শাহবাগী বনাম শাহবাগ বিরোধী সেক্যুলার – ২০১৩ সালে যখন শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চে আন্দোলন শুরু হলো, এরপর থেকেই সেক্যুলার সমাজের কেউ কেউ এটির বিরোধিতা শুরু করল।
পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার কর্মী, দৈনিক পত্রিকা ও সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকও এই আন্দোলনের বিরোধিতা শুরু করে। কিন্তু কেন?
শাহবাগী বামপন্থিদের মূল টার্গেট ছিল সংস্কৃতির উপর। তাই প্রথমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তারা আন্দোলন শুরু করে।
ক্রমে ক্রমেই এটি ইসলামবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। এই সময়টাতে বাংলা ব্লগের যুগ ছিল ইন্টারনেট জগতে।
বিভিন্ন ব্লগ ও ফেসবুকে ইসলামবিরোধী কথাবার্তা, আল্লাহ ও তার রাসূলকে গালি দেওয়া ছিল শাহবাগী নাস্তিকদের প্রতিদিনকার রুটিন।
পরবর্তী সময়ে যখন একজন নাস্তিককে কিছু ইসলামপ্রিয় ভাই জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয় তখন থেকে শাহবাগীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাধারণ মুসলিমরা জেগে উঠে।
শাহবাগ বিরোধী সেক্যুলাররা শাহবাগীদের পক্ষ ত্যাগ করেছিল আদর্শিক কারণে। সেক্যুলারিজমকে কয়েকটি ভাগে রাখা যায়।
প্রথমটি হলো কট্টরপন্থি সেক্যুলার। তাদেরকে আরেকভাবে বলা যায় নাস্তিক্যবাদী সেক্যুলার।
এরাই শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিল। ইসলামবিরোধী লেখালেখি, স্লোগানে তারা শাহবাগকে মুখিয়ে রেখেছিল পুরোটা সময়।
দ্বিতীয়টি হলো উদারপন্থি সেক্যুলার। এরা যদিও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ধর্মকে আনতে নারাজ, কিন্তু কেউ ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করলে সে চুপ থাকে না।
সে তখন ধর্মীয় সহানুভূতি থেকে ইসলামের পক্ষে থাকতে বাধ্য হয়। নাস্তিকদের বিরুদ্ধে তাদের সংঘাত শুরু হয়।
তবে এখানে লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশে শাহবাগী বিরোধী সেক্যুলাররা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুভূতি থেকেই শাহবাগ বিরোধী হয়নি।
এর পেছনে রাজনৈতিক কারণও বিদ্যমান ছিল। কারণ, শাহবাগ শিশু থেকে বড় হয়েছে আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় ও পুলিশি পাহারায়।
তৃতীয় আরেকটি আছে, এটিকে নিউট্রাল সেক্যুলার বলা হয়। কিন্তু শাহবাগ আন্দোলনের ক্ষেত্রে এটা তেমন প্রযোজ্য নয়। বাংলাদেশের সেক্যুলার পাড়া তখন প্রথম দুই ভাগেই ভাগ হয়েছিল।
2
এখন কথা হলো, আমাদের জন্য কি কোনো সেক্যুলাররা উত্তম? এটার এককথায় উত্তর আছে আবার ব্যাখ্যামূলক উত্তর আছে।
একটা মূলনীতি বুঝলে এটা বোঝা সহজ। সেক্যুলাররা যে-ই ক্যাটাগরিরই হোক না কেন, সে কখনো ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রপরিচালনার পক্ষে নয়।
তাই এখানে আমাদের অবস্থানটি হওয়া উচিত, “শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু।” প্রাচীন যুদ্ধবিষয়ক বইতে এই বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে।
যেমন চাণক্যের অর্থশাস্ত্র, সানজুর আর্ট অব ওয়ার, ম্যাকিয়াভেলির দ্য প্রিন্স ইত্যাদি।
তবে এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, নতুন এই বন্ধুত্বের সীমারেখা আছে।
কতটুকু সীমানার মধ্যে বন্ধুত্ব থাকবে, এটা বুঝতে হবে। যদি আমরা তাদেরকে আমাদের সর্বক্ষেত্রে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করি তাহলে আমাদের হতাশ হতে বেশি সময় লাগবে না।
সর্বশেষে মূল কথাটি বলে দিই, আমাদের লক্ষ্য ইসলামী শরীয়াহ। এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সকল ক্যাটাগরির সেক্যুলাররাই আমাদের শত্রু হিসেবে গণ্য হবে।
পরিস্থিতি আমাদের ও তাদের মধ্যে শত্রুতা তৈরি করতে বাধ্য করবে। তবে বুদ্ধিমান তো সেই ব্যক্তি, সে শত্রুকে ব্যবহার করতে জানে। নিজে শত্রুর দ্বারা ব্যবহৃত হয় না।
শাপলা হয়েছিলো নবীপ্রেম থেকে। সে কমিটমেন্ট কি বহাল আছে? নাকি কেবল অন্তঃসারশূন্য আনুষ্ঠানিকতা, আর অতিকথন? শাপলা নিয়ে রাজপথের সমকালীন গর্জন এবং ইফতার মাহফিলগুলোতে আশেকে রাসূলদের মুক্তির কথা আসছে? জেলখানায় ইফতারের বন্দোবস্ত করা হয়েছে ঐ কারাবন্দী আশেকে রাসূলদের জন্য? এবং বাহিরে তাদের পরিবারের লোকজনের জন্য?
অনেকেই তো পবিত্র রাওজা যিয়ারত করে গেলেন কমপক্ষে বিগত ১বছরে। তারা নবীজির রওজায় কি কিছু বলে গিয়েছিলেন? আবার বলছি শাপলা হয়েছিলো নবীপ্রেম থেকে। — হারুন ইজহার হাফিঃ
শাপলার টপ প্রায়োরিটি, নবীজী ﷺ এর সম্মান একদিকে আর সারা দুনিয়া আরেকদিকে। শাহবাগ বিরোধিতার মূল হচ্ছে নবীজী ﷺ এর সম্মান। এটা যারা ধারণ করতে পারে না, তাদের সন্দেহ করুন। তাদের মাকসাদ ভিন্ন। ©