মুসলমানদের আবিসিনিয়া হিজরতের কারণ

মুসলমানদের আবিসিনিয়া হিজরতের কারণ – কাফেররদের ধারাবাহিক জুলুম নির্যাতনের কারণে একসময় নবীজি সা. খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন।

মুসলমানদের জন্য মক্কার জমিন যেন সংকীর্ণ হয়ে আসছিল। নবী কারীম সা. তখন মজলুম মুসলমানদের জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয় খোঁজা জরুরি মনে করলেন।

কিছু সাহাবী অপারগ হয়ে নিজ থেকেই অন্য কোথাও হিজরতের অনুমতি প্রার্থনা করেন। কিন্তু তৎকালীন সময়ে অন্য কোথাও যাওয়াটাও সাধারণ বিষয় ছিল না।

মুসলমানদের আবিসিনিয়া হিজরতের কারণ ও হিজরত কোথায় করবেন?

মক্কার নিকটবর্তী সবচেয়ে বড় শহর হলো ইয়াসরিব। সেখানে ছিল আউস ও খাযরাজ গোত্র। মক্কায় যেমন কুরাইশদের প্রভাব ছিল,

তেমনি ইয়াসরিবে এই দুই গোত্রের প্রভাব ছিল। প্রত্যেক গোত্রই অন্য গোত্রের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চাইতো। কখনো কখনো এই নিয়ে যুদ্ধ বিগ্রহ হতো।

এমন খারাপ পরিস্থিতিতে সেখানে যাওয়াটা কোনো ফলদায়ক হবে না বলেই বিবেচিত হয়।

মক্কা থেকে দক্ষিণ দিকে ছিল, ইয়ামেন। সেখানে একটা সময় শাসন করেছিল সাবা সাম্রাজ্য। কিন্তু সেটা বিলুপ্ত হয়ে তখন তা পারস্যের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।

আর পারসিকদের অহংকারী, গোঁড়ামী ও উগ্রবাদী আচরণ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না।

পশ্চিমদিকে ছিল আফ্রিকা মহাদেশ। এখানের সবচেয়ে নিকটবর্তী রাষ্ট্র হলো হাবশা তথা আবিসিনিয়া । ভূমি এবং রাজনৈতিক দিক দিয়ে এই স্থান খানিকটা উপযুক্ত।

সেখানকার শাসন ব্যবস্থায় কোনো বাড়াবাড়ি নেই। সেখানকার রাজা ন্যায়-ইনসাফ পছন্দ করেন। তিনি কারো প্রতি জুলুম করেন না।

মুসলমানদের প্রথম আবিসিনিয়া হিজরত

উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর আলোকে নবীজি সা. সাহাবাদেরকে আবিসিনিয়া তথা হাবশায় হিজরতের পরামর্শ দেন।

তার নির্দেশনা অনুযায়ী নবুয়তের পঞ্চম বছর রজব মাসে কয়েকটি মুসলিম পরিবার গোপনে মক্কা থেকে হাবশায় হিজরতের প্রস্তুতি নেয়।

তারা ছিলেন মোট পনেরজন। তাদের মধ্যে ছিলেন এগারোজন পুরুষ ও চারজন নারী।

প্রথম আবিসিনিয়া হিজরতে যারা উপস্থিত ছিলেন

১. হযরত উসমান ইবনে আফফান রা.

২. হযরত উসমান রা. এর স্ত্রী হযরত রুকাইয়া রা. (নবীজির মেয়ে)

৩. হযরত আবু সালামা রা.

৪. হযরত আবু সালামা রা. এর স্ত্রী উম্মে সালামা রা.

৫. হযরত আমের বিন রাবিয়া রা.

৬. হযরত আমের রা. এর স্ত্রী লায়লা ইবনে আবু হাসমা রা.

৭. হযরত আবু হুজাইফা বিন উকবা রা.

৮. হযরত আবু হুজাইফা রা. এর স্ত্রী সাহলা বিনতে সুহাইল রা.

৯. হযরত জুবাইর ইবনে আওয়াম রা.

১০. হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা.

১১. হযরত উসমান বিন মাজউন রা.

১২. হযরত মুসআব বিন উমাইর রা.

১৩. হযরত আবু মাসিরা বিন আবি রুহম রা.

১৪. ‍সুহাইল বিন বায়যা রা.

১৫. আবু হাতিব বিন আমর রা.

আবিসিনিয়া তথা হাবশায় মুসলমানদের আশ্রয়

হিজরতকারী সাহাবীগণ মক্কা থেকে বের হওয়ার সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করে। তারা একত্রে মক্কা থেকে না বের হয়ে একজন একজন করে বের হয়।

একটা নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হয়ে তারা লোহিত সাগর অভিমুখে রওয়ানা হন। আল্লাহর তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন রেখেছিলেন।

লোহিত সাগরের পাড়ে তখন আবিসিনিয়া তথা হাবশাগামী দুইটি বাণিজ্যিক জাহাজ প্রস্তুত ছিল। মুসলমানরা উক্ত জাহাজের মাধ্যমে আবিসিনিয়া তথা হাবশায় পৌছে যায়।

কুরাইশদের নিকট সংবাদ

কুরাইশদের নিকট মুসলমানদের মক্কাত্যাগের সংবাদ একটু দেরিতে পৌঁছে। তারা তখন ঘোড়া ছুটিয়ে লোহিত সাগরের তীরে উপস্থিত হয়।

কিন্তু ততক্ষণে জাহাজগুলো ছেড়ে দিয়েছে। তাই তারা ব্যর্থ মনোরথে মক্কায় ফিরে আসে।

নবীজি সা. এর চিন্তা

হাবশায় মুসলমানরা অত্যন্ত সুখেই জীবন পার করতে লাগলেন। সমুদ্রের অপর পাড়ে তাদের হিজরত হওয়ায় নবীজির নিকট কোনো তথ্য ছিল না।

নবীজি সা. হিজরতকারী সাহাবী এবং নিজের মেয়ে ও জামাইকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তিনি মক্কা থেকে বের হয়ে হাবশা থেকে আগত মুসাফিরদের তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেন।

অবশেষে এক আফ্রিকা থেকে আগত মুসাফিরদের সাথে নবীজির সাক্ষাৎ হয়। তাদের মাধ্যমে তিনি হিজরতকারী মুসলমান ও নবীজির মেয়ের খবর পান।

নবীজি সা. তার মেয়ে ও জামাইয়ের জীবিত থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বললেন, আল্লাহ তাদের সঙ্গী হোন। নিশ্চয় উসমান লূত আ. এর পর পরিবার নিয়ে হিজরত করা প্রথম ব্যক্তি।

তথ্যসুত্র

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খন্ড ১। পৃষ্ঠা ৩২২-৩২৬

আরো পড়ুন

মুহাম্মাদ সা. কি আয়েশা রা. এর সাথে নয় বছর বয়সেই সহবাস করেন ? জানতে পড়ুন

কোনটি আগে সৃষ্টি করা হয়েছে ? আকাশ নাকি পৃথিবী ? জানতে পড়ুন

পিঁপড়া কি কথা বলতে পারে ? পড়ুন

সাময়িক সময়ের জন্য কাউকে বিয়ে করে ভোগ করা কি ইসলামে বৈধ ? পড়ুন

পড়তে পারেন এখান থেকে

আবু জেহেলের বিরুদ্ধাচরণ

এতিমের অধিকার কেমন হওয়া উচিৎ

প্রাথমিকযুগে কিভাবে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হতো

বীমা কাকে বলে?

সর্বপ্রথম কতজন সাহাবী হাবশায় হিজরত করেন

১৫ জন সাহাবী সর্বপ্রথম হাবশায় হিজরত করেন। তাদের মধ্যে ছিল ১১ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী।

কোন সাহাবীরা হাবশায় প্রথম হিজরত করেন

হযরত উসমান ইবনে আফফান রা., হযরত উসমান রা. এর স্ত্রী হযরত রুকাইয়া রা. (নবীজির মেয়ে), হযরত আবু সালামা রা., হযরত আবু সালামা রা. এর স্ত্রী উম্মে সালামা রা., হযরত আমের বিন রাবিয়া রা., হযরত আমের রা. এর স্ত্রী লায়লা ইবনে আবু হাসমা রা., হযরত আবু হুজাইফা বিন উকবা রা., হযরত আবু হুজাইফা রা. এর স্ত্রী সাহলা বিনতে সুহাইল রা., হযরত জুবাইর ইবনে আওয়াম রা., হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা., হযরত উসমান বিন মাজউন রা., হযরত মুসআব বিন উমাইর রা., হযরত আবু মাসিরা বিন আবি রুহম রা., সুহাইল বিন বায়যা রা., আবু হাতিব বিন আমর রা.

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top