আন্দালুস স্বর্ণযুগ ও পতন – খেলাফতে রাশেদার পরে উমাইয়া খেলাফত ছিল ইসলাম বিজয়ের স্বর্ণযুগ।

দিকে দিকে ইসলামের শাশ্বত বাণী ছড়িয়ে পড়েছিল উমাইয়াদের মাধ্যমে।

সময়টা ছিল ৯২ হিজরী এবং তখন খলিফা ছিলেন উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক রহ.। তিনি ৮৬ থেকে ৯৬ হিজরী পর্যন্ত (৭০৫-৭১৫ খৃস্টাব্দ) শাসনক্ষমতায় ছিলেন।

উমাইয়া শাসকবৃন্দ একইসঙ্গে আরবের চতুর্দিকে ইসলামের বিজয়াভিযান অব্যাহত রেখেছিলেন। পশ্চিমে তাদের অভিযান স্পেন তথা আন্দালুস পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল।

পূর্বে মুহাম্মাদ বিন কাসিম রহ. এর নেতৃত্বে ভারতবর্ষের সিন্ধু ও আশপাশের অঞ্চল, কুতাইবা বিন মুসলিম রহ. এর মাধ্যমে বিজিত হয়েছিল মধ্য এশিয়ার ট্রান্স অক্সিয়ানা অঞ্চল;

তার বিজয়াভিযান চীন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল আর মাসলামা বিন আব্দুল মালেক রহ. এর হাতে বিজিত হয়েছিল উত্তরের বিস্তীর্ণ ককেশীয় অঞ্চল বা রাশিয়ান ভূমি।

আন্দালুস বা স্পেন জয়ের পরিকল্পনা হয় খলিফা উসমান রা. এর সময় থেকেই।

কিন্তু পরবর্তীতে আফ্রিকার শাসক মুসা বিন নুসাইর তা বাস্তবায়িত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।

তিনি বিখ্যাত বারবারিয়ান সেনাপতি তারেক বিন যিয়াদ রহ. এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীকে স্পেন ভূমিতে পাঠান।

যারা তৎকালীন শাসক রডারিকের সাথে বারবাত প্রান্তরে লড়াই করে বিজয় অর্জন করেন। সময়টা ছিল ৯২ হিজরীর ২৮ রমজান মোতাবেক ৭১১ খৃস্টাব্দের ১৯ জুন।

এরপর মুসলিম এই সেনাপতি আরো বেশ কিছু অঞ্চলে তার বিজয়াভিযান পরিচালনা করেন।

সেই সময় মুসলিম আন্দালুসের সীমানা ছিল বর্তমান স্পেন ও পর্তুগাল অঞ্চলসহ।

এই লেখায় যা যা থাকছে :

পতনের মুখে আন্দালুস

৫৫০ হিজরী থেকে পরবর্তী সময়গুলোকে আন্দালুসের পতনের রোডম্যাপ হিসেবে বলা যায়।

এর কারণগুলো ছিল মুসলিম আন্দালুসের কেন্দ্রীয় শাসন থেকে বিভক্তি, নিজেরা স্বায়ত্বশাসন নিয়ে বড় একটা রাষ্ট্রকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারে ভাগ করে ফেলা।

এরইমধ্যে আফ্রিকান মুরাবিতী সাম্রাজ্যের শাসক ইউসুফ বিন তাশফিন রহ. এর নেতৃত্বে পতন হওয়া আন্দালুসের বেশ কিছু অঞ্চল জয়ী হয়।

কিন্তু বিজয় অর্জনের পর সেখানকার স্থানীয় নেতাদের হঠকারিতা আবার মুসলমানদের শাসনকে দুর্বল করে দিতে থাকে।

খৃষ্টানরা সে সময় বিভিন্ন মুসলিম অঞ্চল দখল করতে থাকে।

৬৪৩ হিজরীতে খৃষ্টানদের মাধ্যমে জাইয়ানের পতন হয় এবং খৃষ্টান রাষ্ট্র ক্যাস্টোলা এবং মুসলিম প্রদেশ গ্রানাডার অধিকার ও দায়িত্ব সংরক্ষণের জন্য ক্যাস্টোলা নৃপতি তৃতীয় ফার্ডিনান্ড গ্রানাডার শাসক ইবনুল আহমারের সাথে চুক্তি করে।

আন্দালুস! স্বর্ণযুগ ও পতন
আন্দালুস স্বর্ণযুগ ও পতন

এই চুক্তিগুলোর মাধ্যমে মুসলিম প্রদেশ খৃষ্টানদের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়।

ক্যাস্টোলার শাসক মুসলমানদের কলহের সুযোগ নিয়ে আরেকটি প্রদেশ সেভিল দখল করে নেয়।

যখন ইবনুল আহমার বুঝলো যে, তাকে ধোঁকা দেয়া হয়েছে তখন সে খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য তৈরি হলো।

এটা বুঝে ৬৬০ হিজরীতে খৃষ্টানরাই গ্রানাডাতে হামলা করে।

দখল

এই যুদ্ধে ইবনুল আহমার আফ্রিকান বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় মুওয়াহহিদী সাম্রাজ্যের পতনের পর প্রথমবারের মতো  খৃষ্টানদের পরাজিত করতে সক্ষম হন।

কিন্তু ৬৬২ হিজরীতে বনু মারিনের একটি বাহিনী আফ্রিকা থেকে এসে গ্রানাডা দখল করে নেয়।

এই সময় খৃষ্টানরা পূনরায় গ্রানাডার বিভিন্ন ঘাঁটিতে আক্রমণ করতে লাগলো।

পরিশেষে ৬৬২ হিজরীর শেষের দিকে গ্রানাডা শহরের কর্তৃত্ব খৃষ্টানদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হলেন।

খৃষ্টনরা সেখান থেকে মুসলিম নাগরিকদের উচ্ছেদ করলো এবং হত্যা ও বন্দী করলো।

সেসময় স্পেনে ছোট ছোট অনেকগুলো খৃষ্টান রাজ্য ছিল।

৮৭৯ হিজরী মোতাবেক ১৪৭৪ খৃষ্টাব্দে যখন ক্যাস্টোলা শাসক চতুর্থ হেনরি মারা যায় তখন থেকেই সকল রাষ্ট্র এক সুঁতোয় গাঁথা শুরু হয়।

গ্রানাডার পতন যদিও পূর্বেই হয় কিন্তু তখনো তাতে মুসলিম পুতুল শাসক ছিল।

পরবর্তীতে যখন পঞ্চম ফার্ডিনাল্ড এবং ইসাবেলার বিয়ে হয় তখন তারা তা পুরোপুরি দখল করে নেয়।

গ্রানাডার শাসক আবু আব্দুল্লাহ তখন তাদের হাতে গ্রানাডা তুলে দেন।

তখন খৃষ্টান সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী দাম্ভিকতার সাথে আল হামারা প্রাসাদে প্রবেশ করে তাতে বড় একটি ক্রুশ স্থাপন করেন।

এরপর ঘোষণা দেয়া হয়, আজ থেকে আন্দালুসে চূড়ান্তরূপে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটলো।

এই ঘটনার ৯ বছর পর ১৫০১ খৃষ্টাব্দে খৃষ্টান সম্রাট ঘোষণা করলো, সমগ্র স্পেন থেকে মুসলমানদের নিষিদ্ধ হলো। এরপর তারা মুসলমানদের হত্যা করে।

তথ্যসুত্র

আন্দালুসের ইতিহাস,খন্ড ১-২, মাকতাবাতুল হাসান, (সংক্ষিপ্ত ও পরিমার্জিত)

Abdur Rahman Al Hasan
Scroll to Top