নিজের আত্মপরিচয় – ঈমান হলো মানব জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ঈমান ছাড়া মানুষ কখনো খাঁটি ব্যক্তি হতে পারে না। স্রষ্টার আনুগত্য ঈমান ব্যতিত কবুল করা সম্ভব নয়।
একজন ব্যক্তি একত্ববাদের প্রতি ঈমান আনার দ্বারা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে গৃহিত হয়।
আল্লাহ তখন তার নাম কাফেরের নাম থেকে কেঁটে মুসলিমদের নামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে দেন।
এই দুইটি খাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ আজীবন কাফের অবস্থায় থাকে, তাহলে সে যতই ভালো কাজ করুক সেটির কোনো ফলাফল নেই।
সে যদি পৃথিবী পরিমাণ সম্পদ দানও করে দেয়, তারপরও আল্লাহর নিকট তার দানের কোনো মূল্য নেই।
আর এর জন্য আল্লাহ তাকে জান্নাত দেয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধও নন।
কিন্তু কেউ যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে, সে যদি কৃপণও হয় তারপরও একটা সময় সে জান্নাতে যাবে।
ঈমানের ক্ষেত্রে কখনোই সমঝোতা চলে না। তাই কখনো এই কথা বলা উচিৎ নয় যে, সব ধর্মই সমান।
আল্লাহর নিকট সব ধর্ম কখনোই সমান নয়।
পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে আল্লাহ বলেছেন, اِنَّ الدِّیۡنَ عِنۡدَ اللّٰهِ الۡاِسۡلَامُ নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র ধর্ম। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯)
এছাড়াও অন্যত্র আল্লাহ আরো বলছেন, وَ مَنۡ یَّبۡتَغِ غَیۡرَ الۡاِسۡلَامِ دِیۡنًا فَلَنۡ یُّقۡبَلَ مِنۡهُ ۚ وَ هُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ আর যে কেহ ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম অন্বেষণ করে তা কখনই তার নিকট হতে গৃহীত হবেনা এবং পরলোকে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৮৫)
অতএব দ্বীন বা ধর্ম হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই ইসলাম গ্রহণ করতে হবে। ইসলাম ব্যতিত অন্য যত ধর্মই থাকুক,
তাতে যতই চটকদার কথাই থাকুক, তা ভ্রষ্টতা। তা অজ্ঞতা। তা পরিত্যাজ্য। তা অগ্রহণযোগ্য।
ঈমান আনার পর কি করা উচিৎ
একজন ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার পর অনেকগুলো দায়িত্ব তার উপর এক এক করে বর্তায়। এর মধ্যে ইসলামের পাঁচটি প্রধান রোকন বা স্তম্ভ রয়েছে।
তা যেহেতু সকলেই জানেন, তাই আমরা আনুষাঙ্গিক অন্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ।
পবিত্র কুরআনের সূরা হামীম সাজদা এর ৩৩ নং আয়াতে বলা হচ্ছে,
وَ مَنۡ اَحۡسَنُ قَوۡلًا مِّمَّنۡ دَعَاۤ اِلَی اللّٰهِ وَ عَمِلَ صَالِحًا وَّ قَالَ اِنَّنِیۡ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ
ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কথায় কে উত্তম যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎ কাজ করে এবং বলে, আমি তো আত্মসমর্পনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
এখানে বলা হচ্ছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে মানুষকে আহবান করে এবং নিজেও সৎকাজ করে আর সে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত, তাহলে তার থেকে কি কোনো উত্তম ব্যক্তি রয়েছে?
আল্লাহ তা’আলা সৎকাজের আদেশদাতা ব্যক্তিদেরকে উত্তম ব্যক্তি বা উত্তম জাতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সূরা আলে ইমরানের ১১০ নং আয়াতে বলা হচ্ছে,
کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ تَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ
তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত,যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে।
এই আয়াতে সর্বোত্তম উম্মতদের তিনটা গুণের কথা আল্লাহ উল্লেখ করেছেন।
১. ভাল কাজের আদেশ দেয়া। ২. মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা। ৩. আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা।
এখন যদি কোনো ক্ষেত্রে এমন হয়, ভালো কাজের আদেশ দেয়া হয়, মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। কিন্তু নিজে তা আমল করে না।
তাহলে এটিও এক ধরণের মূর্খতা এবং পথভ্রষ্টতা। এই কাজের সতর্কবাণী হিসেবে আল্লাহ সফ এর ২-৩ নং আয়াতে বলছেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لِمَ تَقُوۡلُوۡنَ مَا لَا تَفۡعَلُوۡنَ হে ঈমানদারগণ, তোমরা ঐ কথা কেন বল, যা তোমরা নিজেরা কর না?
کَبُرَ مَقۡتًا عِنۡدَ اللّٰهِ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا مَا لَا تَفۡعَلُوۡنَ আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ব্যাপার যে, তোমরা বলবে এমন কথা যা তোমরা কর না।
বিখ্যাত ইমাম হযরত হাসান বসরী রহ. হতে ধারাবাহিকভাবে মা’মার ও আব্দুর রাযযাক রহ. রেওয়াতে বর্ণিত আছে,
হযরত হাসান বসরী রহ. وَ مَنۡ اَحۡسَنُ قَوۡلًا مِّمَّنۡ دَعَاۤ اِلَی اللّٰهِ وَ عَمِلَ صَالِحًا وَّ قَالَ اِنَّنِیۡ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ আয়াতটি তেলওয়াত করার পর বলেন,
এই আয়াতে যাদের কথা বলা হয়েছে, তারাই হলো আল্লাহর প্রকৃত বন্ধু। তারাই আল্লাহর ওলী। তারাই হলো উত্তম ব্যক্তি।
পৃথিবীর সমস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এরাই হলো আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তি। কারণ, তারা নিজেরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করে এবং অন্যকে আহবান করে।
আর তারা উচ্চকণ্ঠে বলে থাকে, আমি একজন মুসলমান। এটিই আমার সর্বোত্তম পরিচয়।
এটিই আমার নিজের আত্মপরিচয় । এ ছাড়া দুনিয়ার তাবৎ পরিচয় গৌণ। অমলূক। অগ্রহণযোগ্য।