আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক হবে মুহাব্বাতের। মুহাব্বাত বা ভালোবাসা শুধু একতরফা নয়। এটি পরষ্পরের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা যারিয়াতের ৫৬ নং আয়াতে বলেন,
وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ
আমি জ্বীনজাতি ও মানবজাতিকে একমাত্র আমার ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছি।
আল্লাহ তো আপনাকে ইবাদাত করতে বলেছেন। কিন্তু আপনি ইবাদাত কিভাবে করবেন? নিজের মনমতো? না। তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।
আল্লাহ তা’আলা সূরা ইমরানের ৩১ নং আয়াতে বলেন,
قُلۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰهُ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
হে নবী! আপনি বলুন। ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
মুহাব্বাত কত প্রকার?
সাধারণত মুহাব্বাতকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। ১. কামনা-বাসনাপুর্ণ মোহাব্বাত ২. কামনা-বাসনা ব্যতিত মোহাব্বাত।
১. কামনা-বাসনা থাকাটা একজন মানুষের জন্য স্বাভাবিক। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে উপভোগের একটি মাধ্যম। তবে এখানে আল্লাহ সীমারেখা দিয়েছেন।
শুধুমাত্র কামনা-বাসনাপূর্ণ মোহাব্বাত থাকতে পারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে।
এই দুজন ব্যতিত অন্য কারো সাথে হলে ইসলামের বিধান অনুযায়ী হারাম হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
তখন তা পারষ্পরিক সম্মতিতে হলে ব্যাভিচার হিসেবে গণ্য হবে।
আর অসম্মতিতে হলে ধর্ষণ বলে গণ্য হবে। এই দুটিই মারাত্মক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মদ বা অ্যালকোহল হারাম হওয়া সম্পর্কে কুরআনের আয়াত কি কি, পড়ুন
২. কামনা-বাসনা ব্যতিত মোহাব্বাত হলো, যেমন আমরা শিক্ষককে শ্রদ্ধা করি। তাকে মোহাব্বাত করি। দ্বীনী ভাইদের মুহাব্বত করি।
এক মুসলমান কষ্ট পেলে আমরাও তার কষ্টে দুঃখ প্রকাশ করি। আমরা তাকে মোহাব্বাত করি বিধায় এসব করি। তেমনি আল্লাহর প্রতি বান্দার মোহাব্বাত থাকতে হবে।
আল্লাহ সূরা মায়েদার ৫৪ নং আয়াতে বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَنۡ یَّرۡتَدَّ مِنۡکُمۡ عَنۡ دِیۡنِهٖ فَسَوۡفَ یَاۡتِی اللّٰهُ بِقَوۡمٍ یُّحِبُّهُمۡ وَ یُحِبُّوۡنَهٗۤ ۙ اَذِلَّۃٍ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَعِزَّۃٍ عَلَی الۡکٰفِرِیۡنَ ۫ یُجَاهِدُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ لَا یَخَافُوۡنَ لَوۡمَۃَ لَآئِمٍ ؕ ذٰلِکَ فَضۡلُ اللّٰهِ یُؤۡتِیۡهِ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্য হতে কেউ তার দ্বীন হতে ফিরে গেলে অতিসত্বর আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসেন আর তারাও তাঁকে ভালবাসবে। তারা মু’মিনদের প্রতি কোমল আর কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে, কোন নিন্দুকের নিন্দাকে তারা ভয় করবে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। যাকে ইচ্ছে তিনি তা দান করেন এবং আল্লাহ প্রাচুর্যের অধিকারী, সর্বজ্ঞ।
আয়াতটিতে দেখুন, আল্লাহ বলেছেন তোমরা যদি আল্লাহকে অস্বীকার করে তার দ্বীন হতে বিচ্যুত হয়ে যাও তাহলে আল্লাহ এমন জাতি আনবেন, যারা আল্লাহকে ভালোবাসে। তদ্রুপ আল্লাহও তাদেরকে ভালোবাসেন।
আল্লাহর মোহাব্বাতের মতো আমাদের মধ্যে নবীজির মোহাব্বাতও থাকতে হবে। আল্লাহ সূরা আলে ইমরানের ৩১ নং আয়াতে বলেন,
قُلۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰهُ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
হে নবী! আপনি বলুন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে (মোহাববাতের সাথে) আমার অনুসরণ কর। আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
আল্লাহর সঙ্গে কিভাবে বান্দার মোহাব্বাত হবে?
আল্লাহর সাথে আমরা দুইভাবে মোহাব্বাতের সম্পর্কে গড়ে তুলতে পারি।
একটি হলো, ফরজ বিধান পালনের মাধ্যমে। অপরটি হলো, নফল বিধান পালনের মাধ্যমে।
১. একজন ব্যক্তি মুসলমান হওয়ার পর তার উপর সালাত আদায় করা (নামাজ পড়া), সওম রাখা (রোজা রাখা), যাকাত প্রদান করা ও হজ্জ্ব করা ফরজ হয়।
কয় দিনে আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং কেন? জানুন
এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নামাজ। নামাজ বা সালাতকে আল্লাহ প্রতিদিন ৫ বার মুসলমানদের উপর ফরজ করেছেন।
যেই ব্যক্তি ৫ ওয়াক্ত নামাজ সুন্দরভাবে আদায় করে,
নামাজের আগে উত্তমরূপে অজু করে তার সাথে আল্লাহর একটি মোহাব্বাতের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়।
সে তখন অনুভব করতে পারে যে, আল্লাহ তার আমল কবুল করছেন। আল্লাহ তার চাওয়া তাড়াতাড়ি পূরণ করছেন।
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, আল্লাহর থেকে দূরে চলে যাবেন। যেখানে আল্লাহ নেই সেখানে যাবেন।
আপনার জন্য আল্লাহ কুরআনের সূরা নিসার ১০৮ নং আয়াতে বলছেন,
یَّسۡتَخۡفُوۡنَ مِنَ النَّاسِ وَ لَا یَسۡتَخۡفُوۡنَ مِنَ اللّٰهِ وَ هُوَ مَعَهُمۡ اِذۡ یُبَیِّتُوۡنَ مَا لَا یَرۡضٰی مِنَ الۡقَوۡلِ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ بِمَا یَعۡمَلُوۡنَ مُحِیۡطًا
তারা মানুষ হতে গোপন করে থাকে। কিন্তু তারা আল্লাহ হতে গোপন করতে পারে না। কেননা যে সময়ে তারা রাত্রে এমন বিষয়ে পরামর্শ করে যা আল্লাহ পছন্দ করেন না, তখনও তিনি তাদের সঙ্গেই থাকেন। আল্লাহ তাদের সমুদয় কার্যকলাপ সম্পর্কে পূর্ণ অবগত।
২. আর নফল বিধানের মাধ্যমে মানে হলো, তাহাজ্জুত নামাজ পড়া। গভীর রাতে আল্লাহর নিকট চাওয়া।
অসহায়দের সাহায্য করা। ধৈর্য্যশীল হওয়া। মুত্তাকী হওয়া। পবিত্রতা অর্জনকারী ব্যক্তি হওয়া। এই কাজগুলো আল্লাহ তা’আলা পছন্দ করেন।
আল্লাহ সূরা বাকারার ১৫৩ নং আয়াতে বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَ الصَّلٰوۃِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ
হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।
আল্লাহ সূরা বাকারার ২২২ নং আয়াতে বলেন,
اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَ یُحِبُّ الۡمُتَطَهِّرِیۡنَ
নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে।
আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক লেখাটির সহায়ক আর্টিকেল পড়ুন