যমে।

দ্বীনের জন্য উৎসর্গ

যখনই কোন ব্যক্তি এই দ্বীনের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে তখনই এই দ্বীন তার অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য এবং নিগুঢ় তত্ত্ব সেই ব্যক্তির জন্য প্রকাশ করে দেয় ।

এই বিষয়ের (অর্থাৎ জিহাদের) আলোচনা এই জন্য করা গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু কিছু লোক

(যাদের তাওহীদের প্রকৃতি এবং সঠিক বুঝ নেই) সমালোচনা করে

এবং দোষারোপ করে থাকে আফগান মুজাহিদদের… অথচ যাদের মাধ্যমে আল্লাহ মুসলিমীনদেরকে সম্মানিত করেছেন,

যাদের (মুজাহিদ) মাধ্যমে আল্লাহ দুনিয়ার প্রতিটি মুসলিমের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন, যাদের (মুজাহিদ) মাধ্যমে ইসলামের পতাকা উপরে উঠেছে

এবং ইসলাম একটা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে, এবং যাদের (মুজাহিদীন) মাধ্যমে ইসলাম সেই কুফর শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে

যাদেরকে বর্তমানে (কুফর শক্তি) ‘সুপার পাওয়ার’ বলা হয়, সেই ‘সুপার পাওয়ার’ এখন ইসলামকে ভয় পায়, সম্মান করে এবং ইসলাম এর নাম শুনলে আতঙ্কিত হয়।

অথচ এই অবস্থা ছিল না যখন জিহাদ অনুপস্থিত ছিল।

[রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ] “আল্লাহ তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে ভয় এবং আতঙ্ক দূর করে দিবেন এবং তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহান’ ঢুকিয়ে দিবেন।

তখন সাহাবারা বললেনঃ ‘ওয়াহান’ কি? তিনি (সাঃ) উত্তর দিলেনঃ দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে ঘৃণা করা।”

দুনিয়ার মোহাব্বাত

সুতরাং আমরা যদি হাতে অস্ত্র না ধরি, কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করি এবং তাদেরকে হত্যা না করি তাহলে কোন দিন শত্র“দের অন্তরে ভয় এবং আতঙ্ক তৈরী হবে না…

তাই, যা আমি পূর্বে বলছিলাম, কিছু লোক তাওহীদের আসল প্রকৃতি বুঝতে পারে না। তারা শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক বই পড়ে এই মন্তব্য করা শুরু করে যে,

“আফগানীদের আক্বীদার মধ্যে শিরক ও বিদ’আত মিশ্রিত আছে।” “আমাদের মধ্যে কিছু লোক তাদেরকে বলেঃ ‘তোমাদের আক্বীদায় সমস্যা আছে।’

এই ধরনের ভিত্তিহীন অপবাদ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই! লাল বৃষ্টির বর্ষণ ছাড়া কখনো শিরকের ধোয়া নিভানো যাবে না।

এবং অস্ত্র হাতে ধরা ব্যতীত কি তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা যায়? ও’ বসে থাকা মেয়েলী স্বভাবের পুরুষরা! এটা সাধারণভাবে গ্রহণ কর,

কারণ তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সমস্যা আছে।” যারা সত্যিকার অর্থে বুঝতে পেরেছেন যে, তাওহীদ-উল-’আমালী হচ্ছেঃ

তাওহীদ উল উলুহিয়্যাহ, একমাত্র আল্লাহর উপরই তাওয়াক্কুল (দৃঢ় ভরসা) করা, একমাত্র আল্লাহকেই ভয় পাওয়া, একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করা…

এই তাওহীদ কখনই বোঝা সম্ভব নয় শুধুমাত্র কিছু বই পড়ে। তবে হ্যাঁ, তাওহীদ আর-রুবুবিয়্যাহ সম্পর্কে জানা সম্ভব ২/১টি লেকচারে অংশগ্রহণ করে।

যেই তাওহীদ মক্কার মুশরিক কুরাইশরাও স্বীকার করত। আমরা স্বাক্ষী দিচ্ছি যে, আল্লাহর হাত আছে যেই হাত আমাদের হাতের সদৃশ নয়।

আল্লাহর সমস্ত পবিত্র নাম ও গুণাবলী আমরা সেভাবেই গ্রহণ করেছি ঠিক যেরকম আল-কোরআন ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হতে সহীহ সনদে উল্লেখ করা আছে।

আমরা এই পবিত্র নাম ও গুণাবলীর তা’তীল (অস্বীকৃতি) করি না, তা’ওয়ীল (ভুল ব্যাখ্যা), তাহরীফ (অর্থ বিকৃত) করি না,

তাশবীহ (সাদৃশ) করি না, তামছীল (সদৃশ্য) করি না। এবং আমরা বলি আল্লাহ আরশে সমাসীন হয়েছেন কিন্তু বলি না তিনি তা দখল করেছেন।

আল্লাহ ইসতিওয়া (আরশে সমাসীন হওয়া) করেছেন কিন্তু কিভাবে করেছেন আমরা জানিনা। ইহার প্রতি ঈমান আনা ফরজ এবং প্রশ্ন করা বিদ’আত।

ঈমান ও তাওহীদ

এভাবে, আমাদের প্রত্যেকেই এটা মুখস্ত করি। আপনিও মুখস্ত করেছেন, তা নয় কি? নাকি এখনও করতে পারেন নি? এটা একটা সহজ কাজ। জানো কেন সহজ?

কারণ এটি হচ্ছে ঈমানের তাত্ত্বিক দিক। যার জন্য কোন আমল দরকার নাই, শুধু জানতে হবে এবং স্বীকৃতি দিতে হবে।

এবং একজন নবীকেও এই উদ্দেশ্যে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয় নাই। বরং, তাঁদের শুধুমাত্র যে উদ্দেশ্যে দুনিয়াতে প্ররণ করা হয়েছে, তা হলোঃ তাওহীদ আল-উলুহিয়্যাহ

অথবা তওহীদ আল-’আমালী (সকল কর্ম এক আল্লাহ হুকুম অনুযায়ী করার মাধ্যমে তাঁর ইবাদত) প্রতিষ্ঠা করার জন্য।

অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে একনিষ্ঠ অন্তরে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে হবে। আল্লাহই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা,

রিযিকদাতা, জীবনদাতা, মুত্যুদাতা (এই বিশ্বাস একজন মানুষের জীবনে আমলের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে হবে)… এই বিশ্বাসগুলো তাওহীদ আররু বুবিয়্যাহ-র মত শুধুমাত্র কিছু তাত্তি¡ক বিশ্বাস নয়।

কিন্তু তাওহীদ আল-উলুহিয়্যাহ-কে স্বীকৃতি দিতে হলে তা দিতে হবে জীবনে কাজের মাধ্যমে… এবং তাওহীদ আল-উলুহিয়্যাহ-র আক্বীদা একজন মানুষের অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা-

বিশেষ করে রিযিকের ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল (দৃঢ়ভাবে ভরসা) করা, মৃত্যু দেয়ার মালিক যে

একমাত্র আল্লাহ, সম্মান ও মর্যাদা দেয়ার একমাত্র মালিক আল্লাহ… তাওহীদের এই বিষয়গুলো একজন বান্দার অন্তরে শুধুমাত্র তখনই প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে

যখন সে (যুদ্ধের ময়দানে) অনেক সময় ব্যয় করে, এসকল দীর্ঘ যাত্রা পাড়ি দেয় ও বিশাল আত্মত্যাগের মাধ্যমে।

একটি গায়েবী সাহায্যতাওহীদ আল আমালী

আমি আপনাদের প্রশ্ন করছিঃ তাওহীদ-এর বুঝ কার বেশী? সেই বয়ষ্ক লোকটির… যার ব্যাপারে একজন ভাই আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেঃ

“একদিন কাফেরদের প্লেন আমাদের উপর বম্বিং করছিল, তখন আমরা সবাই নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিলাম, একজন ব্যতীত যার নাম ছিল মোঃ উমর।

একটি প্লেন যখন মুজাহিদদের উপর বম্বিং করছিল তখন তিনি প্লেনটির দিকে তাকিয়েছিলেন এবং বললেন, “হে আমার রব! কে বড়? আপনি, নাকি প্লেন? কে বেশি শক্তিশালী?

আপনি, নাকি এই প্লেন? আপনি কি আপনার এই বান্দাদেরকে প্লেনগুলির থাবার মধ্যে ছেড়ে দিবেন?”

তখন সে তার দুই হাত আকাশে তুলে তার ফিৎরাত অনুযায়ী আল্লাহকে ডাকতে আরম্ভ করলো। সে তার দু’আ শেষ করার আগেই প্লেন মাটিতে পড়ে ধ্বংস হয়ে গেল,

অথচ ১টা গুলিও ছোড়া হয়নি। এবং কাবুল রেডিও ষ্টেশন থেকে প্রচার করা হলো যে, যেই প্লেনটি ভূপাতিত হয়ে ছিল তার ভিতরে একটি রাশিয়ান জেনারেল ছিল…

সুতরাং ইহা (তাওহীদ) হচ্ছে এমন একটা আক্বীদা যার প্রভাবে মানুষের অন্তর থেকে মৃত্যুর ভয় এবং কাফেরদের ক্ষমতার ভয় দূর হয়ে যায়।

স্রষ্টার নুসরাত – তাওহীদ আল আমালী

আমাদের মধ্যে আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে শাঈখ তামিম আল-’আদনানীর ঘটনা যা ঘটেছিল ৩০শে রামাদান ১৪০৬ হিঃ সালে,

যখন রাশিয়ান মিত্র বাহিনী – তিনটি কম্যুনিষ্ট বাহিনী- আক্রমন করেছিল একসাথে। এই মিত্র বাহিনীতে ৩০০০ সৈন্য ছিল ও তাদের সাথে ছিল ট্যাংক, প্লেন, মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্র…

প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র একসাথে ৪১টি মিসাইল ছোড়ার ক্ষমতা সম্পনড়ব, এবং সকল ক্ষেপণাস্ত্র একসাথে ছোড়া হত। ৪১টি মিসাইল একসাথে পাহাড়ে আক্রমন করত যা ভয়াবহ ভাবে প্রকম্পিত করত…

এবং মর্টার, মেশিনগান, কামান… পাঁচটি রাশিয়ান বিগ্রেড, যার একটি ছিল ‘স্পেকনায’ বিগ্রেড – একটি অত্যাধুনিক শক্তিশালী বিগ্রেড যার নাম দেয়া হয়েছিল “রাশিয়ান লাইটনিং”…

শাইখ তামিম সেই যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন… তাঁর ওজন ছিল ১৪০ কেজি আর একারণেই যখনই তিনি কারও উপর ক্ষিপ্ত হতেন তখন বলতেন,

‘আমি তোমার উপর বসে পড়ব’ তাতেই সে শেষ! আর এর অর্থ হল, তিনি তাকে হত্যা করতে যাচ্ছেন।

যাই হোক, শাঈখ তামিম গাছের নীচে বসে দু’আ করছিলেন, “ইয়া মুমিতু (হে মৃত্যুদাতা)!

রামাদানের শেষ দিনে আমাকে শাহাদাহ দান করুন” সেটা ছিল ৩০শে রামাদান অর্থাৎ রামাদানের শেষ দিন… তিনি কুরআন তিলাওয়াত শুরু করলেন…

এবং ১ম পারা (অংশ) শেষ করলেন যেই সময় বুলেট তাঁর চেহারা ও কানের পাশ দিয়ে সোঁ সোঁ করে যাচ্ছিল;

কেউ বিশ্বাস করবে না যে তিনি জীবিত কারণ তাঁর গাছকে লক্ষ্য করে বম্বিং হচ্ছিল…

মিসাইল এসে আগুন জ্বলছিল,

গাছটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে… সেখানে এমন ভয়ংকর অবস্থা ছিল যে তোমার পাশে বসে থাকা কোন ব্যক্তিকে একটি বাক্য বলে শেষ করা সম্ভব ছিল না।

তুমি যদি বলতে চাও, “তোমার কাছে কি বুলেট আছে?” – যখন তুমি কেবল বলেছ, “তোমার কাছে কি,”- এর পরের শব্দগুলো আর বলা সম্ভব হত না

কারণ ততক্ষণে রকেট, মর্টার অথবা বোমা এসে তোমাকে আঘাত করত (সেই পরিস্থিতি এতটাই প্রাণনাশক ছিল)।

শাঈখ তামিম যখনই তিলাওয়াত করতে করতে জান্নাত সম্পর্কিত আয়াতে আসতেন, যেমনঃ

أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ

 “উহারা জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।”

তখন তিনি বার বার আয়াতটি তিলাওয়াত করছিলেন, তিনি বলেছিলেন, “হয়ত বুলেট আমাকে আঘাত করবে জান্নাতের (আয়াত তিলাওয়াত করা) অবস্থায়।

সুতরাং এইভাবে তিনি ১ম পারা ও ২য় পারা শেষ করেছিলেন…

যখনি তিনি পড়তে পড়তে এমন আয়াতে আসতেন যেখানে জাহান্নামের উল্লেখ আছে তখন তিনি ভয় পেতেন না জানি জাহান্নাম উল্লেখিত আয়াত তিলাওয়াত রত অবস্থায় বুলেট বিদ্ধ হন…

অতপর ৩য় পারা, ৪র্থ পারা, ৫ম পারা… এত সব কিছু হচ্ছিল, চারিদিকে পরিস্থিতি এত ভয়ংকর ছিল যে আপনি আপনার নাম পর্যন্ত ভুলে যাবেন…

নিজেকে চিনবেন কি? – তাওহীদ আল আমালী

ওয়াল্লাহি (আল্লাহর শপথ) ভাইয়েরা! আমাদের জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল ইসতিনজা’র (টয়লেট) জন্য বের হওয়া, কারণ আমরা চিন্তাই করতে পারতাম না

যে একজন ইসতিনজা শেষ করার পরও সে জীবিত থাকবে। সে এই ভয় পেত যে ইসতিনজা রত অবস্থায় শহীদ হয়ে যাবে…

এটা ছিল আমাদেও জন্য অনেক বড় এক বোঝা… এর পর, শাইখ দুআ করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! যদি আমাকে শাহাদাহ না দান করেন তবে অন্তত একটু আহত করেন।’

এভাবে ৬ মিনিট অতিবাহিত হলো, ৭ মিনিট… ৪ ঘন্টা চলে গেল, অথচ তার উপর তখনও বৃষ্টির মত বম্বিং হচ্ছিল।

শাঈখ তামিম বললেন, “সেই দিন থেকে আমি উপলব্ধি করতে পারলাম যে, বিশ্বজাহানের রব আল্লাহর নির্ধারিত মুহূর্ত ব্যতীত কেউই মারা যেতে পারেনা

এবং খুব কঠিন ঝুঁকি নিলেও মৃত্যুর মুহূর্ত কাছে চলে আসে না এবং নিরাপদ জায়গায় থাকলে মৃত্যু মুহুর্তে দূরে চলে যায় না। ”

শাঈখ তামিমের এই বুঝ হয়েছিল ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহর একটা ফাতওয়া পড়ার পর… তিনি আন-নব্বী’র আল-মাজমুয়ায় এই বিষয়ে পড়েননি

অথবা ইবন আল-কাইয়্যিমের বই থেকে। ইবনে তাইমিয়্যাহর ফাতওয়া থেকে পড়েছিলেন কারণ ইবনে তাইমিয়্যাহকে তার সময়ের শত্র“রা অত্যন্ত অত্যাচার করেছিল।

অকুতোভয় নির্ভীক – তাওহীদ আল আমালী

সুতরাং এই হল তাওহীদ-এর আকিদা… রিযিক ও মৃত্যুর ব্যাপারে সে নির্ভীক হয়ে যায়…

যে ব্যক্তি জিহাদহীন জীবন যাপন করছে তাকে যদি বলা হয় গোয়েন্দা সংস্থার লোক তোমার বাড়িতে এসেছে তখন ভয়ে হয়ত তার প্যারালাইসিস হয়ে যাবে (আল্লাহই ভাল জানেন)।

অথবা আপনি যদি তাকে বলেন সি.আই.এ.-এর এজেন্টকে তোমার বাড়ির দরজায় দেখা গেছে… এতটুকুতেই তার পুরো সপ্তাহের ঘুম এবং বিশ্রাম নাই হয়ে যাবে,

এমনকি সে হয়ত ফজরের সালাত ঠিক সময় পড়তেও পারবে না। এই সাত দিন সে এজেন্টদের যতটুকু ভয় করবে ততটুকু ভয় সে আল্লাহকেও করে না।

সুতরাং কেন সে এজেন্টদের এত ভয় পায়। কারণ সে তার রিজিক কমে যাওয়ার ভয়ে ভীত অথবা মৃত্যুর ভয়ে ভীত।

এছাড়া অন্য কোন কারণ কি আছে? না, নাই! হয় তার রিযিক হারানোর ভয় অথবা মৃত্যুর ভয়। এভাবেই এই মুসলিম জাতির উপর ভয় নামক ভয়ংকর ভূত চেপে বসেছে যার কারণে তারা অনিদ্রায় জীবন কাটায়।

কিন্তু যদি আপনার রিযিক শেষ হওয়ার ভয় ও মৃত্যুর ভয় না থাকে তবে আপনার অন্তরে তাদের (এজেন্টদের) ব্যাপারে ভয় থাকবে না।

উদাহারণ স্বরূপ আপনাকে এখন যদি বলা হয়- “রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসছে।” এই কথা কি আপনাকে ভীত করবেনা?

এমনকি আফ্রিকার ইন্টেলিজেন্সও আপনাকে ভীত করে ফেলবে (কারণ তারা সুদান, আলজেরিয়া ও মিশরে আপনার বাড়িতে পৌঁছতে পারবে)।

সুতরাং আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে একমাত্র জিহাদ হচ্ছে এসকল রোগের সমাধান… ইন্টেলিজেন্সদের ব্যাপারে যে কাল্পনীক ভয়, মৃত্যুর ভয় ও রিযিক হারানোর ভয়।

জীবনের মূল্যমান – তাওহীদ আল আমালী

একজন মানুষের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে তার জীবন… যখন এই জীবন আপনার হাতের তালুতে রাখবেন-

দিনে এবং রাতে আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করবেন যেন আল্লাহ তা গ্রহণ করে আপনাকে পবিত্র করে… এবং আপনি দুঃখিত হবেন

যদি বিশ্ব জগতের রব তা গ্রহণ না করে… তখন কিভাবে আপনি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবেন?

“যখন প্রাণনাশক ময়দানে ঝাঁপ দেয়া যুবকের অভ্যাস হয়ে যায় তখন তার জন্য সবচেয়ে সহজ হয়ে যায় কাদামাটি অতিক্রম করা।”

যে প্রতিদিন মৃত্যুর সামনে উপস্থিত হয় সে কি কোন কিছুকে ভয় পেতে পারে আল্লাহ ছাড়া। সুতরাং তাওহীদ অন্তরে সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না,

সম্পূর্ণভাবে শিকড় গাড়তে পারে না – জিহাদ করা ব্যতীত। এবং সাধারণ একটা নিয়ম হচ্ছে, দ্বীনের অধিকাংশ ইলম আয়ত্ব করা যায় না জিহাদ ছাড়া,

আর এই জন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেনঃ

فَلَوۡ لَا نَفَرَ مِنۡ کُلِّ فِرۡقَۃٍ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَۃٌ لِّیَتَفَقَّهُوۡا فِی الدِّیۡنِ وَ لِیُنۡذِرُوۡا قَوۡمَهُمۡ اِذَا رَجَعُوۡۤا اِلَیۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ یَحۡذَرُوۡنَ

তাদের প্রত্যেকটি বড় দল হতে এক একটি ছোট দল (জিহাদে) বহির্গত হয়, যাতে তারা ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে পারে আর প্রত্যাবর্তন করে নিজ কওমের লোকদের ভয় প্রদর্শন করতে পারে, যেন তারা পরহেয করে চলে।” (সূরা তওবা: ১২২)

এখানে “যাতে তারা ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে পারে” আয়াতাংশের “তারা” শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে “তারা” যেন বের হয়ে দ্বীনের বুঝ অর্জন করতে পারে…

কিছু আলেম ভিন্ন মতের দিকে দিয়েছেন, তারা বলেছেন, “না, বরং যে দল পিছনে বসে রয়েছে তারা যাতে দ্বীনের বুঝ অর্জন করতে পারবে”।

কিন্তু সবচেয়ে সঠিক মত সেটাই যা ইবনে আব্বাস (রাঃ), আত-তাবারী এবং সাইয়্যেদ কুতুব (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, যেই দলটি আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয় তারাই দ্বীনের বুঝ অর্জন করতে পারবে…

তারাই দ্বীনের লুক্কায়িত সৌন্দর্য বুঝতে পারবে এবং দ্বীন তার আভ্যন্তরীণ মুক্তা তাদের নিকট প্রকাশ করে দিবে।

সাইয়্যেদ কুতুব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন

“নিশ্চয়ই, এই দ্বীন তাদের নিকট এর সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না একজন ফাক্বীহ-র নিকট যে ঠান্ডা আলোচনায় বসে অথচ এই দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জিহাদ করে না।

এই দ্বীন কোন ‘কেক’ নয় যে আপনি আপনার মগজ-এ শুধু হিফাজত করে রাখবেন। বরং এই দ্বীনের বুঝ অর্জন করা যেতে আমাদের জীবনে ও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই দ্বীনকে পূণর্বাস্তবায়নের মাধ্যমে।”

হ্যাঁ… এই দ্বীন… আপনি ইহার সঠিক বুঝ পেতে পারেন না যদি না আপনি এই দ্বীনের জন্য আত্মত্যাগ করেন… যখন এই দ্বীনের জন্য আপনি কিছু (আত্মত্যাগ স্বীকার) করবেন

তখন এই দ্বীন আপনাকে দিবে (ইহার সঠিক বুঝ)… “দেওয়া ও নেয়া নীতি।” আত্মত্যাগ! তখনি বিশ্বজগতের রব আপনার জন্য দরজা উম্মুক্ত করে দিবেন…

এই দ্বীনের জন্য আত্মত্যাগ করুন তখনি আল্লাহ আপনাকে তাঁর আয়াত ও হাদিস শিক্ষা দিবেন। একটা সাধারণ নিয়ম হচ্ছে,

আপনি জিহাদ ব্যতীত কুরআনের অনেক আয়াতের মর্মার্থ বুঝতে পারবেন না।

উদাহরণ স্বরুপঃ সূরা আত-তাওবাহ, সূরা আল-আনফাল, সূরা আলি-ইমরান… কিভাবে আপনি উক্ত সূরাসমূহ বুঝতে পারবেন জিহাদের জন্য চেষ্টা সাধনা ব্যতীত? ইহা কখনও সম্ভব নয়।

জিহাদের মাধ্যমে ১ম যে লাভ অর্জিত হয় তা হচ্ছেঃ

মানুষের আত্মা পরিশুদ্ধ হয়ে তার (আত্মার) মধ্যে তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ অর্থ্যাৎ তাওহীদুল উবুদিয়্যাহ…

অর্থাৎ তাওহীদ উল ’আমালী প্রতিষ্ঠিত হয়। একজন বান্দার আচরণ এমন হয় যেন সে তার রবকে দেখছে এবং রব তার অতি নিকটেই

আছে (আল্লাহ আল-ক্বারিব)।

তাওয়াক্কালতু আ’লাল্লাহ – তাওহীদ আল আমালী

“আরসালান” নামক শহরে কিছু মুজাহিদীন ছিল। রাশিয়ান সৈন্যরা চতুর্দিক থেকে ট্যাংক সহ তাদেরকে ঘেরাও করল।

রাশিয়ানরা চেয়েছিল তাদেরকে জীবিত ধরতে। ঐ মুজাহিদদের জন্য আল্লাহ ছাড়া কেউই সাহায্য করার জন্য ছিল না।

তারা দু’আ করল, “হে আল্লাহ! একজন কাফিরকেও আমাদের উপর ক্ষমতা দিও না!”। হঠাৎ করে যুদ্ধেও মোড় ঘুড়ে গেল।

ট্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে প্রচন্ড শব্দ শোনা গেল। কিন্তু শব্দগুলো কারা করছে দেখা গেল না।

সমস্ত রাশিয়ান বাহিনী পলায়ন করল অথচ ওদেরকে লক্ষ্য করে একটি গুলিও ছোড়া হয়নি।

এরপরও উক্ত মুজাহিদীন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে না কেন?

وَ اِذَا سَاَلَکَ عِبَادِیۡ عَنِّیۡ فَاِنِّیۡ قَرِیۡبٌ ؕ اُجِیۡبُ دَعۡوَۃَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ ۙ فَلۡیَسۡتَجِیۡبُوۡا لِیۡ وَ لۡیُؤۡمِنُوۡا بِیۡ لَعَلَّهُمۡ یَرۡشُدُوۡنَ

 “আর যখন আমার বান্দারা আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তখন তাদেরকে বলে দাও – নিশ্চয় আমি সনিড়বকটবর্তী। কোন আহবানকারী যখনই আমাকে আহবান করে তখনই আমি তার আহবানে সাড়া দিয়ে থাকি।” (সূরা বাকারা: ১৮৬)

শাইখ জালাল আদ্-দ্বীন আল-হাক্কানী বলেছেনঃ “জিহাদের ১ম বছরে জনগণ আমাদের নিকট পৌঁছতে পারত না। আমরা সংখ্যায় খুবই কম ছিলাম।

এবং আমরা পাহাড়ের চুড়ায় ছিলাম; কেউই আমাদের নিকটে আসতে পারত না, এমন কি কোন সাহায্যও পর্যন্ত পাঠাতে পারত না…

এমন কি চা বানানোর জন্য আমরা আগুন পর্যন্ত জ্বালাতে পারতাম না (কারণ ধোয়া দেখলে শত্র“রা আমাদের অবস্থান চিহিৃত করে ফেলবে)…

এমন এক পরিস্থিতি হয়ে ছিল যে এই বাহিনীর অন্যরাও জানতো না আমাদের অবস্থান।

পৃথিবী আমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল… খাবার শেষ হয়ে গিয়েছিল।

যদি তুমি অসুস্থ হও তবে সবর করা যায়… প্রচন্ড শীত পড়লেও সহ্য করা যায়…

কিন্তু খাবারের সংকট? কি করে তুমি তা সহ্য করবে? একটুও খাবার ছাড়া কিভাবে আপনি কিভাবে বেঁচে থাকবেন?

গায়েবী ধ্বনি – তাওহীদ আল আমালী

একদিন আমি ফজরের সালাত পড়ে উদাসীন মনে জায়নামাজে বসেছিলাম। তন্দ্রা এবং নিদ্রা আমাকে চেপে বসল…

তখন হঠাৎ কেউ একজন আমার পেছন থেকে কাঁধে ঝাঁকি মেরে বলল, “হে জালাল আদ্-দ্বীন! তোমার রব তোমাকে ৩০ বছর ধরে রিযিক দিচ্ছেন অথচ তুমি এখনও তার পথে জিহাদ করছো না…

তবে কি তিনি যদি তোমাকে ভুলে যায় তখন তুমি তাঁর পথে জিহাদ করবে?!”

এই জন্যই একজন মিশরীয় ভাইকে তার স্ত্রী জিজ্ঞেস করে ছিল (সে আফগানিস্তানে মুজাহিদদের সাথে যোগ দেয়ার আগে) তুমি কোথায় কাজ করবে?

ভাইটি উত্তর দিয়েছিল, “আমি সরাসরি রব্বুল আলামিন এর অধীনে কাজ করতে যাচ্ছি”। ভাইটি আরও বলেছিল… “অমুক ব্যক্তি কাজ করছে অমুক ব্যবসায়…

অমুক কাজ করছে অমুক গভর্নরের অধীনে… আর আমি কাজ করতে যাচ্ছি সরাসরি রব্বুল ’আলামীনের অধীনে। কে আমার চেয়ে উত্তম? কে আমার চেয়ে মর্যাদাবান? আমার চেয়ে সম্মানিত জীবন আর কার হতে পারে?”

হাদীসুন নাবী সা.

এই জন্যই রাসূল (সাঃ) এর নিমেড়বাক্ত বাণী সম্পূর্ণ সত্যি, “সবচেয়ে উত্তম লোক হচ্ছে সে,

যে সব সময় আল্লাহর পথে ঘোড়ার লাগাম ধরে তৈরী থাকে।

যখনই সে জিহাদের ডাক শুনতে পায় দ্রুতবেগে সেদিকে ধাবিত হয় মৃত্যুর খোঁজে এবং আগ্রহের সহিত শহীদ হয়ে যায়।”

সুতরাং, প্রথম ফরয হচ্ছে তাওহীদ… আল্লাহর একত্ববাদ (মহিমাময় ও মহানুভব তিনি)

তাওহীদ উল উবুদিয়্যাহ; আল্লাহর সকল নাম ও গুণাবলী মেনে নেয়া;

মেনে নেয়া যে, আল্লাহ তা’আলাই হচ্ছেন আল-লাতীফ (সবচেয়ে দয়ালু); মেনে নেয়া যে তিনি আল-ক্বারিব (সবচেয়ে নিকটে)

তিনি যে রকম নিকটে থাকা বুঝিয়েছেন; মেনে নেয়া যে তিনি আস-সামি’ (সব কিছু শুনেন) যেরকম তাঁর শুনতে পাওয়াকে বুঝিয়েছেন… এরকম ভাবে সব গুণাবলী।

দ্বিতীয়তঃ ইয্যার তারবিয়্যাহ (বেড়ে উঠা, সম্মান ও মর্যাদা বাড়ানো) দরকার মানুষের অন্তরে।

কারণ পরাজয় ও নির্যাতনের ফলে অন্তরে ভয় ঢুকে… এবং বিজয় ও সাহসিকতা, দৃঢ়তা, সম্মান ও মর্যাদা বয়ে আনে।

কিন্তু সম্পদ, ক্ষমতা ও জীবনের ভয় নির্যাতন ডেকে আনে।

পক্ষান্তরে এই সব থেকে মুক্তি বয়ে আনে সম্মান।

“সম্মান রয়েছে ঘোড়ার রূঢ় পিঠের ওপর, এবং মর্যাদা-গৌরব জন্ম হয় নিদ্রাবিহীন রাত ও রাত্রির অক্লান্ত যাত্রার মাঝে।”

তথ্যসুত্র

উপরোক্ত লেখাটি সম্পূর্ণ সংগ্রহ করা। লেখাটি আত তিবয়ান পারলিকেশন থেকে সৈজন্য সংখ্যা হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছিল। উক্ত লেখাটির পিডিএফ লাইব্রেরী ভার্সন দেখুন,

Scroll to Top