জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল – ইসলামিক চন্দ্র বছর অনযায়ী জিলহজ মাস হলো সর্বশেষ মাস। এই মাসকে হজের মাস বলেও অবহিত করা হয়।
তাই অন্যান্য মাসের তুলনায় এই মাসের আলাদা গুরুত্ব ও ফজিলতও রয়েছে। তাছাড়া এই মাসকে যুদ্ধ-বিদ্রোহ বন্ধ রাখার মাসও বলা হয়।
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এই মাসের নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের কসম করেছেন। তাই বুঝা যায়, এই মাসের গুরুত্ব কত বেশি!
পবিত্র কুরআনের সূরা ফাজরের ২ নং আয়াতে বলা হচ্ছে, দশ রাতের শপথ!
আল্লাহ এখানে দশ রাত দ্বারা কোন দশ রাত ইশারা করেছেন, তা ব্যাখ্যা করেছেন নবীজির পর সবচেয়ে বড় তাফসীর বিশারদ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.।
উক্ত সাহাবী বলেন, এখানে দশ রাত দ্বারা জিলহজের প্রথম দশককে ইশারা করা হয়েছে। এই কথাটি অন্যতম তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে ইবনে কাসীরে উল্লেখ রয়েছে।
এ ছাড়াও নবীজির আরো বিভিন্ন হাদীস বর্ণিত রয়েছে এই রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে। নবীজি বলেন, এই দশ দিনের ইবাদত অন্যান্য সময়ে করা সকল ইবাদত থেকে উত্তম।
তখন সাহাবারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা কি এই দশদিন থেকে উত্তম নয়? নবীজি বললেন, না। উত্তম নয়।
তবে উক্ত মুজাহিদের কথা ভিন্ন, যিনি আল্লাহর রাস্তায় নিজের জান-মাল বিলিয়ে দিয়েছেন।
এছাড়াও হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. হতে আরেকটি হাদীস বর্ণিত রয়েছে যে, নিশ্চয় দশ (আশারা) হচ্ছে কুরবানীর দশ দিন।
আর এখানে বেজোড় হচ্ছে আরাফার দিন। আর জোড় হচ্ছে কুরবানীর দিন।
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে গুরুত্বপূর্ণ দশটি আমলসমূহ
১. অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্বরণ করা
২. নেক আমল ও ভালো কাজের প্রতি যত্নবান হওয়া
৩. অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এই সময়ে পাপের পথ পরিহার করা
৪. সামর্থ্যবান হলে হজ করা
৫. কুরবানী করা
৬. কুরবানী করনেওয়ালা ব্যক্তির এই দশদিনে নখ, চুল, ও লোম কর্তন না করা
৭. অধিক পরিমাণে তাকবীর, তাহমীদ ও তাহলীল পাঠ করা
৮. আইয়ামে তাশরিক তথা আরাফার দিন ফজরের পর থেকে তেরো তারিখ আসর পর্যন্ত প্রতি নামাজের পর তাকবীর বলা
৯. প্রথম নয়দিন নফল রোজা রাখা
১০. ঈদের দিনের সুন্নতসমূহ পালন করা
আল্লাহ আমাদেরকে উক্ত কাজগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমীন
সহীহ মুসলিমের ৪৯৫৯নং হাদীসে রয়েছে,
وَحَدَّثَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاذٍ الْعَنْبَرِيُّ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرٍو اللَّيْثِيُّ، عَنْ عُمَرَ بْنِ مُسْلِمِ بْنِ عَمَّارِ بْنِ أُكَيْمَةَ اللَّيْثِيِّ، قَالَ سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ، يَقُولُ سَمِعْتُ أُمَّ سَلَمَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم تَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ مَنْ كَانَ لَهُ ذِبْحٌ يَذْبَحُهُ فَإِذَا أُهِلَّ هِلاَلُ ذِي الْحِجَّةِ فَلاَ يَأْخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ وَلاَ مِنْ أَظْفَارِهِ شَيْئًا حَتَّى يُضَحِّيَ ” .
উবায়দুল্লাহ ইবনু মূআয আম্বারী (রহঃ) … নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির নিকট কুরবানীর পশু আছে সে যেন যিলহাজ্জ এর নতুন চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।
সুনানে ইবনে মাজাহর ৭৫৮ নং হাদীসে রয়েছে,
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ نَافِعٍ الْبَصْرِيُّ، حَدَّثَنَا مَسْعُودُ بْنُ وَاصِلٍ، عَنْ نَهَّاسِ بْنِ قَهْمٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ مَا مِنْ أَيَّامٍ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ أَنْ يُتَعَبَّدَ لَهُ فِيهَا مِنْ عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ يَعْدِلُ صِيَامُ كُلِّ يَوْمٍ مِنْهَا بِصِيَامِ سَنَةٍ وَقِيَامُ كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْهَا بِقِيَامِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ ” . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ مَسْعُودِ بْنِ وَاصِلٍ عَنِ النَّهَّاسِ . قَالَ وَسَأَلْتُ مُحَمَّدًا عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ فَلَمْ يَعْرِفْهُ مِنْ غَيْرِ هَذَا الْوَجْهِ مِثْلَ هَذَا . وَقَالَ قَدْ رُوِيَ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مُرْسَلاً شَيْءٌ مِنْ هَذَا . وَقَدْ تَكَلَّمَ يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ فِي نَهَّاسِ بْنِ قَهْمٍ مِنْ قِبَلِ حِفْظِهِ .
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন কোন দিন নেই যে দিনগুলোর (নফল) ইবাদাত আল্লাহ্ তা’আলার নিকট যিলহাজ্জ মাসের দশ দিনের ইবাদাত হতে বেশী প্রিয়। এই দশ দিনের প্রতিটি রোযা এক বছরের রোযার সমকক্ষ এবং এর প্রতিটি রাতের ইবাদাত কাদরের রাতের ইবাদাতের সমকক্ষ।
হাদীসটি যঈফ, ইবনু মাজাহ (১৭২৮)
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি গারীব। শুধু উল্লেখিত সূত্রেই আমরা হাদীসটি জেনেছি। আমি মুহাম্মাদ আল-বুখারীকে এই হাদীস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনিও এই সূত্র ব্যতীত অনুরূপ কিছু বলতে পারেননি। তিনি বলেন, কাতাদা হতে সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রাহঃ)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে উল্লিখিত হাদীসের কিছু অংশ মুরসাল হিসেবে বর্ণিত আছে। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রাহঃ) নাহহাস ইবনু কাহম-এর স্মরণশক্তির সমালোচনা করেছেন।