মাস্তুল যুদ্ধ ছিল হযরত উসমান রা. এর শাসনকালে সবচেয়ে বড় বিপজ্জনক যুদ্ধ। এটি ৩৪ হিজরীতে সংগঠিত হয়।

এই যুদ্ধে উভয়পক্ষের সৈন্যরা জাহাজের মাস্তুল বেঁধে যুদ্ধ করেছে বিধায় এটাকে জাতুস সাওয়ারা বা মাস্তুল যুদ্ধ বলা হয়।

রোম সম্রাট যখন দেখতে পায়, মুসলমানরা কনস্টান্টিনোপলের প্রাচীরের নিকট চলে আসছে এবং সমুদ্র যুদ্ধে কুবরুসবাসীর উপর বিজয়লাভ করেছে, তখন সে বিশাল এক নৌবাহিনী তৈরি করে।

এতে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ যুদ্ধ জাহাজ ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, রোমানরা এর পূর্বে কখনো এত বড় সৈন্যসমাবেশ ঘটায়নি।

সে এই অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তি নিয়ে রোম সাগরে অবতীর্ণ হয়। অপরদিকে এশিয়া মাইনরের পশ্চিম তীর দিয়ে স্থলভাগেও সৈন্য নিয়ে সম্রাট সামনে অগ্রসর হতে থাকে।

মুসলমানদের প্রস্তুতি

হযরত মুয়াবিয়া রা. এই সংবাদ পাওয়ার পর শাম থেকে নিজের নৌবাহিনী একত্রিত করেন এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু সারাহ রা. মিসর থেকে নিজের নৌবাহিনী একত্রিত করেন।

এই উভয় বাহিনী বাইজেন্টাইনদের ইসলামী ভূখন্ডে প্রবেশের পূর্বেই তাদের সামনে হাজির হন।

কুবরুস এবং রোডস দ্বীপের মাঝামাঝি অবস্থিত কিলিকিয়ায় এক রাতে উভয় বাহিনী মুখোমুখি হয়।

মুসলমানদের জাহাজ ছিল ২০০ টি। এই বাহিনী কয়েক বছর পূর্বে তৈরি করা ছিল। তার ফলে মুসলিম নাবিকদের নৌযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তেমন ছিল না।

অপরদিকে বাইজেন্টাইনরা ছিল অপ্রতিরোধ্য। তারা বহু বছর যাবৎ সমুদ্র যুদ্ধে প্রতাপ বিস্তার করে আসছে। তাদের বাহিনী ছিল মুসলমানদের তিন গুণ বড়।

সে সময় মুসলমানদের নৌযুদ্ধের কার্যক্রম ছিল এই যে, তারা জাহাজে করে কোথাও অবতরণ করতো এবং নিকটবর্তী কোনো ময়দানে লড়াই করতো।

কিন্তু এবার সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ হলো লড়াইক্ষেত্র। মুসলমানরা পূর্ণ হিম্মতের সাথে তাদের মোকাবেলায় অবতীর্ণ হন।

যুদ্ধের সূচনা

মুজাহিদদের আমির হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু সারাহ রা. জাহাজের মাস্তুলগুলো একটির সাথে অপরটি বেঁধে সারি বানানোর নির্দেশ দেন।

তিনি মুজাহিদদের সর্বদা তেলওয়াত ও যিকিরে মশগুল থাকার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। বাতাসের গতি তখন মুসলমানদের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে যাচ্ছিল।

ফলে রোমানরা সহজেই পাল তুলে মুসলমানদের দিকে অগ্রসর হতে পারছিল। পক্ষান্তরে মুসলমানরা অগ্রসর হতে চাইলে পাল তোলা অধিক ক্ষতিকর ছিল।

তাই কেবল বৈঠা দিয়ে সাধারণ গতিতেই জাহাজগুলো আগে বাড়ছিল। এটা দেখে মুসলিম সেনাপতি জাহাজ নোঙর করার নির্দেশ দেন।

হঠাৎ করেই আল্লাহর কুদরতে বাতাস মুসলমানদের অনুকূলে এসে যায়। ফলে মুসলমানদের হিম্মত ও সাহস বৃদ্ধি পেয়ে যায়।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু সারাহ্ রা. প্রতিপক্ষকে তীরে অবতরণ করে তরবারির মাধ্যমে হার-জিতের ফায়সালা করার প্রস্তাব রাখেন।

বাইজেন্টাইন কমান্ডার ভাবে, হয়তো মুসলমানরা সমুদ্রে যুদ্ধ করতে ভয় পাচ্ছে। তাই সে দম্ভভরে বলে, যুদ্ধ সমুদ্রে হবে, সমুদ্রে।

মাস্তুল যুদ্ধ

সমুদ্র যুদ্ধ

এই উত্তর শুনে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু সারাহ রা. নোঙর উঠিয়ে পাল তুলে দেয়ার নির্দেশ দেন।

মুসলমানদের যুদ্ধজাহাজগুলো রোমানদের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

এরপর উভয়বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ প্রতিপক্ষের জাহাজের সাথে মিলিয়ে নেয়। এর সাথে সাথে সেনারা তরবারি ও খঞ্জরের মাধ্যমে একে অপরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

হাজার হাজার মানুষের টুকরো সমুদ্রে পড়তে থাকে। সমুদ্রের পানি রক্তে লাল হয়ে যায়। হাজার হাজার মুসলমান শহীদ হন।

কিন্তু রোমানদের ক্ষয়-ক্ষতি মুসলমানদের থেকেও বেশি ছিল। এর মধ্যেই সমুদ্রে উত্তাল হয়ে উঠে। উভয়পক্ষের জাহাজ খরকুটোর ন্যায় দুলতে থাকে।

এর মধ্যে সম্রাট কনস্টান্টিন নিজেও আহত হন। তাই তিনি অবশিষ্ট সৈন্যদেরকে পশ্চাদপসরণের নির্দেশ দেন।

এভাবে আল্লাহ মুসলমানদেরকে একটি গৌরবময় বিজয় দান করেন। মুসলমানরা পার্শ্ববর্তী উপকূলে অবতরণ করেন।

তথ্যসুত্র

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৯২-২৯৫

আল কামিল ফিত তারিখ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৮৮-৪৮৯

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ২৩৭-২৩৯

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top