ওয়ালিদ ইবনে উকবা এর বিরুদ্ধে অভিযোগ

হযরত ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. ছিলেন বনু উমাইয়া পরিবারের একজন বীর সন্তান। তিনি ছিলেন রাসূলের সাহচর্য পাওয়া একজন সাহাবী।

ওয়ালিদ রা. হযরত আবু বকর রা. ও উমর রা. এর গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসক ছিলেন। তাদের নিকট তিনি ছিলেন একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি।

১২ হিজরীতে পারস্য বিরোধী অভিযান পরিচালনাকালে খলিফা আবু বকর রা. ও সেনাপ্রধান খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. এর মধ্যে যুদ্ধ-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র আদান-প্রদানের দায়িত্বে ছিলেন ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা.।

এরপর আবু বকর রা. ওয়ালিদকে গভর্নর ইয়াজ ইবনে গানাম ফিহরি রা. এর সাহায্যে পাঠান। ১৩ হিজরীতে ওয়ালিদ রা. কে কুজাআ এলাকায় জাকাত আদায়ের জন্য কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

১৫ হিজরীতে উমর রা.  ওয়ালিদ ইবনে উকবাকে তাগলিব ও আল জাজিরার প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেন। এসব এলাকা খৃষ্টান অধ্যুষিত ছিল।

ওয়ালিদ রা. প্রজ্ঞার সাথে সেখানে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে খৃষ্টানদের ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসেন।

উসমান রা. এর খেলাফতকালে ওয়ালিদ রা.

হযরত উসমান রা. এর খেলাফতকালে ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. কুফা অঞ্চলের গভর্নর ছিলেন। তার শাসনামলে কুফা থেকে মুসলিম বাহিনী পূর্বাঞ্চলে বিজয়ধারা অব্যাহত রাখে।

বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম শাবি রহ. বলেন, তোমরা যদি ওয়ালিদ ইবনে উকবার জিহাদী কৃতিত্ব ও সমরকুশলতা দেখতে, তখন কী বলতে! তিনি জিহাদ করে বহু দূর এলাকা পর্যন্ত চলে যেতেন।

মানুষ ওয়ালিদ ইবনে উকবাকে অত্যন্ত ভালোবাসতো। কুফায় তিনি ৫ বছর গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উসমান রা. তার সম্পর্কে বলেন,

আমি ওয়ালিদকে এ জন্য গভর্নর বানাই নি যে, সে আমার ভাই। বরং তাকে এ জন্য বানিয়েছি যে,

সে হচ্ছে রাসূলের ফুফু উম্মে হাকিম বাইজা বিনতে আব্দুল মুত্তালিবের কন্যার পুত্র।

ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. এর বিরুদ্ধে মদপানের অভিযোগ

ইতিহাসবিদরা বর্ণনা করেন, ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. এর বিরুদ্ধে মদপানের ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায় না।

আল্লামা ইবনে হাজার রহ. বলেন, বলা হয়ে থাকে, কুফার কতিপয় অধিবাসী শত্রুতাবশত তার ব্যাপারে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়।

আল্লামা ইবনে খালদুন রহ. এদিকে ইঙ্গিত করে বলেন, উসমান রা. এর প্রসাশক ও গভর্নরদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছিল।

ইমাম তাবারী রহ. বিস্তারিত ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। তা হলো,

আবু জায়নাব ও আবু মুরি এবং জুনদুব ইবনে জুহাইরের ছেলেরা আলী ইবনে হায়সামানের ঘরের সিঁদ কেঁটে তাকে হত্যা করে।

ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. তখন তাদের উপর কিসাসের আইন বাস্তবায়ন করেন। সন্তানদের অন্ধ ভালোবাসায় উক্ত তিন ব্যক্তি ক্ষেপে যায়।

তখন তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। কঠিনভাবে তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। একবার তার ঘরে খৃষ্টান কবি আবু জুবাইদ আসে।

উক্ত কবির মদপানের অভ্যাস ছিল। ওয়ালিদ কিছু সময় আবু জুবাইদের সাথে থাকার কারণে কতক অজ্ঞ ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে মদপানের অভিযোগ তোলে।

আর এই ঘটনাটাই বড় করে উক্ত তিন ব্যক্তি উসমান রা. এর নিকট গিয়ে বলে, আমরা ওয়ালিদকে মদের বমি করতে দেখেছি।

ওয়ালিদ রা. এর উপর শাস্তি প্রয়োগ

শরীয়তের বিচার সংগঠিত হয় সাক্ষী প্রমাণের দ্বারা। যেহেতু লোকেরা ওয়ালিদ রা. এর ব্যাপারে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিল এবং কসম করেছিল, তাই শরয়ীভাবে তার উপর হদ কায়েম করা হয়।

আব্দুল্লাহ বিন আদি বিন খিয়ার রহ. বলেন, (উক্ত ঘটনার পর একদিন) যখন উসমান রা. নামাজের জন্য বের হলেন তখন আমি তার নিকট গেলাম।

আমি বললাম, আপনার কাছে আমার একটি প্রয়োজন ছিল, আর সেটি একটি কল্যানকর কথা। হযরত উসমান রা. বললেন, আরে ভাই! আমি তোমাদের থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

এরপর হযরত উসমান রা. নামাজে চলে গেলেন। নামাজের পর উসমান রা. নিজে বার্তাবাহক পাঠিয়ে আমাকে ডেকে নিলেন।

আমি উসমান রা. এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বললেন, তুমি যেই কল্যানকর কাজটির কথা বলেছিলে, সেটি কি? আমি তখন প্রথমে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করলাম। তারপর আরো কিছু কথা বলে এরপর বললাম, মানুষ ওয়ালিদ ইবনে উকবার বিষয়ে আপনার বিলম্বের কারণে নানারকম বাজে মন্তব্য করছে।

সুতরাং আপনার জন্য উত্তম হলো, অনতিবিলম্বে তার উপর হদ (দণ্ড) কায়েম করুন। উসমান রা. তখন বললেন, ভাতিজা! তুমি কি নবীজিকে দেখেছিলে?

আমি বললাম, না। তবে তার শিক্ষা আমার নিকট পৌছেছে।

এরপর উসমান রা. কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে বললেন, নবীজি যতদিন ছিলেন, ততদিন নবীজির আদেশ অমান্য করি নি এবং তার সাথে প্রতারণাও করি নি।

আবু বকর রা. যতদিন ছিলেন, ততদিন তার আদেশ অমান্য করি নি এবং তাকে ধোঁকা দেই নি।

উমর রা. যতদিন ছিলেন ততদিন তার আদেশ অমান্য করি নি।

এরপর আমাকে যখন তাদের স্থলাভিষিক্ত তথা খলিফা বানানো হলো তখন কি তোমাদের উপর আমার সেই হক নেই?

আমি বললাম, অবশ্যই আছে।

দণ্ড

এরপর উসমান রা. বললেন, তাহলে লোকদের পক্ষ থেকে আমাকে যা বলছো, তার কি কোনো বৈধতা আছে? ইনশাল্লাহ ওয়ালিদের ব্যাপারে আমি হকের উপর থাকবো।

এরপর হযরত উসমান রা. ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. এর ব্যাপারে দণ্ডবিধি আরোপ করে আলী রা. কে বললেন, তাকে চাবুক মারুন।

হযরত আলী রা. তার ছেলে হাসান রা. কে আদেশ করে বললেন, ওঠো, তাকে চাবুক মারো।

হাসান রা. বললেন, এ কাজের তাপ যেন সেই সহ্য করে, যে এর শীতলতা লাভ করেছে। অর্থাৎ তিনি কাজটি করতে চাচ্ছিলেন না।

এরপর আলী রা. আব্দুল্লাহ বিন জাফর রা. কে বললেন, ওঠো, তাকে চাবুক লাগাও। তখন তিনি তাকে চল্লিশ চাবুক লাগালেন।

এরপর আলী রা. বললেন, এবার থামো।

ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. এর পরবর্তী জীবন

এই মজলুম সাহাবী নিজেই দেখলেন, দুরাচাররা কিভাবে ভালো মানুষদের উপর যুলুম চাপিয়ে দিচ্ছে। আর এর কু-প্রভাব কিভাবে সমাজে ছড়িয়ে পড়ে!

হযরত উসমান রা. এর শাহাদাতের পর তিনি নিজেকে সব ধরনের সামাজিক কার্যক্রম থেকে দূরে সরিয়ে নেন। রাক্কা এলাকা থেকে ১৫ মাইল দূরে একটা জায়গায় বসবাস করতে থাকেন।

৬১ হিজরীতে তিনি ইন্তিকাল করেন। আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিন। আমীন।

তথ্যসুত্র

উসমান ইবনে আফফান রা., পৃষ্ঠা ৩৯৫-৪০২

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৫৫-১৬০

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top