আহলে হাদীস থেকে খৃষ্টান

আহলে হাদীস থেকে খৃষ্টান – শৈশব থেকেই একটি হাদীস শুনে বড় হয়েছি। তা হলো, মুসলমান মুসলমানের ভাই। একজন মুসলিম ভাই-বোন যখন বিপদে পড়ে তখন সকল মুসলমানই ব্যাথিত হয়।

তেমনি একজন মুসলমান যখন ভুল পথে পরিচালিত হয় তখন সমস্ত মুসলমানরাই যেন পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

কারণ, একজন মুসলমান ভুল পথে চলা মানে সে একা একাই ভুল পথে চলছে না। বরং আরো দশজন তার কাজ থেকে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে।

নবীজি সা. আমাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে এই দ্বীন এনেছেন। যেখানে আল্লাহ তাআলা শুরুতেই বলে দিয়েছেন,

ذٰلِکَ الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ فِیۡهِ ۚۛ هُدًی لِّلۡمُتَّقِیۡنَ

এই সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত।

সূরা বাকারা। আয়াত ২

কুরআনকে আল্লাহ তা’আলা আমাদের উপর নাজিল করেছেন, যেন আমরা সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারি। এরপরও আল্লাহ তা’আলা তার নবীর মাধ্যমে আরো বেশ কিছু বর্ণনা করেছেন। যা আমরা হাদীস হিসেবে জানি।

হাদীস কেন মান্য করবো

হাদীস হলো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই কাজ করেছেন বা কাউকে করতে বলেছেন অথবা কাউকে করতে দেখে নিষেধ করেন নি।

আর নবীজি সা. যেভাবে চলাফেরা করেছেন, তার সাহাবারাও তার দেখানো পথে পরিচালিত হয়েছেন।

আমরাও বর্তমানে হাদীসের উপর আমল করার চেষ্টা করি।

মাযহাব কেন মান্য করবো

নবীজি সা. আমাদের উপর যেই দ্বীন এনেছেন, এই দ্বীনের ফরজ বিধানগুলো বাদে অনান্য বিধানগুলো কখনো কখনো তিনি কয়েকভাবে করেছেন বা করতে বলেছেন।

যেই সাহাবীর নিকট যেটি ভালো লেগেছে, তিনি সেভাবেই আমল করেছেন।

এ জন্য আমরা নববী যুগ ও নবীর পরবর্তী যুগে দেখতে পাই,

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস একরকমভাবে দ্বীনের বিষয়গুলোতে আমল করতেন। আলী রা. আরেক রকম ভাবে আমল করতেন।

হযরত উসমান রাঃ এর শহীদ হওয়ার পর আমরা সাহাবাদেরকে দেখতে পাই, তারা হত্যার বিচার কখন করা হবে, সেটি নিয়ে ইখতিলাফ করেছিলেন।

কিন্তু এর মানে এই নয় যে, মাযহাব মানেই নতুন কোনো দল বা নতুন কোনো বেদআত। বরং মাযহাব মানে হলো,

দ্বীনের বুনিয়াদী বিষয়গুলো যামানা ও পরিবেশ অনুযায়ী মানুষের জন্য যেই বিধানটি সহজ হয়, সেটি বাস্তবায়িত করা।

আপনি কখনো মাজহাবে ফরজ বিধান নিয়ে ইখতিলাফ দেখবেন না।

মাযহাব কখনো নামাজ কয় রাকাত, এটি নিয়ে ইখতিলাফ করবে না। কারণ, নামাজের রাকাতসমূহ হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত।

আর মাজহাবের মুল বুনিয়াদ বা উৎস হলো, কুরআন ও হাদীস এবং সাহাবাদের ইজমা বা একাত্মতাপোষণ।

মাজহাব মান্য না করা

আমাদের দেশের অনেক ভাই এবং আলেম মাযহাব মানেন না। এটি আমাদের দেশে শুধু নয়, আরববিশ্বে প্রচুর পরিমাণে হয়।

মাজহাব না মানার দ্বারা কোনো ব্যক্তি দ্বীন থেকে মাহরুম বা খারিজ হয়ে যায় না। কিন্তু একটা সমস্যা এখানে দেখা দেয়।

আমাদের দেশের অনেকেই একটা ভুল ধারণায় থাকেন যে,

কুরআন-হাদীস কোনো আলেমের পরামর্শ ব্যতিত নিজে নিজে পড়ে পূর্ণ জ্ঞান হাসিল করা যাবে।

পড়ুন: কেন আল্লাহ তা’আলা ধাপে ধাপে মদপান হারাম করেছেন?

আসলে এটি কোনো দুনিয়াবী বা আখিরাতি শিক্ষার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।

আপনি একজন প্রকৌশলী হতে হলে আপনাকে কোনো প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করতে হবে।

আপনি কোনো চিকিৎসক বা বিজ্ঞানী হতে হলে আপনাকে কোনো অভিজ্ঞ চিকিৎসক বা বিজ্ঞানীর নিকট পড়তে হবে। তার তত্ত্বাবধানে কাজ করতে হবে। কাজ শিখতে হবে।

তেমনি আপনি আলেম হতে হলে বা কুরআন হাদীস বুঝতে হলে আপনাকে কোনো অভিজ্ঞ আলেম অথবা কোনো ফকীহের নিকট হতে উক্ত জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

আলেমদের মধ্য থেকে যারা মাজহাব ফলো করেন না বা মান্য করেন না,

তারা হয়তো কোনো রিসার্চ বা ইসলামী শরীয়াহর কোনো দলীলের ভিত্তিতে ফলো করেন না।

কিন্তু একজন আলেম না হয়ে, শরীয়তের পূর্ণ জ্ঞান হাসিল না করে যদি আপনি মাজহাব ফলো না করে শুধুমাত্র কুরআন বা হাদীসের উপর নির্ভরশীল হন, তাহলে আপনার ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত ঘটতে পারে।

একটি মাজহাব কখনো একক ব্যক্তির সিদ্ধান্তের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় না বা পরিচালিত থাকে না।

একটি মাজহাবের পেছনে বহু আলেম ও মুজতাহিদ-ফকীহ শ্রম ব্যয় করেন।

তারা কুরআন-হাদীস গবেষণা করেই কেবল মাজহাবে হালাল-হারাম নির্ণয় করে থাকেন।

আহলে হাদীস থেকে খৃষ্টান

আজ একটি খবর দেখে খুবই মর্মাহত হয়েছি। প্রথমত খবরটি চোখে পড়ে আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ কামরুল হাসান নকীব হুজুরের ফেইসবুক পোষ্ট থেকে।

এরপর এই সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছি। ছেলেটি হয়তো মাদ্রাসায় পড়েছে কিংবা জেনারেল লাইনে পড়েছে।

সে হয়তো কারো কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে মাজহাব থেকে সরে গিয়ে আহলে হাদীসের অনুসারী হয়েছে।

এ পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু এরপরের কাজগুলো হতাশাজনক।

সে দ্বীনের অনেক বিষয়গুলো ভালোভাবে না বুঝার কারণে কখনো কখনো সংশয়ে পড়ে যেত।

কিন্তু এরপরও কোনো অভিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ বা বক্তব্য গ্রহণ করতো না।

হতে পারে, তার মধ্যে সুপ্ত আলেম বিদ্ধেষ ছিল। এটি আমার অনুমান।

একটা পর্যায়ে সে খৃষ্টান মিশনারীর পাল্লায় পড়ে নিজের ঈমান হারিয়ে খৃষ্টান হয়ে গেছে।

এটি যে আমাদের জন্য কতটা হতাশাজনক, তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়।

আহলে হাদীস থেকে খৃষ্টান

একজনের পোস্ট

ফেইসবুকে তানভীর আহমাদ শরীফ নামে এক ভাই তিনি উক্ত ছেলেটির পরিচিত ছিলেন। তাই ছেলেটি খৃষ্টান হওয়ার পর তানভীর ভাই লিখেছেন,

আমার প্রিয় আহলে হাদিস দাঈ থেকে খ্রিস্টান হয়ে যাওয়া দ্বীনি ভাই। এই ছেলেটাকে অনেক ভালোবাসতাম। আহলে হাদিস দাওয়াতের প্রচুর কাজ করেছে, আলহামদুলিল্লাহ। বহুবার তাকে বলেছি কুরআন হাদিস নিজের মত বোঝার বিষয় না, আলেমদের কাছ থেকেই শিখতে হবে। তাকে কখনোই আমার কোন পরামর্শ মানাতে পারিনি, সে সব সময় নিজের মতোই বুঝেছে। তার কুরআন হাদিস বুঝের অনেক ভুল পেয়েছিলাম কিন্তু তাকে আলোচনা করতে বল্লে সে কখনোই আলোচনায় রাজি হয়নি। এক সময় খ্রিস্টান মিশনারীদের বিপক্ষে লিখতো এখন সে নিজেই খ্রিস্টান মিশনারী। তাকে মেসেজ দিয়েছিলাম তুমি নিজে কল দিয়ে তোমার মুখে না শোনা পর্যন্ত বিশ্বাস করবো না, তারপর সে ভয়েস মেসেজ রেকর্ড করে পাঠায়! বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিলো! আল্লাহ এর কাছে হিদায়ত এর জন্য দোয়া করি।

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top