উসমান রা. এর হাবশায় হিজরত – হযরত উসমান রা. এর ইসলাম গ্রহণের পর নবীজি সা. অত্যন্ত খুশী হন। মুসলমানদের সংখ্যা তখন ক্রমে ক্রমেই বাড়তে থাকে।

নবীজি সা. তখন তার স্বীয় কন্যা হযরত রুকাইয়া রা. কে উসমান রা. এর সাথে বিবাহ দেন। ইতিপূর্বে রুকাইয়াকে নবীজি আবু লাহাবের পুত্রের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন।

কিন্তু আবু লাহাব নবীজির সাথে শত্রুতার জের ধরে যখন সূরা লাহাব অবতীর্ণ হয় তখন সে ও তার স্ত্রী তার ছেলে উতবাকে নবীকন্যা রুকাইয়া রা. কে তালাক দেয়ার আদেশ দেয়।

যখন হযরত উসমান রা. নবীজির মেয়ের তালাকের সংবাদ শুনেন তখন তিনি নবীজির নিকট এসে রুকাইয়া রা. কে বিয়ের প্রস্তাব দেন।

পড়ুন: উসমান রা. এর জন্ম

নবীজি সা. তখন তার প্রস্তাব গ্রহণ করে তার মেয়েকে উসমান রা. এর হাতে তুলে দেন। উসমান রা. ছিলেন কুরাইশদের মধ্যে সুদর্শন যুবক।

নবীজির কন্যা রুকাইয়া রা. ও ছিলেন পরম সুন্দরী ও ধৈর্য্যশীল নারী। যখন উভয়জনের মধ্যে বিয়ে সংগঠিত হলো তখন মানুষ বলতে লাগলো,

মানুষ দেখেছে সুন্দর যুগল, তারা ছিলেন উসমান ও রুকাইয়া।

নবীকন্যার বিয়ের পর একদিন

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে উসমান কুরাইশি রা. থেকে বর্ণিত যে, নবীজি একবার তার কন্যার ঘরে উপস্থিত হন।

তখন রুকাইয়া রা. উসমানের মাথা ধুইয়ে দিচ্ছিলেন।

নবীজি রুকাইয়াকে বলেছিলেন, মা আবু আব্দুল্লাহর (উসমান রা. এর উপনাম) সাথে উত্তম আচরণ করবে।

সে আমার সাহাবী ও চরিত্রে আমার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংগতিশীল।

আবু লাহাব ও তার স্ত্রী ভেবেছিল, নবীজির মেয়েকে তালাকের মাধ্যমে তারা নবীজিকে মানসিক হয়রানিতে ফেলবে।

কিন্তু আল্লাহ হযরত রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুম রা. এর কপালে সৌভাগ্য লিখে রেখেছিলেন।

উসমানের বিয়ের মাধ্যমে আবু লাহাব ও উম্মে জামিল লজ্জিত হয়।

উসমান রা. এর হাবশায় হিজরত

উসমান রা. এর হাবশায় হিজরত

যখন মক্কায় আস্তে আস্তে ইসলামের বাণী প্রকাশ হতে লাগলো তখন মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জানতে লাগলো।

ধনী ও উচ্চশ্রেণীর লোকেরা ইসলামের বিরোধিতা শুরু করলো।

গরীব-অসচ্ছল ব্যক্তিরা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে লাগলো। এটা মক্কার মুশরিকরা সহ্য করতে পারে নি। তারা মুসলমানদের উপর নির্যাতন শুরু করলো।

হযরত উসমান রা. সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি হয়েও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তার চাচা হাকাম বিন আস তাকে রশি দিয়ে বেঁধে জিজ্ঞাসা করতো,

তুমি তোমার বাপ দাদার ধর্ম ছেড়ে নতুন ধর্ম গ্রহণ করতে গেলে কেন? যতক্ষণ তুমি বাপ-দাদার ধর্মে ফিরে না আসবে, ততক্ষণ আমি তোমাকে বাঁধনমুক্ত করবো না।

উসমান রা. তখন নির্ভীকচিত্তে বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! আমি ওই ধর্ম থেকে ফিরে আসবো না। হাকাম শেষ পর্যন্ত রশি খুলে দিতে বাধ্য হয়।

মুসলমানদের উপর নির্যাতনের মাত্রা ছিল খুবই বেশি। কাফেররা হযরত ইয়াসির রা. ও তার স্ত্রী সুমাইয়া রা. কে হত্যা করে।

পড়ুন: উসমান রা. এর ইসলাম গ্রহণ

নবীজি তখন মুসলমানদের নিরাপত্তা নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি নিরাপদ স্থান খুঁজতে থাকেন। সাহাবাদেরকে তিনি তখন বলেন,

তোমরা যদি হিজরত করে হাবশায় (ইথিওপিয়া) চলে যাও তাহলে হয়তো শান্তিতে জীবন-যাপন করতে পারবে। কারণ সেখানকার বাদশাহ্ কল্যানকামী।

সাহাবারা তখন এক এক করে হাবশায় পাড়ি জমাতে লাগলেন। সাহাবারা লোহিত সাগরের উপকূলে গিয়ে জাহাজে করে হাবশায় হিজরত করেন।

উসমান রা. এর হাবশায় হিজরত হয় নবুয়তের পঞ্চম বর্ষে। হযরত উসমান রা. ও তার স্ত্রী রুকাইয়া রা. হাবশায় হিজরত করেন।

বাদশাহ নাজ্জাসির ঘটনা পড়ুন

মুক্তভাবে আল্লাহর ইবাদত করার সৌভাগ্য তারা সেখানে অর্জন করেন।

উস্মাহর মধ্যে উসমান ই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি নিজের স্ত্রীসহ হিজরত করেন।

এরপর যখন নবীজি হিজরত করে মদীনায় চলে যান তখন তারা হাবশা থেকে ফিরে আসে।

তথ্যসুত্র

উসমান ইবনে আফফান ৪০-৪৫

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খন্ড ২

আর রাহিকুল মাখতুম

হাবশায় হিজরত কবে সংগঠিত হয় ?

নবুয়তের পঞ্চম বছরে হাবশায় হিজরত সংগঠিত হয়

হাবশায় প্রথম পরিবার নিয়ে হিজরত করেন কে ?

হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘হাবশার মাটিতে প্রথম হিজরতকারী ওসমান ও তাঁর স্ত্রী রুকাইয়া রা.।’ লুত (আ.)-এর পর ওসমান রা. দ্বীনের জন্য পরিবার-পরিজনসহ প্রথম হিজরত করেন

Scroll to Top