লোডশেডিং কেন হয় – মাথার উপরে ঘুরতে থাকা ফ্যানটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। আশেপাশে জ্বলে থাকা বাতিগুলো নিভে গেল। এই সময়টায় খুবই বিরক্তি ধরে যায়। খাঁটি ইংরেজিতে এটাকে লোডশেডিং বলে।

এককালে আমাদের দেশে অনেক লোডশেডিং হতো। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। একবার কারেন্ট গেলে আসার আর খবর থাকতো না। তিন-চার ঘন্টা পর নামেমাত্র আসতো। ঘন্টাখানেক থাকতে না থাকতেই আবার ধপ্ করে চলে যেত।

ছোটবেলায় ভাবতাম, কারেন্টের অফিসের লোকেরা হয়তো সুইচ অফ করে রাখে। এরপর আর ছাড়ে না।

এত কিছুর পরও শৈশবে কারেন্ট চলে গেলে এতটা বিরক্তবোধ করতাম না আজকের মতো। সে সময় প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল। বিদ্যুৎ না থাকলেও বাতাস সর্বক্ষণ থাকতো। আরো ছিল গাছের নিচে আরামদায়ক ছায়া।

আজকে আমরা একটু পর্যালোচনা করি, লোডশেডিং কেন হয় এটা নিয়ে।

লোডশেডিং কেন হয়

উন্নয়ন

একটা সময় দেশের সরকার পরিবর্তন ঘটলো। পরিবর্তন ঘটলো আরো অনেক খাদের ব্যক্তিদের।
সবাই কথা দিল, তার শাসনামলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে।

আমরা সাধারণ জনগণ। আমাদের কথা কেই বা শোনে। মেনে নিলাম বা মেনে নিতে বাধ্য হলাম।
দেশ উন্নয়নে ভাসতে শুরু করলো। এমন উন্নয়ন তুমি অন্য কোথাও দেখবে না।

একদিকে মানুষ মরে। অন্যদিকে ফুল উৎসব হয়। একদিকে বন্যায় মানুষ নিজের বাস্তভিটা হারিয়ে আর্তনাদ করতে থাকে।
অন্যদিকে কেউ বা সেতু উদ্বোধন করতে করার প্রস্তুতি নেয়।

আমরা উন্নয়ন দেখতে লাগলাম। আমাদেরকে উন্নয়ন গলদঃকরণ করানো হলো। এসব উন্নয়ন দেখতে আপনি অবাক হবেন না।
বরং হয়ে যাবেন কিংকর্তব্যবিমুঢ়। এখন আসেন জেনে নেই, লোডশেডিং কেন হয়

বিদ্যুৎ শূন্যতা

হঠাৎ করে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ‍উৎপাদনে ধস নামলো। ঘণ ঘণ লোডশেডিং হতে লাগলো। বিদ্যুৎ উৎপাদনে আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হতে লাগলো। অর্থনীতি এই পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে হোঁচট গেল মারাত্মকভাবে।

এত এত অসুবিধার মধ্যেও যখন নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা সমানে মিথ্যা কথা বলে যায়, তখন আপনি কি করবেন? এটাকেও কি উন্নয়ন বলে ধরে নিবেন?

সরকার বললো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করতে হবে। আচ্ছা মেনে নিলাম।
কিন্তু পরক্ষণে বললো, রাত আটটার পরে দোকান খোলা রাখা যাবে না। অফিস-আদালতে এসি চালানো যাবে না। মসজিদের এসি বন্ধ রাখতে হবে। আরো আরো অনেক নির্দেশ।

অসাধারণ কথা। কিন্তু কথা হলো, সরকারি ভবন ও অফিসগুলো কি এই নিয়ামগুলো মান্য করে?
এখন পর্যন্ত সরকারি যত ভবন বা অফিস আদালতে গিয়েছি, সব জায়গায় একটা কমন জিনিষ দেখেছি। তা হলো, জনসংখ্যা ‍অনুযায়ী জায়গা বেশি।

বিশাল বড় এক তলায় বাতি জ্বলে আছে, ২৮ টা। অথচ সেখানে লোক রয়েছে মাত্রা ৩ জন। এটা কি বিদ্যুৎ অপচয় নয়?

কেন ঘটলো লোডশেডিং ?

এই প্রশ্নের উত্তরটি এক কথায় দেয়া বড়ই মুশকিল। আপনি শত চেষ্টা করলেও এক কথায় এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন না।
দেশে যখন লোডশেডিং  শুরু হয় তখন সরকার বলেছিল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

কখনো কি আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে, কেন ই বা আমাদের দেশের বিদ্যুৎ এর সাথে রাশিয়া-ইউক্রেনের সম্পর্ক?

প্রথমত একটা বিষয় জানা দরকার যে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে কি কি লাগে?

এগুলোর মধ্যে প্রথমত রয়েছে, গ্যাস। কয়লা। ডিজেল। অন্যদেশ থেকে রপ্তানী করে আনার সময় জাহাজ।

সরকার বলেছিল, কয়লা না থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। অথচ রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র ২.৩% কয়লা ব্যবহার হয়।

একটু হেসে নেন। যেখানে মাত্র ৩% বিদ্যুৎ ও কয়লা দিয়ে ব্যবহার করা হয় না, সেখানে নাকি কয়লার অভাব দেখা দিয়েছে?

বিদ্যুৎ উৎপাদনের আরেকটি উপকরণ হলো, গ্যাস। গ্যাসের দাম কবে কতুটুকু বেড়েছে? এখানেই আসে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের বিষয়টি।
শুধুমাত্র যেদিন ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, সেদিনই দাম বেড়ে গিয়েছিল।

বর্তমানে এই দাম গত বছরের গ্যাসের দামের সমান অনুপাতেই রয়েছে।

এরপর আসি ডিজেলের দামের কথায়। ডিজেলের দাম অবশ্য বেড়েছে। তাও প্রায় ২৫%।
কিন্তু এই ডিজেল দ্বারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় মাত্র ৭%। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?

ও হ্যাঁ, আরেকটা বাকী আছে। তা হলো, জাহাজ ভাড়া।
করোনার সময় যখন বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক ধস নেমেছিল, শুধুমাত্র সেসময় জাহাজের ভাড়া বেড়ে গিয়েছিল। বর্তমানে জাহাজের ভাড়া আগের মতোই আছে।

তাহলে মূল ঘটনা কি?

গতমাসের শেষের দিকে হঠাৎ করে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ধস নামে। আগে ডলারের  ‍মূল্য ছিল ৮৬ টাকা করে। বর্তমানে (16 July 2022) ৯৩.৯৮ টাকা করে। অর্থাৎ ৯৪ টাকা করে ডলারের মূল্য।

দেশে যখন দুর্নীতি করতে করতে মানুষ জনগণের টাকা মেরে সম্পদের পাহাড় বানায় তখন তো অর্থনৈতিক ধস নামবেই।
আগে যেই জিনিষ ২০ টাকা করে ছিল। এখন দাম বেড়ে ২৫ টাকা করে তা বিক্রি হচ্ছে।

এই অর্থনৈতিক অসুবিধার কারণেই বেড়ে গেছে বিদ্যুৎ মূল্য। আর এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে।

দেশের অর্থনীতি আরো খারাপ পর্যায়ে যেতে পারে। আল্লাহ মালুম।

কিন্তু এই দুর্নীতিবাজরা কখনো শুধরাবে না। তারা সর্বদা ২ নম্বরি করেই যাবে। তাদের হেদায়াত কামনা করছি। অন্যথায় তাদের…………..

আরো পড়ুন

মোবাইল কেন আপনার বন্ধু নয়?

শিশুদের শিক্ষা অর্জনে বাবা মায়ের ভূমিকা কতুটুকু?

শিক্ষক হত্যা আমাদের কি বার্তা দেয়?

লোডশেডিং বনাম জনগণ

রোড এক্সিডেন্ট কেন হয়?

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top