আল্লাহ কত দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন

আল্লাহ কত দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন – পৃথিবী সৃষ্টির শুরুর সময়টা কেমন ছিল, তা জানতে ইচ্ছে হয় আমাদের।

বিজ্ঞান আমাদের এই জানতে চাওয়ার কামনা পূরণ করতে বিভিন্ন থিউরি উল্লেখ করে থাকে।

একটা কথা চিরসত্য যে, বিজ্ঞান সদা পরিবর্তনশীল। তাই বিজ্ঞানের কোনো কথা কুরআনের বিপরীত হলে একজন মুসলিম কিংবা জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে কুরআনের কথাকেই মূল হিসেবে বিবেচনা করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনার দ্বারা আমরা আল্লাহর একটা সিফাত সম্পর্কে জানি। তা হলো, আল্লাহ যদি বলেন, হও তাহলে হয়ে যায়।

আল্লাহ তা’আলা সূরা বাকারার ১১৭ নং আয়াতে বলেন,

بَدِیۡعُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ اِذَا قَضٰۤی اَمۡرًا فَاِنَّمَا یَقُوۡلُ لَهٗ کُنۡ فَیَکُوۡنُ

“আল্লাহ আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা। আর যখন তিনি কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন কেবল বলেন ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়।”

উপরোক্ত আয়াতটিতে আল্লাহ একটা কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ করে দিয়েছেন যে, তিনিই শুধুমাত্র আসমান-যমীনের স্রষ্টা।

তিনি ব্যতিত আরো কোনো ইলাহ নেই। তিনি মানুষসহ প্রতিটি জীবকে প্রতিপালন করেন। তিনি সকলের আহারের ব্যবস্থা করেন।

পৃথিবী সৃষ্টি – আল্লাহ কত দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন

সূরা ফুরকানের ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَهُمَا فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۚۛ اَلرَّحۡمٰنُ فَسۡـَٔلۡ بِهٖ خَبِیۡرًا

“তিনি আসমান, যমীন ও উভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনি পরম করুণাময়। সুতরাং (যেই ব্যক্তি স্রষ্টা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখে, তাকে তুমি আল্লাহর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো।”

উপরোক্ত আয়াতের শুরুর দিকে আল্লাহ অনেকগুলো কথা বলেছেন। প্রথমত আল্লাহ বলছেন, তিনি আসমান-যমীন ও তার মধ্যবর্তী স্থানসমূহ ছয়দিনে শিক্ষা দিয়েছেন।

এখন কথা হলো, আল্লাহ তো মুহুর্তের মধ্যেই এসব সৃষ্টি করতে পারতেন। তাহলে তিনি এত সময় কেন খরচ করলেন?

এটা খুবই সুক্ষ্ম একটি নির্দেশনা। ধরে নেই, আপনার আজকে বাজারে একটা দোকানের ঘর বানাতে হবে। তখন আপনি কি করবেন?

উদাহরণস্বরুপ

আপনি প্রথমে ইট, বালু, সিমেন্ট ও অনান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আনবেন। তারপর কোনো কর্মঠ ব্যক্তিকে ঘরটি বানিয়ে দেয়ার জন্য নিয়োগ দিবেন।

তিনি একটা ইটের উপর একটা ইট সুন্দরভাবে বসিয়ে, সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে ঘরটি তৈরি করবেন। একটা সময় তা সুন্দর একটি ঘরে রূপান্তরিত হবে।

এই প্রক্রিয়াটা এতটা সুন্দরভাবে কিভাবে আঞ্জাম দেয়া হয়েছে, বলতে পারবেন?

ধারাবাহিকভাবে কাজ করার মাধ্যমে।

আল্লাহ তা’আলা মানুষকে ধারাবাহিকভাবে কাজ করা শিখিয়েছেন ছয়দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করে। এখন কথা হলো, এই ছয়দিন কি আমাদের পৃথিবীর ছয়দিনের মতো?

সময়ের ব্যাপ্তি ও আল্লাহর হিসাব

আল্লাহ তা’আলা সময়কে সৃষ্টি করেছেন ভিন্নভাবে। এই সময়ের প্রকৃত হিসাব শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলাই জানেন। আমরা তো শুধুমাত্র ঘড়ির হিসেবে সময়কে গণনা করি।

নিচে একটা সমীকরন দিচ্ছি,

  • পৃথিবীতে একদিন হয় ২৪ ঘন্টায়
  • মঙ্গলগ্রহে একদিন হয় ২৪ ঘন্টা ৩৯ মিনিটে।
  • বৃহষ্পতিগ্রহে একদিন হয় ৯ ঘন্টা ৫৬ মিনিটে।
  • শনিগ্রহে একদিন হয় ১০ ঘন্টা ৪৭ মিনিটে।
  • ইউরেনাসে একদিন হয় ১৭ ঘন্টা ১৪ মিনিটে।
  • নেপচুনে একদিন হয় ১৬ ঘন্টা ৬ মিনিটে।
  • শুক্রগ্রহে একদিন হয় ২৭৮৪ ঘন্টায়। অর্থাৎ ১১৬ দিন ১৮ ঘন্টায়।
  • বুধগ্রহে একদিন হয় ৪২০০ ঘন্টায়। অর্থাৎ ১৭৫ দিন ২৩ ঘন্টায়।

আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলোর দিকে খেয়াল করুন। প্রতিটি গ্রহের সময় আমাদের সময় অনুযায়ী আলাদা। কোনো জায়গায় কম। কোনো জায়গায় বেশি।

সেই মোতাবেক আল্লাহর একদিন হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী, এক হাজার দিন অর্থাৎ ২৪ হাজার ঘন্টার সমান।

সূরা আরাফের ৫৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۟ یُغۡشِی الَّیۡلَ النَّهَارَ یَطۡلُبُهٗ حَثِیۡثًا ۙ وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ وَ النُّجُوۡمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمۡرِهٖ ؕ اَلَا لَهُ الۡخَلۡقُ وَ الۡاَمۡرُ ؕ تَبٰرَکَ اللّٰهُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ

“নিশ্চয় তোমাদের রব আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন।

প্রত্যেকটি একে অপরকে দ্রুত অনুসরণ করে। আর (সৃষ্টি করেছেন) সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজী, যা তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব।”

হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী পৃথিবী সৃষ্টি – আল্লাহ কত দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন

হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রা. হতে বর্ণিত আছে,

كان الله ولم يكن قبله شيئ وكان عرشه على الماء على الماء وكتب فى الذكر كل شيئ ثم خلق السموات والأرض

অর্থ: আল্লাহ সর্বপ্রথম ছিলেন। তার আগে কিছুই ছিল না। তখন তার আরশ ছিল পানির উপরে। আর স্মারকলিপিতে সব কিছু লিপিবদ্ধ করেন। তারপর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেন।

আল্লাহ ব্যতিত কি কেউ আছেন? – আল্লাহ কত দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন

প্রশ্নটা আজকে নতুন নয়। বিভিন্ন সময় কাফের এবং নাস্তিকরা এমন প্রশ্ন করে বিভ্রান্ত করেছে। অথচ স্বয়ং আল্লাহ তা’আলাই এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।

সূরা আম্বিয়ার ২২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

لَوۡ کَانَ فِیۡهِمَاۤ اٰلِهَۃٌ اِلَّا اللّٰهُ لَفَسَدَتَا ۚ فَسُبۡحٰنَ اللّٰهِ رَبِّ الۡعَرۡشِ عَمَّا یَصِفُوۡنَ

“যদি আসমান ও যমীনে আল্লাহ ছাড়া বহু ইলাহ থাকত তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত, সুতরাং তারা যা বলে, আরশের রব আল্লাহ তা থেকে পবিত্র।”

তথ্যসুত্র

১. আল কুরআন

২. আল হাদীস

৩. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া। খন্ড ১। পৃষ্ঠা ৫০-৫২

আরো পড়ুন

নবুয়তের পূর্বে রাসূল সা. এর জীবন কেমন ছিল?

হাজরে আসওয়াদ স্থাপন করা হয় কিভাবে?

যাতুস সালাসিল যুদ্ধ

বাইতুল মামুর মসজিদ কি কা’বা ঘরের ঠিক উপরে অবস্থিত?

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top