জীবন বীমা কি – কোনো ব্যক্তির যদি এই আশংকা হয়, আমার সন্তানরা ছোট। আর আমারও জীবন হারানোর ভয় আছে, সেই ব্যক্তি বর্তমানে জীবন বীমা করে থাকে।

জীবন বীমা করার জন্য উক্ত ব্যক্তি বীমা কোম্পানীর নিকট প্রথমত আবেদন করে।

তারপর কোম্পানী একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে বীমাকারী ব্যক্তির বডি চেক আপ করায়।

এরপর ডাক্তার একটা রিপোর্ট লিখে, ‘আনুমানিক এই ব্যক্তি xyz বছর বাঁচবে’।

এরপর উক্ত ব্যক্তি কিস্তিতে বীমা কোম্পানীকে টাকা প্রদান করে থাকে। যদি এই ব্যক্তি xyz বছরের আগেই মৃত্যুবরণ করে,

তাহলে বীমা কোম্পানী সেই ব্যক্তির পরিবারকে উক্ত ব্যক্তির টাকাগুলো প্রদান করে থাকে।

আর যদি উক্ত ব্যক্তি xyz বছরের বেশি সময় বেঁচে থাকে, তাহলে সে বীমা কোম্পানীর থেকে কোনো টাকা ফেরৎ পায় না।

জীবন বীমার সুবিধা – জীবন বীমা কি

জীবন বীমার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অনাকাঙ্খিতভাবে মারা যাওয়ার পর তার পরিবার উক্ত বীমার টাকার মাধ্যমে নিজেরা সচল থাকতে পারে।

সন্তান যদি ছোট থাকে তাহলে বাবা-মা ব্যতিত তার ভালোভাবে বেড়ে উঠা কঠিন।

জীবন বীমা করা থাকলে তখন সে সমাজে খানিকটা ভালোভাবে চলতে পারে।

জীবন বীমার ক্ষতি – জীবন বীমা কি

বীমার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অসহায় অবস্থায় যেমন প্রতিষ্ঠিত করতে পারে তেমনি বীমার মাধ্যমে নিজের কষ্টে অর্জিত সম্পদ হারানোরও ঝুঁকি থাকে।

মানুষ হঠাৎই মৃত্যুবরণ করে না। মৃত্যু একমাত্র আল্লাহর হাতে। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দান করেন। তার আদেশেই মউত হয়।

কিন্তু জীবন বীমা তৈরির মাধ্যমে মানুষ একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ভুগতে থাকে। এমনকি সে তাকদীরকে অস্বীকার করে বসে।

আল্লাহ তা’আলা সূরা হজ্জের ৬৬ নং আয়াতে বলেছেন,

وَ هُوَ الَّذِیۡۤ اَحۡیَاکُمۡ ۫ ثُمَّ یُمِیۡتُکُمۡ ثُمَّ یُحۡیِیۡکُمۡ ؕ اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَکَفُوۡرٌ

‘আর তিনিই তোমাদের জীবন দিয়েছেন, অতঃপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু দেবেন, তারপর তিনিই তোমাদেরকে আবার জীবন দেবেন। নিশ্চয় মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ।’

যখন কারো মৃত্যু হবে, তখন দুনিয়াতে থাকা তার পরিবারের জিম্মাদারি আল্লাহর নিকট চলে যায়। আল্লাহ যে কোনোভাবে মানুষকে আহার করাবেন।

কাউকে আল্লাহ না খাইয়ে মারবেন না। আল্লাহ তা’আলা সূরা হুদের ৬ নং আয়াতে বলেন,

وَ مَا مِنۡ دَآبَّۃٍ فِی الۡاَرۡضِ اِلَّا عَلَی اللّٰهِ رِزۡقُهَا وَ یَعۡلَمُ مُسۡتَقَرَّهَا وَ مُسۡتَوۡدَعَهَا ؕ کُلٌّ فِیۡ کِتٰبٍ مُّبِیۡنٍ

“যমীনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর হাতে। তিনি জানেন তাদের দুনিয়াতে বসবাসের স্থান ও মৃত্যুর পর তাদের সমাধিস্থল কোথায় হবে। আর সব কিছু লিপিবদ্ধ রয়েছে সু-স্পষ্ট কিতাবের মধ্যে।”

সেই হিসেবে কখনো জীবন বীমা করা একজন মুসলমানের জন্য বৈধ নয়।

বীমার কুফল – জীবন বীমা কি

সুদের কারবারে লিপ্ত হওয়া:

সাধারণত ব্যবসায়ী বীমাসমূহে সুদের কারবার বেশি হয়ে থাকে। আর এই সুদের লেনদেন যতই লাভজনক হোক তা কখনো কারো সুফল বয়ে আনতে পারে না।

জুয়ায় লিপ্ত হওয়া:

জুয়া হলো এমন লেনদেন যাতে লাভবান হওয়া বা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া দুটোরই সম্ভাবনা থাকে। এখানের মূল থিমই হলো, এক পক্ষ লাভবান হবে আর অপরপক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

অর্থনৈতিক ক্ষতি:

যারা বীমা করে তারা অর্থনৈতিক দিক থেকে মারাত্মকভাবে শোষিত ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বীমা করে লাভবান হয় এ ধরণের লোকের সংখ্যা খুবই কম।

অধিকাংশ সময়ই দেখা যায়, যেই ক্ষতির আশঙ্কায় উক্ত ব্যক্তি বীমা করে থাকে তার ১০% ও কখনো সংগঠিত হয় না।

এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাধারণ ভোক্তারা। আর বীমা কোম্পানী পেশাদার ডাকাতি করে হাতিয়ে নেয় ভোক্তাদের কষ্টে উপার্জিত অর্থ।

বীমার নৈতিক ক্ষতি:

কখনো কখনো দেখা যায়, ভোক্তারা টাকা ফেরৎ পাওয়ার জন্য এমন এমন কাজ-কাজবার করে থাকে যা একজন সভ্য মানুষ করতে পারে না।

যেমন, ধরা যাক কেউ ফ্রিজের জন্য বীমা করলো। মেয়াদ ৫ বছর। আর সে বীমা বাবদ ৬০,০০০ টাকা বীমা কোম্পানীর নিকট রাখলো।

ভোক্তা ব্যক্তিটি উক্ত ফ্রিজ যেই ব্যান্ড থেকে কিনেছে তারা বলেছে, এই ফ্রিজ ১০ বছর অনায়েসে যাবে।

৫ বছর পর দেখা গেল এই ফ্রিজটি দিব্যি ভালো আছে। কোনো সমস্যা নেই। এটা দেখে ভোক্তা পড়লো বিপদে।

তার মাথায় তখন চিন্তা ডুকে গেল, যদি আমার এই ফ্রিজটি ৫ বছরের বেশি সময় যায় তাহলে তো আমার ৬০,০০০ টাকা লস। তাই সে নিজেই ফ্রিজটি নষ্ট করে ফেললো।

এর ফলে সে একটা ভালো পণ্যকে নিজেই নষ্ট করে ফেললো। এটা কখনো একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কাজ হতে পারে না।

আবার দেখা যায়, যারা জীবন বীমা করে থাকে, তারা সময় শেষ হওয়ার আগে পাগলামী শুরু করে। কারণ, সে লক্ষ লক্ষ টাকা বীমাতে দিয়ে রেখেছে।

তাই সে বাবাকে, মাকে, স্ত্রীকে, সন্তানকে হত্যা করে। ফলে সমাজে হত্যার মতো জগণ্য অপরাধ এই বীমার কারণে সংগঠিত হচ্ছে।

সুতরাং বীমা থেকে আমাদের দূরে থাকা নৈতিক ও আদর্শিক কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমীন।

তথ্যসুত্র

ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ন। পৃষ্ঠা ৪১৪-৪২০

আরো পড়ুন

শিয়া মতবাদ ও আকিদাগত বিচ্যুতি

মোবাইল কেন আপনার বন্ধু নয়?

আল্লাহ কতদিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন

রিজিক সম্পর্কে কুরআন কি বলে

Scroll to Top