মিথ্যা বলার শাস্তি – দরসে কুরআনে আজ আমাদের শায়েখ সূরা তূর নিয়ে আলোচনা করছিলেন। কুরআনী তাদাব্বুর তথা বুঝ না থাকার কারণে সারা জীবন এই সূরা কতবার পড়েছি, কিন্তু একবারও অর্থ বুঝি নি।
আজ বারবার দরসে বসে মনে হচ্ছিল, আল্লাহ এমন কথা বলেছেন অথচ আমি এই সম্পর্কে অজ্ঞ! এটা চিরসত্য যে, কুরআনী তাদাব্বুর একদিনে তৈরি হয় না।
আবার শুধুমাত্র বঙ্গানুবাদ দেখে তেলওয়াত করলেও তাদাব্বুর এতটা অর্জিত হয় না। মূল আরবি থেকে যখন অনুবাদ বুঝার শক্তি আসবে তখন কুরআনের এমন একটি যওক পাওয়া যায়, যা অন্য কোনো ক্ষেত্রে অর্জিত হয় না।
আমি সূরা তূরের শুরুর অংশের কিছু কথা সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করছি। আমার এটা আক্ষরিক কোনো অনুবাদ নয়। আবার কোনো তাফসীরও নয়।
একজন সতর্কতাকারী হিসেবে আল্লাহর বাণী সকলের নিকট পৌঁছে দেওয়াকে দায়িত্ব মনে করছি। আল্লাহ আমাকে ও আপনাকে এর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন।
সূরা তুরের আলোচনা
সূরা তুরের একেবারে শুরুতেই আল্লাহ বেশ কিছু জিনিষের কসম ব্যবহার করেছেন। কুরআনে আল্লাহ কসম ব্যবহার করেন এর গুরুত্ব বুঝানোর জন্য।
وَٱلطُّورِ (1) وَكِتَٰبٖ مَّسۡطُورٖ (2) فِي رَقّٖ مَّنشُورٖ (3) وَٱلۡبَيۡتِ ٱلۡمَعۡمُورِ (4) وَٱلسَّقۡفِ ٱلۡمَرۡفُوعِ (5) وَٱلۡبَحۡرِ ٱلۡمَسۡجُورِ (6)
সূরা তূর, আয়াত ১-৬
আল্লাহ এখানে তুর পাহাড় – যেখানে মুসা আ. এর উপর তাওরাত নাজিল হয়েছিল – উন্মুক্ত পৃষ্ঠায় লিখিত কিতাব তথা পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব, বাইতুল মামুর, সমুন্নত আকাশ, উত্তাল ও বিক্ষুব্ধ সমুদ্রের শপথ করেছেন। এই শপথ করার পর তিনি কি বলেছেন?
إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ لَوَٰقِعٞ (7) مَّا لَهُۥ مِن دَافِعٖ (8)
সূরা তুর, আয়াত ৭-৮
“নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালকের আযাব অবশ্যই ঘটবে। আর কেউ তা প্রতিরোধ করতে পারবে না।”
এই আয়াত দুটো আবার পড়ুন। অন্তরে কোনো ভাবান্তর হয়?
তাফসীরে ইবনে কাসীরে এই আয়াতের প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ আছে। হযরত উমর রা. তার খেলাফতকালে রাতে ছন্দবেশে বের হতেন।
তিনি মানুষের হাল-হাকিকত দেখতেন। একদিন এ অবস্থায় তিনি এই আয়াতসমূহ একজনকে পড়তে শুনতে পান।
এরপর থেকে হযরত উমর রা. টানা ১৮/২০ দিন অসুস্থ ছিলেন। এই ছিল দুনিয়ার অর্ধেক রাজত্বকারী এক মহান সাহাবীর ঘটনা। আর আমরা?
এখন আয়াত তেলওয়াত করি তো ঘন্টাখানেক পর সব ভুলে পাপকাজে লিপ্ত হই!
পরবর্তী দুই আয়াতে কেয়ামতের ভয়বহতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
وۡمَ تَمُورُ ٱلسَّمَآءُ مَوۡرٗا (9) وَتَسِيرُ ٱلۡجِبَالُ سَيۡرٗا (10)
সূরা তুর, আয়াত ৯-১০
“সেদিন আকাশসমূহ তীব্রভাবে প্রকম্পিত হবে। আর পাহাড়সমূহ উলট পালট হয়ে ধূলিকণার ন্যায় উড়তে থাকবে।”
পরের আয়াতগুলো আবার সতর্কবাতা। আল্লাহ এখানে দুই শ্রেণীর মানুষের ধ্বংসের কথা উল্লেখ করেছেন। বলা হচ্ছে,
فَوَيۡلٞ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُكَذِّبِينَ (11) ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي خَوۡضٖ يَلۡعَبُونَ (12)
সূরা তুর, আয়াত ১১-১২
“সেদিন মিথ্যাবাদীদের জন্য রয়েছে ধ্বংস। যারা অনর্থক কথাবার্তা ও খেল-তামাশায় লিপ্ত ছিল”
এখন যারা এই কাজে লিপ্ত তাদের অবস্থা কেমন হবে, সেই সম্পর্কে বলা হচ্ছে,
“তাদেরকে সেদিন তাড়িয়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। বলা হবে, এটাই সেই জাহান্নাম, যাকে তোমরা অস্বীকার করতে।”
মিথ্যা বলার শাস্তি ও আমাদের শিক্ষা
সূরা তুরের ১-১৪ নং আয়াতে আমাদের জন্য বেশ কিছু শিক্ষা রয়েছে। একত্রে যদি তা বর্ণনা করি তাহলে বলা যায়,
আল্লাহর কোনো নিদর্শন নিয়ে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা তো দূরের কথা, ব্যক্তিজীবনেও মিথ্যা কথা বলা থেকে বেঁচে থাকা।
আর অনর্থক কথাবার্তা ও খেল-তামাশায় লিপ্ত না হওয়া। কারো সম্পর্কে না জেনে ও না বুঝেই যা ইচ্ছা তা বলা থেকে বিরত থাকা।
অনলাইনে মন চাইলো কাউকে দুই কথা শুনালাম, এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা।
মনে রাখতে হবে। নিশ্চয় আল্লাহর আযাব অবশ্যই ঘটবে। যাকে প্রতিরোধ করার মতো দুনিয়ার কোনো শক্তি নেই।
এখানে পারমানবিক বোমা, আয়রন ডোম, মিসাইল কিছুই করতে পারবে না। আল্লাহর আযাব চিরসত্য।
লেখাটি শেয়ার করতে সর্ট লিংক কপি করুন