শিক্ষক হত্যা আমাদের কি বার্তা দেয়

শিক্ষক হত্যা আমাদের কি বার্তা দেয় – শৈশবে যখন শিক্ষকরা রাস্তার পাশ দিয়ে যেতেন আমরা তখন অন্যপাশে চলে যেতাম।

শিক্ষক যদি কখনো কোনো কারণে রাগারাগি করতেন তাহলে আমরা নিজেদের সংশোধনের উপায় খোঁজতাম।

শৈশবে পড়ুয়া শিক্ষকদের অনেকর খোঁজ খবর আজ আমার কাছে নেই।

শিক্ষক হত্যা

কিন্তু আমি তাদের শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করি আজও। আমি যেদিন প্রথম স্কুলে ভর্তি হলাম সেদিন স্বভাবগত অনেক কান্না করেছিলাম। ভেবেছি যে,

আমাকে হয়তো আর বাসায় নেয়া হবে না। আমার ম্যামরা সেদিন মাতৃত্বের সোহাগ দিয়ে আমাদেরকে সাহস দিয়েছেন। পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী করেছেন।

শৈশব থেকেই আমার স্মৃতিশক্তি খানিকটা দুর্বল। তাই স্কুলের অনেক টিচারদের এবং ম্যামদের আমার মনে নেই।

তাদের চেহারাও মনে নেই। কারো কারো আবছা আবছা চেহারা মনে থাকলেও তাদের নাম স্পষ্ট মনে নেই। তারা ই আমার ভিত্তি।

মাদ্রাসা জীবন – শিক্ষক হত্যা আমাদের কি বার্তা দেয়

আট বছর বয়সে মাদ্রাসায় ভর্তি হই আমি। প্রথমে কিছুদিন পড়েছিলাম ইস্কাটনে একটা মাদ্রাসায়। এরপর ঢাকা শান্তিনগরে ‘মুসলিম জাতীয় মাদ্রাসা’য় ভর্তি হই আমি। এখানে কাঁটে দুই বছর।

এই দুই আড়াই বছরে আমি প্রায় ৫ জন শিক্ষকের কাছে পড়েছি। অনেক সহপাঠীদের সাথে মিশেছি।

এই শিক্ষকদের আজও প্রয়োজন অনুভব করি। তারা আমার ভিত্তি। তারা আমাকে কাঁদা মাটি থেকে গড়ে তুলেছেন। এরপর ২০১০ সালের পর ভর্তি হই মাদরাসাতুল ইহসান লি উলূমিল কুরআন মাদ্রাসায়।

এখানে আমার ৫ বছর কাঁটে। এই পাঁচ বছরে আমি প্রায় কয়েকজন শিক্ষকের কাছে পড়েছি।

শফীক সাহেব, সুলাইমান সাহেব, সাইদুর রহমান সাহেব, তারেক সাহেব অন্যতম। তারা আমাকে কুরআন শরীফ মুখস্ত করতে সাহায্য করেছেন। তারা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন।

আমার ভুলগুলো সংশোধন করেছেন। প্রয়োজনবোধে আমাকে শাসন করেছেন।

তাদেরকে আজো শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করি আমি। সুলাইমান সাহেবের সাথে আজো আমার পরিচয় আছে। যদিও গাফলতির কারণে তার সাথে দেখা করতে পারি না।

বনশ্রীতে তার একটা মাদ্রাসা আছে। “উবাই ইবনে কাব রা. তাহফীজুল কুরআন মাদ্রাসা”।

হাফেজ হওয়ার পর এক বছর পড়ি  মাদরাসাতুল হেরায়। এখানে সেকেন্দার সাহেব, কামরুল হাসান সাহেবের কাছে পড়ি। কামরুল হাসান সাহেব আমাকে লেখালেখির প্রতি উদ্ভূদ্ধ করেছেন।

আমাকে বই পড়তে উৎসাহিত করেছেন। আমার লেখা কবিতা আগ্রহ নিয়ে পড়েছেন।

কিতাব বিভাগে যখন ভর্তি হলাম তখন পরিচিত হলাম আরেক নতুন জগতের সাথে। সাথে অগণিত শিক্ষক মণ্ডলীর সাথে।

সবাই যেন আকাশের এক একটি নক্ষত্র। সবাই ইলমী শিক্ষা-দীক্ষায় নিজের বিলিয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়্যত।

তাদের মধ্য থেকে কারো সাথে যদি কখনো রাস্তায় দেখা হয়, তাহলে শ্রদ্ধাভরে আমি তার পাশ দিয়ে সালাম দিয়ে হেঁটে যাই। তিনি দাঁড়াতে বললে আমি দাঁড়াই। তিনি বসতে বললে আমি বসি।

বড়দের সম্মান করা – শিক্ষক হত্যা আমাদের কি বার্তা দেয়

নবীজি হাদীসে বলেছেন, তোমরা বড়দের সম্মান করো এবং ছোটদের স্নেহ করো।

আমরা এই হাদীসের উপর যথাযথরুপে আমল করার চেষ্টা করি। তারপরও মাঝেমধ্যে ভুল হয়ে যায়। নিজেকে ধিক্কার জানাই তখন। নিজেকে ভৎসনা করি এরুপ কাজের জন্য।

শিক্ষক হত্যা

কিছুদিন আগে একটা ঘটনা চোখে পড়লো সোস্যাল মিডিয়ার কল্যানে। একজন ১০ম শ্রেণীর ছাত্র তার শিক্ষককে হত্যা করেছে। ঘটনাটা চোখে পড়ার পর আশ্চর্য লাগলো আমার নিকট। খোঁজা শুরু করলাম কারণগুলো। নয়াদিগন্ত, প্রথম আলো র মাধ্যমে জানতে পারলাম আরো অনেক রহস্য।

ছেলেটি একটা মেয়েকে উত্যক্ত করছিল। স্যার এটা দেখে তাকে এরূপ কাজ করতে নিষেধ করে। শিক্ষার্থী এতে চটে যায় বিষণভাবে। শিক্ষকের কাজ তো শুধু ক্লাসে গতানুগতিক ধারায় পড়ানো। তিনি কেন আমার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবেন?

এমন মনোভাব ছেলেটিকে উত্যক্ত করে তোলে। সে শেষ পর্যন্ত ক্ষোভে শিক্ষককে হত্যা করে।

কিছু পর্যালোচনা – শিক্ষক হত্যা 

মানুষ কতটা নিচে নামলে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে? যারা সমাজকে শিক্ষা দেয়, আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর যারা তারা আজ শিক্ষার্থীর ক্ষোভের শিকার। একটা মেয়েকে উত্যক্ত করা তো অনেক বড় অপরাধ।

দেশে যদি সঠিক ইসলামী সরকার থাকতো তাহলে এই কাজের জন্য তাদের আটক করা বা হত্যা করা বৈধ হতো।

শিক্ষকের তো এই অধিকারটুকু রয়েছে যে, ছাত্র কোনো অপরাধ করলে সে তাকে শাসন করবে।

কিন্তু শিক্ষার্থী যখন শিক্ষককে হত্যা করে তখন শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের দায়িত্ব কি থাকে?

তার বাবা-মায়ের উচিৎ ছিল, সন্তানকে নিজ হাতে পুলিশের নিকট সমর্পন করা। কিন্তু সেটা সে করলো না।

কারণ, এতে নিজের সন্তান যে জেলে যাবে। সেই বাবা-মা সন্তানকে কি শিক্ষা দিল, এটাও একটা প্রশ্ন থেকে যায় মনে।

বাবা-মা হলো সন্তানের প্রথম শিক্ষক। সন্তানকে সন্ত্রাস বানিয়ে, মেয়েদের উত্যক্ত করা শিক্ষা দিয়ে বাবা-মা যেই অপরাধ করেছেন, এর জন্য উচিৎ তাদেরকে আটক করা।

আমাদের শিক্ষকরা যদি আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেন, এর জন্য দায়ী কে? কবে যেন এক সরকার প্রধান বলেছিল,

আমাদের দল কি দিয়েছে? উপস্থিত জনতা বলেছিল, মোবাইল/ইন্টারনেট দিয়েছে।

বাহ্, কি অসাধারণ বক্তব্য। অসাধারণ গিফট। যেই সরকার জনগণকে নৈতিকতা শিক্ষা দিতে পারলো না,

স্কুল কলেজে সরকারি দল প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করলো, সেই সরকার কি কখনো এর জন্য জবাবদিহিতা করবে না?

অবশ্যই তাদের হিসাব নেয়া হবে। এইকালে না হয় পরকালে। আল্লাহ উত্তম বিচারক।

মানুষ উন্নয়ন আর চেতনা ধুয়ে পানি খাবে না। ধন্যবাদ।

তথ্যসুত্র, যুগান্তর, বাংলা টিবিট্রিউন

আরো পড়ুন,

আবু বকর রা. কিভাবে খলিফা হন?

নামাজে পড়া সূরাগুলোর অর্থ কি?

শিয়া উবায়দিয়া সাম্রাজ্যের সহায়ক আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ীর নির্মম পরিণতি

মোবাইল কেন আপনাকে বিপদে ঠেলে দিচ্ছে

About The Author

Scroll to Top