ভালোবাসা দিবস নিয়ে কিছু কথা – ইংরেজ ও পশ্চিমাদের একটা বিখ্যাত থিউরি আছে, ডিভাইড এন্ড রুলস। তথা ভাগ করো এবং শাসন করো। এখানে শাসন করা মানে অনেক কিছুই হতে পারে।
রাজ্য শাসন করা, দেশ শাসন করা, মন-মস্তিষ্ক শাসন করা, অনুভূতি শাসন করা ইত্যাদি।
প্রথম দুইটি উদাহরণ যতটা সহজে বুঝা যায়, শেষ দুইটি উদাহরণ বুঝতে ততটাই বেগ পেতে হবে।
একটু অন্যদিক থেকে আসি। ইংরেজদের শাসনামলে বাংলায় অনেক জমিদার ছিল। তাদের বেশিরভাগ ছিল হিন্দু। কিন্তু এই জমি তাদের ছিল না।
অধিকাংশ জমি ছিল মসজিদ-মাদ্রাসার, ওয়াকফ করা মুসলমানদের সম্পত্তি। ইংরেজরা আইন তৈরি করে এই সকল জমিগুলো দখল করে নেয়।
এখন এত এত জমিগুলো কি করবে তারা? এখানেই তাদের দরকার হয় পক্সিদের (প্রতিনিধিদের)। তারা অনেক বিশ্বাসঘাতক মুসলমানদের মধ্যে দেখেছে।
কিন্তু দেখা যেত, এই বিশ্বাসঘাতক মুসলমানরা মাসখানেক বা বছরখানেক পর ইংরেজদের বিরোধিতা করা শুরু করতো।
অবশেষে তারা মুসলমানদের উপর থেকে বিশ্বাস সরিয়ে বাংলা ও ভারতের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ফুট সোলজার বানায় তারা। ইংরেজরা হিন্দুদের পক্সি হিসেবে ব্যবহার করে।
এখানে ইংরেজরা সরাসরি হিন্দুদের রাজ্য শাসনই করতো না বরং ইংরেজরা হিন্দুদের মন-মস্তিষ্ক পর্যন্ত শাসন করতো।
এ জন্যই হিন্দুরা বাংলার এত এত জমির মালিক হয়। এই কালচারাল জমিদাররা ছিল মনস্তাত্তিকভাবে পরাজিত। তাদের নিজস্ব কোনো শেকড় ছিল না।
ইংরেজরা যা বলতো সেটাই তাদের নিকট মধুর বাণী মনে হতো। এমনকি হিন্দুদের আবেগ-অনুভূতি পর্যন্ত শাসন করেছে এই ইংরেজরা।
ইংরেজরা চলে গেলেও তাদের ফুট সোলজাররা রয়ে গেছে। পশ্চিমাদের ব্যাপারে আমাদের অনেকের একটা ধারণা হলো তারা ধর্মে বিশ্বাসী নয়।
কথাটা অর্ধেক সত্য। বরং তারা নিজেদের মতো ধর্মকে ব্যবহার করে।
আগে পোপদের হাতে ক্ষমতা ছিল তখন পোপেরা যেভাবে ইচ্ছা ছড়ি ঘুরাতে পারতো।
ইউরোপে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে – ভালোবাসা দিবস নিয়ে কিছু কথা
ইউরোপীয় খৃস্টানরা প্রতিমাসেই বিভিন্ন রকম দিবস পালন করতো। আমাদের দেশে যেমন দিবস পালন করার একটা হিড়িক আছে, সেটাও এসেছে এই পশ্চিমাদের থেকেই।
ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জ্যাক বি. অরুচ ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তার গবেষণা অনুযায়ী,
১৪ শতকের আগে কেউ এই ভ্যালেন্টাইন্স শব্দের এর নাম পর্যন্ত শুনে নি।
সর্বপ্রথম জিওফ্রে চসার নামে এক ইউরোপীয় কবি এই ভ্যালেন্টাইন্স শব্দ ব্যবহার করে।
বর্তমানে অনেকে এই ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিয়ে অনেক রকমের গালগল্প বর্ণনা করে। আবেগে আপ্লুত হয়। দুইটি কপোত-কপোতী এই গল্প বলে হারামে লিপ্ত হয়।
অথচ এই পুরো গল্পটিই বানানো। ভিত্তিহীন কথা এসব। ইউরোপীয়ানরা ফেব্রুয়ারী মাসে বেশ কিছু ধর্মীয় উৎসব পালন করতো।
যেমন, সেন্ট স্কলাসটিকা, সেন্ট অস্ট্রাবার্থা, সেন্ট ইউলেলিয়া ইত্যাদি। কিন্তু চার্চে লোক সমাগম এত বেশি হতো না।
পাদ্রীরা পড়ে গেল বিপদে। লোকজন না এলে তো দানের টাকাও পাওয়া যাবে না।
তাই ভ্যালেন্টাইন্স ডে নাম দিয়ে ফেব্রুয়ারীতে আকেটা ধর্মীয় উৎসবের ঘোষণা দিল পোপরা।
এমনকি তারা শুধু ঘোষণা দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয় নি। বরং বিভিন্ন উত্তেজক গল্প বলে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে লাগলো এই দিন পালনের জন্য।
এভাবেই একদল স্বার্থবাজ পোপদের প্ররোচনায় দেশে ভ্যালেন্টাইন্স ডে ছড়িয়ে পড়লো। যদিও এটার সাথে তখন এতটা ভালোবাসার ফ্লেভার যুক্ত ছিল না।
বাংলাদেশে কবে থেকে এই নষ্টামি শুরু?
বাংলাদেশে এই জিনিষটা আরো আশ্চর্যজনক। রক্ষণশীল একটি মুসলিম দেশে মানুষ কতটা অজ্ঞ, যা ঘটনা পড়লেই জানা যায়।
সাংবাদিক শফিক রেহমান দিবসটি বাংলাদেশে আমদানি করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এই লোক ছিলেন লন্ডনে।
দেশে ফিরে ১৯৯৩ সালে এই যিনা দিবসটি তিনি পালন শুরু করেন।
লন্ডনে দিবসটি ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ নামে প্রচলিত থাকলেও আমাদের দেশে তা প্রচার করা হয় শুধু ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ নামে।
পরবর্তী সময়ে এর নাম বদলে রাখা হয় ‘ভালোবাসা দিবস’। অথচ সবাই জানে—এটি মোটেও ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ এর সঠিক অনুবাদ নয়।
ব্যাপারটি ছিল সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যিনার কালচারকে সহজলভ্য করতেই এই ছলছাতুরির আশ্রয় নেওয়া হয়। শফিক রেহমান বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজে বলেছেন:
‘আমি বহু বছর লন্ডনে থাকার সুবাদে জানতাম, এখানে কিভাবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদ্যাপিত হয়।
কিন্তু বাংলাদেশে আমি এই নামের পরিবর্তে ভালোবাসা দিবস দিয়েছিলাম ইচ্ছে করে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে বললে অনেকে বলবে এটা ইউরোপীয় খৃস্টানদের উৎসব।
এভাবেই ইংরেজদের নিকট মনস্তাত্তিকভাবে পরাজিত ও ইংরেজদের নিয়ন্ত্রিত মস্তিস্ক মাথায় নিয়ে থাকা ব্যক্তিরাই এই দেশে সমাজ বহির্ভূত এই দিবস আমদানী করলো।
সমস্যার বাহ্যিক রুপ – ভালোবাসা দিবস নিয়ে কিছু কথা
বিগত বছরগুলোতে এই দিবসে এক শ্রেণীর কুলাঙ্গারদের প্ররোচনায় বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে স্বাভাবিক করে ফেলা হচ্ছে।
অনেকে অবৈধ সন্তান জন্ম দিয়ে সমাজ থেকে মুখ রক্ষার জন্য নিজের সন্তানকে ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছে।
কোথাও বা সেই নবজাতক কুকুরের খাবার হচ্ছে। কোথাও বা বস্তাবন্দী হয়ে সমাজকে ধিক্কার দিচ্ছে।
এমন জঘন্য কালচার এই দেশে প্রচলিত হওয়ার পেছনে শুধু এই শফিক রেহমানই দায়ী নয়, নাটক-সিনেমা, স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া ও বিজ্ঞাপন সেক্টরগুলো দায়ী।
তার থেকেও বড় দায়ী হলো সেই লোকেরা, যারা দেশ স্বাধীনের পর মুসলমানদের রাষ্ট্রে মুসলমানদের ধর্মকে গুরুত্ব না দিয়ে বিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষতা বেছে নিয়েছিল।
তারা ভেবেছিল, ধর্মের কারণে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে। অথচ এই লোকেরা না জানতো ইতিহাস, না জানতো ইসলামিক কালচার।
মুসলমানদের খেলাফতের ১২০০ বছরে কবে শুধুমাত্র ধর্মের কারণে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল? মুসলিম খেলাফতের অনেক সময় সময়েই দেখা গেছে, শাসক ভালো ছিল না।
কিন্তু এরপরও তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে কয়েকবার চিন্তা করতো। এখন তো এই ধর্ম নিরপেক্ষতা হলো, পশ্চিমাদের আরেকটি কূটচাল।
যেখানে ইউরোপীয়রা তাদের ধর্মের পবিত্র ব্যক্তিদের নিয়ে ছোট একটি এলাকা ভ্যাটিক্যান সিটিকে দেশ বানিয়ে সেটির সামনে মাথানত করলো, সেখানে আমরা আমাদের ধর্মীয় মহাপুরুষদের জেলে ঢুকিয়ে মিথ্যা মামলায় কারাবাস দিলাম!