কিসরার মুকুট – কাদিসিয়ার যুদ্ধের পর মুসলমানরা সামনে অগ্রসর হওয়া শুরু হলেন। উক্ত যুদ্ধে রুস্তমসহ আরো কয়েকজন সেনাপতি নিহত হয়।

তারপরও আরো অনেকে বেঁচে ছিলেন। তারা তখন বিভিন্ন দুর্গে অবস্থান করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সাদ রাঃ এই সংবাদ পেয়ে সামনে অগ্রসর হলেন।

এখানে একটি যুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পর দজলা নদীর পাড়ে চলে আসে মুসলমানরা। তখন সেনাপতি সাদ রাঃ সংবাদ পেলেন,

সম্রাট পালানোর চেষ্টা করছে। তাই তাড়াতাড়ি ওপারে না পৌঁছলে তাদেরকে ধরা যাবে না।

দজলার ঢেউয়ে মুসলিম বাহিনী

সাদ রাঃ তখন বললেন, এই নদী কখনো মুসলমানদের বাধা দিয়ে রাখতে পারে না। শত্রুরা পালানোর পূর্বেই তাদেরকে ধরে ফেলতে হবে।

এরপর হযরত হুজর বিন আদি রাঃ উচ্চ আওয়াজে বলেন, হে মুসলমানেরা! তোমাদের সামনে এই সামান্য পানির কি মূল্য আছে?

এই পানি চিঁড়ে তোমরা এগিয়ে যাও। আল্লাহ তাআলা তো বলেছেন, আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ নড়তে পারে না। সেজন্য তিনি সকলের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত করে দিয়েছেন।

এরপর হুজর রাঃ ঘোড়া নিয়ে নদীতে নেমে পড়েন। তার সাথে সাথে মুসলমানরাও নদীতে নেমে পড়ে।

পারসিকরা মুসলমানদেরকে নির্বিঘ্নে নদী পার হতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। তারা ভূত-প্রেতাত্মা ভেবে পালানো শুরু করে দেয়।

কিসরার মুকুট

কিসরার প্রাসাদ

ওপারে নামার পরই মুসলামানদের সামনে ছিল কিসারার প্রাসাদ। রাসূল সা. নিজেই এই প্রাসাদ জয়ের সু সংবাদ দিয়ে গিয়েছিলেন।

মুসলমানরা পারস্যের রাজদরবারে প্রবেশের পর শুকরিয়াস্বরুপ নামাজ আদায় করেন। রাজধানী মাদায়েন থেকে মুসলমানদের নিকট অঢেল ধন-সম্পদ আয়ত্বে আসে।

পড়ুন আবু মিহজান রাঃ এর সাহসিকতা

হযরত জাবের বিন সামুরা রাঃ বলেন, যখন শরিয়ত অনুযায়ী গনিমতের চার পঞ্চমাংশ মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন করা হচ্ছিল,

তখন প্রত্যেক ব্যক্তির ভাগে ৪০ থেকে ৪৫ লক্ষ টাকার সমপরিমাণ সম্পদ পড়ে। রাজপ্রাসাদে কিছু বস্তা দেখে মনে হয়েছিল,

এগুলো হয়তো শস্য বা খাদ্যের বস্তা। কিন্তু খুলে দেখা গেল, এগুলো স্বর্ণ-রৌপ্য দিয়ে ভর্তি।

কিসরার মুকুট ও নবীজির ভবিষ্যদ্বানী

গনিমতের বাকী সম্পদ মদীনায় পাঠানো হয়। তার মধ্যে কিসরার পোশাক ও মুকুটও ছিল। রাসূল সাঃ যেদিন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করছিলেন তখন সুরাকা বিন মালেক নবীজিকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য তার পিছু নিয়েছিল।

নবীজি তখন সুরাকাকে বললেন, হে সুরাকা! সেদিনটি কেমন হবে, যেদিন তোমাকে কিসরার পোশাক পরিধান করানো হবে।

সুরাকা সেদিন খানিকটা অবাক হয়েছিল। ওমর রাঃ এর নিকট এই পোশাক রাখার পর সেই ঘটনা তার মনে পড়ে যায়।

আরো পড়ুন ইয়ারমুকের দ্বিতীয় যুদ্ধ কিভাবে সংগঠিত হলো

তিনি তখন সুরাকাকে ডেকে আনেন। তিনি তখন একজন পরিপূর্ণ মুসলিম। এরপর সুরাকাকে পারস্যের সম্রাটের পোশাক ও মুকুট পরালেন।

মাত্র ১৫ বছর আগের করা ভবিষ্যদ্বানী আজ সকলের নিকট। ইসলামকে আল্লাহ এমনভাবে শক্তিশালী করেছেন যে, ইসলামের সৈনিকরা চাইলে পানির উপরেও ঘোড়া চালাতে পারে।

সুরাকা রাঃ কে ছিলেন

তিনি মদীনায় হিজরতের দিন নবীজিকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য বের হয়েছিলেন। সাওর পর্বতের নিকট নবীজিকে দেখে আটঁকাতে গেলে তার ঘোড়া মাটিতে পড়ে যায়। পরে নবীজি দোয়া করলে সেটি উঠে দাড়ায়। তখন নবীজি তাকে বলেছিলেন, হে সুরাকা! কতই না উত্তম হবে সেদিন, যেদিন তোমাকে কিসরার মুকুট পরানো হবে। এরপর ইনি মুসলমান হন। পারস্য বিজয়ের পর কিসরার মুকুট তাকে পরানো হয়

নদীর উপর ঘোড়া চললো কিভাবে

সাদ রাঃ কিসরার রাজপ্রাসাদ দখলের পূর্বে নদীর উপর দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে উক্ত প্রাসাদে পৌঁছেন। তখন তিনি একটি দোয়া পড়েছিলেন। অর্থ: আমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য চাই। তার উপর ভরসা রাখি। আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ঠ। তিনি সকলকে সাহায্য করেন।

About The Author

Scroll to Top