নবুয়ত পূর্ব জীবন ও রাসূল সা.

মহানবী সা. এর নবুয়ত পূর্ব জীবন ছিল খুবই বৈচিত্রময় ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ একটি জীবনধারা। তিনি ছিলেন একাধারে সকল গুণের অধিকারী।

তিনি ছিলেন দূরদর্শিতা, সত্যপ্রিয়তা এবং চিন্তাশীলতা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যরাজির সুউচ্চ মিনার।

পরিচ্ছন্ন চিন্তা, পরিপক্ক ধারণা ও দূরদর্শিতার গুণ তার মধ্যে পরিপূর্ণরূপে বিদ্যমান ছিল।

দীর্ঘ সময়ের অবিরত সাধনায় তিনি সত্য এবং ন্যায়ের পক্ষে আল্লাহর সাহায্য লাভ করতেন।

পরিচ্ছন্ন, মার্জিত, সৌন্দর্যমন্ডিত বিবেক বুদ্ধি, উন্নত স্বভাব তাকে আরো ফুঁটিয়ে তুলেছিল।

তিনি মানুষকে পৌত্তলিকতার অন্ধকারে নিমজ্জিত দেখে গভীরভাবে মর্মাহত হতেন। মুশরিকদের থেকে নিজেকে দূরে রাখতেন।

অধিকাংশ সময় তিনি নির্জন পরিবেশে ধ্যান-ধারণায় ডুবে থাকতেন। তিনি কখনো মদ বা অ্যালকোহল স্পর্শ করেন নি।

কোনো দেবতার নামে বলি দেয়া পশুর গোশত খান নি। মুশরিকদের ধর্মীয় কোনো উৎসব বা মূতিপূজায় কখনো যোগদান করেন নি।

খারাপ কাজের বাসনা – নবুয়ত পূর্ব জীবন

হযরত আবুল হাসান আলী ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আসীর রহ. বলেন, রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন,

অন্ধকারযুগের লোকেরা যেই কাজ করতো, দুইবার ব্যতিত কখনো আমার সে সকল কাজ করার ইচ্ছা জাগ্রত হয় নি।

আর সেই দুইবার আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে বাঁধা দেয়া হয়েছে। এরপর থেকে কখনো কোনো খারাপ কাজে নবীজি লিপ্ত হন নি।

আল্লাহর বিস্ময়কর সাহায্য – নবুয়ত পূর্ব জীবন

নবীজি সা. বলেছেন, নবুয়তের আগে আমি এক জায়গায় বকরি চরাতাম। আমার সাথে আরো একজন ছেলে ছিল। একদিন আমি তাকে বললাম,

তুমি আমার বকরিগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখলে আমি মক্কা শহরে গিয়ে অন্যান্য যুবকদের সাথে রাতে গল্প-গুজব করতাম।

ছেলেটি রাজী হয়ে আমার বকরির দায়িত্ব নিল। কিছুদূর হেঁটে একটা ঘরের নিকট এসে বাজনার শব্দ শুনতে পেলাম।

জিজ্ঞাসা করলাম একজনকে। বললো, অমুকের সাথে অমুকের বিয়ে হচ্ছে।

আমি বাজনা শোনার জন্য বসে পড়লাম। কিন্তু আল্লাহ আমাকে চোখে তন্দ্রা ঢেলে দিলেন। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালবেলা রোদের আলোয় আমার ঘুম ভাঙ্গলো।

এরপর আমি রাখাল ছেলেটির নিকট গিয়ে ঘটনাটা  খুলে বললাম। আরো একদিন আমার সাথে এমন ঘটেছিল। সেদিনও ঘুম আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।

কাবা গৃহ নির্মাণকালে নবীজি – নবুয়ত পূর্ব জীবন

বুখারী শরীফে হযরত জাবের রা. হতে বর্ণিত আছে, কা’বা গৃহ নির্মাণকালে রাসূল সা. তার চাচা হযরত আব্বাস রা. এর সাথে পাথর বহন করছিলেন।

তখন আব্বাস রা. তাকে বললেন, তুমি তোমার লুঙ্গি খুলে কাঁধের উপর রাখ। পাথরের ধুলাবালি থেকে বাঁচতে পারবে।

নবীজি লুঙ্গি খোলার সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। একটুপর হুশ ফিরে এলে তিনি বলতে লাগলেন, আমার ‍লুঙ্গি, আমার লুঙ্গি!

এরপর তাকে তার ‍লুঙ্গি পরিয়ে দেয়া হলো।

দুনিয়ার সর্বোত্তম গুণী ব্যক্তি

রাসূল সা. নবুয়ত পূর্ব জীবন এবং নবুয়ত পরবর্তী জীবনে ছিলেন মহান চরিত্র ও উত্তম স্বভাবের গুণাবলিতে ভরপুর একজন ব্যক্তি।

তিনি ছিলেন সর্বাপ্রেক্ষা অধিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন উন্নত চরিত্রের অধিকারী, সৎ প্রতিবেশী, সর্বাধিক দূরদর্শী, সর্বশ্রেষ্ট সত্যবাদী ব্যক্তি।

ভালো কাজে তিনি ছিলেন অগ্রগামী। প্রতিজ্ঞা পালনে ছিলেন সকলের চেয়ে অগ্রণী।

আমানত রক্ষায় ছিলেন সর্বাগ্রে। তার বংশের লোকেরা তার নাম দিয়েছিল আল আমিন।

হযরত খাদিজা রা. বলেন, তিনি বিপদাপন্নদের বোঝা বহন করতেন। দুঃখিদের সাহায্য করতেন। মেহমানদের মেহমানদারী করতেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজে সাহায্য করতেন।

তথ্যসুত্র

আর রাহিকুল মাখতুম। পৃষ্ঠা ৭০-৭১

আরো পড়ুন

হালিমার বাড়িতে নবীজির শৈশব

হযরত আবু বকরের মদীনায় হিজরত

নবীজির জন্ম ও বিয়ে

নবীজির নবুয়তপূর্ব জীবন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top